মানুষের জন্য যেমন ডাক্তার রয়েছন, গবাদি পশুর জন্যেও রয়েছেন ডাক্তার। কিন্তু ফসলের জন্য কোনো চিকিৎসক ! এবার ফসেলের জন্য বগুড়ার নন্দীগ্রামে ‘প্লাট ডক্টর মোবাইল টিম’ গঠন করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেল, গাছের ছাঁয়ার নিচে আড়াআড়িভাবে টেবিল পাতা। পাশে কয়েকটি প্লাস্টিকের চেয়ার। দুইজন কৃষিবিদ টেবিলের উপর রাখা বিভিন্ন প্রজাতির ফল-ফসলের লতাগুল্ম, নিরাপদ ও জৈব কৃষি উপকরণ প্রদর্শণ, কৃষি লিফলেট, ফল ইত্যাদি নেড়েচেড়ে দেখছেন কৃষক। কৃষকের নিকট রোগের বর্ণনা শুনে প্রেসক্রিপশন লিখছেন তারা। উদ্ভিদ চিকিৎসার এ কেন্দ্রটির নাম দেয়া হয়েছে “প্লাট ডক্টর মোবাইল টিম”। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আদনান বাবুর পরিচালনায় এই মোবাইল টিমে রয়েছেন উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা অপূর্ব ভট্টাচার্য্য, উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা নজরুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা। প্রথমদিনেই বিষমুক্ত শাকসবজিসহ কৃষকদের ধান উৎপাদনে সবাধানে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে।
বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে ভাটগ্রাম ইউনিয়নের কালিশ-পুনাইল তিনমাথা মোড়ে ‘প্লাট ডক্টর মোবাইল টিম’ এর উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিফা নুসরাত।
প্রথম দিনই “প্লাট ডক্টর মোবাইল টিম” এ মরিচ গাছ নিয়ে এসেছিলেন পুনাইল গ্রামের চাষি মোয়াজ্জেম হোসেন। তার মরিচ গাছের পাতা কুঁকড়ে যাচ্ছে, এসেছিলেন সমাধান নিতে। তারমতো পেঁপে চাষি আবু তালেব, ধান চাষি মুকুল মিয়াসহ অনেক কৃষক এসেছিলেন ফসলের পোঁকা ও রোগাক্রান্ত হওয়ার সমস্যা নিয়ে। এ সময় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আদনান বাবু ও উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম তাদের বর্ণনা শুনেন। তখন তাদের প্রেসক্রিপশন দিয়ে ওষুধের পাশাপাশি পোকা দমনে পরামর্শ দেন। কীটনাশক প্রয়োগ ছাড়াও প্রাকৃতিক উপায়ে পোকা দমন পদ্ধতি বর্ণনা করেন। কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে নন্দীগ্রাম উপজেলা গঠিত। এই উপজেলার প্রায় ৯০ হাজার কৃষক রয়েছে। প্রতি সপ্তাহে একদিন করে প্রতিটি ইউনিয়নে সারাদিন “প্লাট ডক্টর মোবাইল টিম” কৃষকদের কৃষি সেবা দেয়া হবে। ফসলের যে কোনো রোগবালাই দমন ও মাঠে ফসলে পূর্ব প্রস্ততি বিষয়ে কৃষকদের দেয়া হচ্ছে লিখিত ব্যবস্থাপত্র। এর ফলে ফসলের ক্ষতি অনেক কম হবে। যার ফলে যেকোন কৃষক-কৃষানী তার কৃষি বিষয়ক সমস্যা সহজেই সমাধান করতে পারবে। ফসলের সমাধান নিতে আসা কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, “প্লাট ডক্টর মোবাইল টিম” এর মাধ্যমে এখন আরো সহজেই হাতের মুঠোয় কৃষকরা কৃষি সেবা পাবে। কৃষকদের কষ্ট করে আর কৃষি অফিস যেতে হবে না। যার ফলে লাভবান হবে কৃষক, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
জানতে চাইলে নন্দীগ্রাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আদনান বাবু ‘কালের কন্ঠকে’ বলেন, প্রতি সপ্তাহে ১দিন নির্দিষ্ট স্থানে “প্লাট ডক্টর মোবাইল টিম” বসানো হবে। কৃষকরা স্যাম্পল নিয়ে আসবেন। সেসব পর্যবেক্ষণ করে প্রেসক্রিপশন দেয়া হবে। এতে ক্ষতিকারক, চোরাই বা ভেজাল বিষ ব্যবহারের সুযোগ কমবে। বিষের ক্ষতিকারক প্রয়োগ বন্ধ হবে। পরিবেশ বিনষ্টের প্রবণতা হ্রাস পাবে। এ ছাড়া কৃষির সাথে সম্প্রক্ত সকল শ্রেণিপেশার মানুষের দোড়গোড়ায় কৃষি সেবা পৌঁছানোর পাশাপাশি আধুনিক, নিরাপদ, বানিজ্যিক কৃষি গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালনে করবে এই “প্লাট ডক্টর মোবাইল টিম”।