মানুষ খাওয়ার জন্য বাঁচে না, বাঁচার জন্য খাদ্য গ্রহণ করে। বেঁচে থাকার এই অনিবার্য খাদ্য হওয়া চাই নিরাপদ ও নির্ভেজাল। গুহাবাসী মানুষ খাদ্য উৎপাদনের বিধি ব্যবস্থা সম্পর্কে ছিল অজ্ঞ। ফলে প্রকৃতির অবারিত সম্ভারে যা পেত, তাই ছিল জীবন ধারণের অনন্য শক্তি।
সভ্যতার সূচনাকাল থেকে কৃষি ব্যবস্থাপনার নতুন যুগে মানুষ খাদ্য উৎপাদনে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে থাকে। তেমন প্রক্রিয়ার ইতিহাসের ক্রমবিবর্তনের ধারায় আধুনিক শিল্পোন্নত যুগের উদ্ভাবনাও মানুষের প্রাত্যহিক নিয়মবিধিতে অনেক নতুন উপাদান সংযোজন করে। সে মাত্রায় খাদ্যপণ্যও কোনভাবেই পিছিয়ে ছিল না। যান্ত্রিক সভ্যতার নবযুগ মানুষকে অনেক কিছু উপহার দিলেও এর বিপরীত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় সর্বনাশের বীজ বুনতেও সময় লাগেনি। সঙ্গত কারণেই খাদ্য ও প্রকৃতির আকৃত্রিম দানের ওপর আর নির্ভরশীল থাকতে পারেনি।
মানুষের গ্রহণযোগ্য সিংহভাগ খাদ্য মূলত পচনশীল। উৎপাদনের অব্যাহত গতিতে পণ্যের অবারিত সম্ভার সংরক্ষণ করাও বিবেচনায় চলে আসে। হিমাগারে খাদ্য সুরক্ষার বিষয়টি সময়ের অনিবার্য দাবি। এ কথা সকলেরই জানা ফরমালিন মেশানো খাদ্যপণ্য সহজে নষ্ট হয় না। সেটা মাছ থেকে আরম্ভ করে কৃষিজাত শাক-সবজি, ফলমূল সব ক্ষেত্রেই প্রয়োগ করাও একপ্রকার প্রচলিত রীতি হয়ে দাঁড়ায়। এমন সব বিপত্তি থেকে খাদ্যে নিরাপত্তার বিষয়টিও সম্পৃক্ত হয়ে আছে। আমরা বাংলাদেশের মানুষ কতখানি নিরাপদ খাদ্য গ্রহণে অভ্যস্ত, তেমন আশঙ্কাও মাঝে মধ্যে উঠে আসে। দেশে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কাজ করে গেলেও সিংহভাগ মানুষের এই সম্পর্কে ধারণা খুব কম। অল্প সংখ্যক সচেতন মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি গুরুত্ব পায় বিধায় তারা কিছুটা নড়েচড়ে বসেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এবং নিউজিল্যান্ডের মিনিস্ট্রি অব প্রাইমারি ইন্ডাস্ট্রিজের মধ্যে এক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে খাদ্যে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে। নিউজিল্যান্ড বিশ্বের অন্যতম উন্নত ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসেবে তার দেশের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখতে সব ধরনের কর্মপ্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুপ্রতিম এই রাষ্ট্রটির এমন চুক্তি আমাদেরই উপকারে আসবে সবচেয়ে বেশি। সমঝোতা স্মারকের নিয়মমাফিক কার্যক্রমে উভয় রাষ্ট্র আইন ও বিধিবিধান সম্পর্কে খাদ্যের তথ্য বিনিময়, ঝুঁকি নির্ধারণ, নজরদারি, পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য উন্নত পরীক্ষাগার নির্মাণ, খাদ্যবাহিত রোগের উৎপত্তি শনাক্তকরণ ছাড়াও খাদ্যপণ্যের আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক মানোন্নয়নও সমধিক প্রাধান্য পাবে। গণস্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয়গুলোতে বিশেষ বিবেচনায় বিভিন্ন প্রকল্পের সঙ্গে একীভূত করা হবে। ভেজালহীন খাদ্যের প্রযুক্তির সনদপত্র অপরিহার্য হিসেবে মূল্যায়ন করা হবে। প্রয়োজনে ‘শিক্ষা সফরের’ মতো কর্মসূচীকেও আমলে নেয়া হবে। গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা তাদের মূল্যবান দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার আলোকে সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ দিতে উদ্যোগী হবেন। দুই দেশের মিলিত কর্মযোগে সম্প্রতি করা চুক্তিটি তার লক্ষ্যমাত্রায় এগিয়ে যাবে। মানুষের জীবন ধারণের আবশ্যক খাদ্যপণ্য কোন ধরনের জটিল অব্যবস্থার শিকার হবে নাÑএমন অঙ্গীকারে স্বাস্থ্য সুরক্ষামূলক এই সমঝোতা স্মারকটি স্বচ্ছতার ভিত্তিতে জোর কদমে এগিয়ে যাবে। মানুষের জীবনের চাইতে মূল্যবান অন্য কিছু হতে পরে না। কাজেই জীবনের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে খাদ্যপণ্যের নিরাপদ বলয় তৈরি করার কোন বিকল্প নেই।