জলবায়ু দিন দিন রূঢ় রূপ নিচ্ছে। পৃথিবী হারাচ্ছে বাসের উপযোগিতা। জলবায়ুকে স্বাভাবিক রাখতে পৃথিবীতে সভা-সমাবেশ কম হচ্ছে না, কিন্তু এতে যে খুব একটা লাভ হচ্ছে না। স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে ‘কপ-২৬’ জলবায়ু সম্মেলনের ফলাফলে প্রভাব ফেলবেন এমন শীর্ষ পাঁচজন বিশ্বনেতাকে ‘ডিলমেকারস’ হিসেবে উল্লেখ করেছে বিবিসি। তালিকায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আছেন। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ‘ঝুঁকিপূর্ণদের কণ্ঠস্বর’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। এতে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখোমুখি হওয়া ৪৮ দেশের গ্রুপ ‘ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম’-এর পক্ষে কথা বলেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনাকে অভিজ্ঞ এবং স্পষ্টবাদী রাজনীতিবিদ উল্লেখ করে বিবিসি জানায়, গত বছর বাংলাদেশের প্রায় এক-চতুর্থাংশ পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছিল। সেই সময় দেশটিতে বন্যার কারণে ১০ লাখ বাড়িঘর হুমকির মুখে পড়ে। কাজেই তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের অভিজ্ঞতা ‘কপ-২৬’ সম্মেলনে তুলে ধরেন।
বিশ্বমঞ্চে জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রধান ও বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর হিসেবে বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রেখে চলেছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। গত বছর করোনার উচ্চ সংক্রমণের সময় গণভবন থেকে যুক্ত হয়ে ভার্চ্যুয়ালি ‘মিডনাইট সারভাইভাল ডেডলাইন ফর দ্য ক্লাইমেট’ শীর্ষক জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত ফোরামের (সিভিএফ) লিডার্স ইভেন্টে সভাপতির বক্তব্যেও তিনি পৃথিবী রক্ষায় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। তাঁর জোরালো উচ্চারণ ছিল এমন: পদক্ষেপ নিতে হবে এখনই; আগামীকাল নয়। বাংলাদেশ বারবারই বলে এসেছে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বর্তমান ক্ষতি কমিয়ে আনতে প্যারিস চুক্তির কঠোর বাস্তবায়ন জরুরী। জলবায়ু এবং পৃথিবীর জন্য ‘ক্লাইমেট জাস্টিস’ ধারণাটি অবশ্যই প্রতিষ্ঠিত হতে হবে।
এবার জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনে চারটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্ব অভিবাসন সমস্যাসহ কার্বন নির্গমন কমিয়ে আনার জাতীয় মাত্রা নির্ধারণের জন্য উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
২০০১ সাল থেকে পরের ২০ বছরের গড় তাপমাত্রা হিসাব করে প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, পৃথিবীর তাপমাত্রা এবারই প্রথম প্রাক-শিল্পায়ন যুগের তুলনায় এক ডিগ্রী সেলসিয়াসের বেশি বেড়ে যাওয়ার পথে রয়েছে। আর সমুদ্রপৃষ্ঠ ২০২১ সালে পৌঁছেছে নতুন উচ্চতায়। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় বিশ্বনেতারা যখন স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে মিলিত হয়েছেন, তখনই এ প্রতিবেদন প্রকাশ করল ডব্লিউএমও। তাতে দেখা যাচ্ছে, বায়ুম-লে গ্রীন হাউস গ্যাসের ঘনত্ব রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছানোয় ২০২১ সালসহ গত সাত বছরে পৃথিবীর তাপমাত্রা আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। সন্দেহ নেই এই বাড়তি তামপাত্রা পৃথিবীকে এক নতুন পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।
কাজেই, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিটি বার্তা ও বক্তব্যকে অবশ্যই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে আগামী দিনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশে ইতোমধ্যে জলবায়ু বাস্তুচ্যুত ৬০ লাখ মানুষ রয়েছে। এছাড়াও অতিরিক্ত ১.১ মিলিয়ন মিয়ানমারের রোহিঙ্গার বোঝা যোগ হয়েছে। কভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলা এ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। বিশ্বকে জলবায়ু অভিবাসীদের দায়িত্ব ভাগ করে নেয়ার জন্য মানুষের ঝুঁকি হ্রাসে তাঁর আহ্বানে সক্রিয় সাড়া না দেওয়ার বিকল্প নেই।