কুড়িগ্রামে নির্বাচনের বিধি নিষেধ না মেনেই অবৈধ ছাপাখানা থেকে নির্বাচনী সামগ্রী ছাপানোর কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে প্রেস মালিকরা। জেলায় বৈধ ছাপাখানা ১৩টি থাকলেও নির্বাচনী মাঠে প্রচারণীতে নাম সর্বস্ব মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে শতাধিক। প্রশাসনের নজরদারির অভাবে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ হবার পাশাপাশি রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
কুড়িগ্রামে ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় জমে উঠেছে দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নির্বাচনী পোষ্টার, ফেস্টুন, লিফলেটে ঝুলছে পাড়া-মহল্লাসহ হাট বাজার সর্বত্র। কিন্তু বিধি না মেনে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অনুমোদনহীন প্রেস থেকে নির্বাচনী সামগ্রী ছাপাচ্ছেন। এ কারণে বৈধ প্রেস মালিকরা হচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্থ। ফলে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। করোনার দুর্যোগে বৈধ প্রেস মালিকরা সরকারি অনুদান না পাওয়ায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেবার স্বম্ভাবনা ছিল। কিন্তু প্রশাসনের নজরদারী না থাকায় অবৈধ ব্যবসায়ীদের কারণে সেটিও স্বম্ভব হচ্ছে না বৈধ ব্যবসায়ীদের।
১৯৭৩সালের ছাপাখানা ও প্রকাশনা (ঘোষণা ও নিবন্ধন) আইন অনুযায়ী ডিক্লারেশন প্রাপ্তি ব্যতিরেকে যে কোন প্রতিষ্ঠানের মুদ্রণ কাজ করা দন্ডনীয় অপরাধ। অথচ প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কুড়িগ্রামে বিভিন্ন কম্পিউটার প্রিন্টের দোকান, স্ক্রিন প্রিন্টের দোকানে পোস্টার, লিফলেটসহ অন্যান্য নির্বাচনী প্রচার সামগ্রী ছাপাচ্ছেন। বৈধ মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানের বদলে নিজেদের নাম ব্যবহার করছে যা আইন বর্হিভূত। নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশ এর বিধি অনুযায়ী সকল নির্বাচনী পোস্টার, লিফলেটে ছাপার ক্ষেত্রে মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা এবং মুদ্রণের তারিখ থাকতে হবে। এছাড়াও ২০১৬সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন আচরণ বিধিমালার প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে-কোন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা তাহার পক্ষে অন্য কোন ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা ও মুদ্রণের তারিখ বিহীন কোন পোস্টার লাগাইতে পারিবেন না। বিধি অনুযায়ী একজন প্রার্থীও ৬০ী ৪৫সেন্টিমিটার সাদা-কালো রঙের পোষ্টার হতে হবে। কিন্তু কুড়িগ্রামে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীরা বিধি নিষেধ না মেনে তাদের মনগড়া নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
আন্ধারীঝাড় ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মো: ফজলুল হক মন্ডল বলেন, আমি নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে বৈধ প্রেসে পোস্টার ছেপেছি। অনেক প্রার্থী বিধি বহির্ভূতভাবে পোষ্টার ছাপিয়েছে। জয়মনিরহাট-ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী গোলাম রব্বানী তালুকদার বাদল বলেন, আমি পোষ্টার পাচ্ছি বিভিন্ন মাধ্যম থেকে। আমি নিজে কোন পোষ্টার ছাপাচ্ছি না। পোষ্টার জনগণ দিচ্ছে কোথা থেকে দিচ্ছে আমি সঠিক জানি না।
ভূরুঙ্গামারী উপজেলার পোস্টার ছাপানো ব্যবসায়ী জাকির হোসেন বলেন, অনেক মেম্বার ও চেয়ারম্যানের পোষ্টার ছাপানোর কাজ পেয়েছি যা পোষ্টার রংপুর থেকে ছাপিয়ে এনেছি। পোষ্টারের ডিজাইন করে দেবার কারণে তারা আমাদের নাম ব্যবহার করেছে। একই উপজেলার ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলাম ছাপাখানা ও প্রকাশনা নিয়ে সরকারের অনুমোদন না থাকলেও শুধুমাত্র ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে নির্বাচনী প্রচার সামগ্রী ছাপাচ্ছেন। নির্বাচন শেষে সরকারি কোষাগারে রাজস্ব জমা দেবেন বলেন জানান তিনি।
কুড়িগ্রাম প্রেস মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহফুজার রহমান খন্দকার জানান, কুড়িগ্রামে বৈধভাবে ১৩টি ছাপাখানা রয়েছে। এর মধ্যে সদরে ১২টি এবং নাগেশ^রী উপজেলায় একটি। এসব প্রেসের মালিকগণ নিয়মিতভাবে সরকারকে ভ্যাট-ট্যাক্স দিয়ে আসছেন। মহামারী করোনাকালীন ক্ষতি চলতি নির্বাচনের ছাপানোর কাজ করে পুষিয়ে নেয়ার স্বপ্ন দেখলেও কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে সেটিও হচ্ছে না। যার ফলে মারাতœকভাবে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন প্রেস মালিকগণ।
ভূরুঙ্গামারী উপজেলার রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপক কুমার দেব শর্মা বলেন, প্রার্থীরা বৈধ ছাপাখানায় নির্বাচনী সামগ্রী ছাপাবেন। কোন প্রার্থী নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করলে বা বৈধ ছাপাখানা থেকে নির্বাচনী প্রচার সামগ্রী না ছাপলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।