করোনা মহামারীতে দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার পর খুলেছে হয়েছে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। কিন্তু খোলার পরপরই ছাত্রলীগের দু’পক্ষের মারামারিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য আবার বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। শিক্ষার্থীদের জরুরীভিত্তিতে আবাসিক হল ত্যাগ করতে বলা হয়েছে। এর ফলে স্বভাবতই বিপাকে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীরা পড়েছে মহাবিপদে।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার রাতে চমেকের প্রধান ছাত্রাবাসে সরকারে ক্ষমতাসীন দলের শিক্ষা উপমন্ত্রীর পক্ষের সমর্থক মেধাবী ছাত্র মাহাদী আকিব মাথায় মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত হন প্রতিপক্ষ চট্টগ্রামের সাবেক মেয়রের অনুসারীদের হাতে। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে মাথায় জরুরী অস্ত্রোপচারের পর মাহাদীর অবস্থা এখন উন্নতির দিকে। হামলা ও মারামারির ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলাও হয়েছে। গ্রেফতারের খবরও আছে। ঘটনার দায় বা দোষ যে পক্ষেরই হোক না কেন মোদ্দা কথা হলো, করোনা অতিমারীতে দীর্ঘ প্রায় দু’বছর দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর সম্প্রতি খুললেও ক্যাম্পাসে আবারও সংঘাত সংঘর্ষ ও মারামারির ঘটনা অবশ্যই অপ্রত্যাশিত ও অনভিপ্রেত। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে মেধাবীদের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় পড়ালেখা এমনিতেই ব্যাহত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরপরও যদি নিজেরাই দ্বদ্ব সংঘাত মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে বাধ্য করে কর্তৃপক্ষকে, তা হলে দেশ ও জাতির ভবিষ্যত কি- সে প্রশ্নটি অনিবার্য ভাবিয়ে তুলেছে অভিভাবক ও শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের।
উল্লেখ্য, দু’বছর আগে নিছক ‘শিবির’ সন্দেহে বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যার ঘটনাটি ছিল ভয়াবহ ও মর্মান্তিক। এই ঘটনাটি রীতিমতো নাড়া দিয়েছে সমগ্র দেশ ও জাতিকে। স্তম্ভিত ও বাকরুদ্ধ করেছে আমাদেরও। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সুখ্যাত ও মানসম্মত একটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ রকম একটি পরিকল্পিত হত্যাকা- সংঘটিত হতে পারে, ভাবতেও শিউরে উঠতে হয়। তদুপরি আবরারের হত্যাকারী আর কেউ নয়, বহিরাগত তো নয়ই, বরং তারই সহপাঠী, সতীর্থ, বন্ধু এমনকি রুমমেট। যেমনটি হয়েছে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে। আবরারের হত্যাকারীরাও ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় সুস্পষ্টভাবে চিহ্নিত হয়েছে বুয়েটের শিক্ষার্থী হিসেবেই, তদুপরি ছাত্রলীগের নামধারী, বিভিন্ন পদে অধিষ্ঠিত নেতা ও কর্মী। দুঃখজনক হলো- ঢাবি, চবি, বুয়েটসহ বিভিন্ন ক্যাম্পাসে অতীতে একাধিক ছাত্র হত্যা সংঘটিত হলেও কোনটিরই বিচার হয়নি। তবে আশার কথা এই যে, আবরার হত্যাকা-ের শুনানি চলছে বর্তমানে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে হলে শিক্ষা-বিরুদ্ধ এমন সব কর্মকা- অবিলম্বে বন্ধ করা আবশ্যক। কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থীর আদর্শগত রাজনীতি বাদ দিয়ে চাঁদাবাজি- টেন্ডারবাজিও কাম্য নয়। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ বের করে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ গড়ে তোলাই এখন প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত। দেশের ভবিষ্যত যারা, সেই শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হয় এমন সংঘাতমুখর পরিবেশ-পরিস্থিতি সব সময় পরিত্যাজ্য হওয়া জরুরী। কাজেই সরকারকে শিক্ষাঙ্গনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।