এক ধরনের আবর্জনা জাতীয় পন্য, বাতিল টায়ার থেকেই চারটি মূল্যবান পদার্থ, তৈল, গ্যাস, কয়লা ও লোহা উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। প্রায় আবর্জনা হিসেবে গন্য হয়ে দেশের আনাচে কানাচে পরে থাকা গাড়ীর পরিত্যক্ত টায়ার থেকে মূল্যবান পদার্থ উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। আর এগুলো প্রমান করেছেন, দিনাজপুর জেলার হিলি ও ভাদুরিয়ায় পরিবেশ বান্ধব কারখানায় গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার একদল সফল উদ্যোক্তাগণ। এরা হলেন, জামাল উদ্দিন, দীপক, দেবু সাহা, ভুইয়া, ইলিয়াস হাজী, ছলেমান, আলম ও মিলু প্রমূখ।
উদ্যেক্তাগণ দাবী করে বলেছেন, সরকারের পৃষ্ট পোষকতা এবং নিধারিত স্থান, ব্যাংক লোন, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সহযোগিতা পেলে এই খাতকে আরও উন্নত করা সম্ভব হবে। এটা খুবই সম্ভাবনাময় ও সহজ একটি পদ্ধতি অনেকগুলি টায়ার একটি ব্রয়লারের ভিতরে দিয়ে সেটি উত্তপ্ত করলেই বেরিয়ে আসে মূল্যবান সব পদার্থ তৈল, গ্যাস, কয়লা ও লোহা।
উৎপাদনকৃত কয়লা বিভিন্ন ইটভাটায় জ¦ালানী হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তৈল (গ্রীন ওয়েল) জ¦ালানী হিসেবে রাস্তা নির্মানের কাজে ব্যবহ্নত হচ্ছে। ইস্পাতের তার চলে যাচ্ছে বড় মিলে যাহা রডের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আর গ্যাস বোতল জাত করতে পারলে রান্নাসহ যে কোন জ¦ালানী হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। এমনকি দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানী করা যেতে পারে বলে তারা মত পোষন করেছেন।
তাই বলা যায়, এই রিসাইক্লিন কারখানা দিয়ে অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটানো সম্ভব। এটা একদিকে সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে, অপর দিকে বেকার সমস্যা দূর করছে। খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হচ্ছে। এসব কারখানায় কাজ করে একেবারে পড়াশোনা জানেনা এমন নি¤œশ্রেণীর মানুষগুলো অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বি হতে পারছে। দেশের প্রায় সব এলাকাতেই বাতিল টায়ার ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে থাকতে দেখা যায়।
বিশেষ করে যারা শহরের নি¤œ আয়ের মানুষ তাদের বাড়ীর আশপাশে বস্তিতে, ফুটপাতে, ড্রেনে, খালে বিলে, ডোবা নালাসহ বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকে। অনেক সময় শিশুদেরকে এসব টায়ার দিয়ে খেলা করতে দেখা যায়। এতে স্বাস্থ্য ঝুকিসহ শিশুদের নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়ে থাকে। বিশেষ করে এসব টায়ারের ভিতরে জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে মশার প্রজণন হয়ে থাকে, যাহা মানব দেহে মেলেরিয়া, ফাইলেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকন গুনিয়াসহ নানা রকম প্রাণঘাতি রোগ ছড়ায়।
যেহেতু এইসব টায়ারগুলো রাবারের সাথে কার্বনের সংমিশ্রনে তৈরী হয় এবং ভিতরটা ইস্পাতের তার দিয়ে মোড়ানো থাকে, তাই এটা খুব শক্ত হয়। এটা সহজেই মাটির সাথে মিশে নষ্ট হয় না। আবার এটা আগুনে পুড়লেই খুব দূর্গন্ধ যুক্ত কালো ধোঁয়া বের হয় যাহা পরিবেশ নষ্ট করে, তাই পরিবেশ রক্ষার্থে প্রক্রিয়াকরন করে ধবংস করাই উত্তম। এতে একদিকে যেমন পরিবেশ বাঁচবে অপরদিকে অর্থ উপার্জন হবে।
এ বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের এক সরকারী কর্মকর্তার সাথে আলাপ কালে তিনি এ প্রতিনিধিকে বলেন, এটা খুবই সম্ভাবনাময় ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বটে। কেননা বাতিল হওয়া টায়ার গুলো যদি ধ্বংস করা না হয় তাহলে এগুলো একদিকে পরিবেশ ও জীববৈচিত্রের ওপর মারাত্বক প্রভাব ফেলবে, যার ছোবল থেকে রক্ষা পাওয়া মুশকিল, অপরদিকে এই কারখানাগুলোয় অনেক বেকার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। সেইহেতু এই খাতকে সহযোগীতা করা সরকারের সহযোগিতার প্রয়োজন বলে মনে করেন।