নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ঘোষিত দেশের দ্বিতীয় দফায় আগামী ১১নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচন। হাতে গোনা আর মাত্র ৩ দিন রয়েছে নির্বাচন। শেষ মুহূর্তে নির্বাচনকে সামনে রেখে চেয়ারম্যান,সাধারণ সদস্য ও নারী আসনের সদস্যরা প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। একগ্রাম থেকে অন্যগ্রামসহ বাসরত এলাকায় ছুটে ভোটারদের সাথে কুশল বিনিময় করছেন এবং নানা রকম প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। ইউনিয়নগুলো চলছে ভোটের আমেজ। চায়ের দোকানসহ গল্প আড্ডায় স্থানে বসে প্রার্থীদের ভোটের হিসাব নিকাশে কষতে শুরু করেছেন সমর্থকরা। গত নির্বাচনে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬টিতে আওয়ামী লীগের সমর্থনে চেয়ারম্যান প্রার্থীরা জয়লাভ করেন। এবার বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তাঁরা। বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সভায বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। এদিকে বিএনপিপন্থীরা দলীয় প্রতীক ছাড়াই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। বর্তমান ও সাবেক অনেক নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ৭ টি ইউপিতে ভোটযুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ ছাড়া চৌডালা ইউনিয়নে একজন জামায়াত নেতা স্বতন্ত্র প্রর্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনে এবার বিদ্রোহী প্রার্থীরা অনেক ইউনিয়নে জয়ী হবেন বলে এলাকার অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা ধারণা করছেন।
৮টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যন পদে ২৫ জন, সাধারণ সদস্য পদে ২৭১ জন ও সংরক্ষিত নারী আসনের ১০৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে দুই ইউনিয়নের তিন জন সাধারণ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁদের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন পরবর্তীতে পদক্ষেপ নিবেন বলে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম জানান।
ইউনিয়নগুলো সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রার্থীর সমর্থকরা বাড়ি বাড়ি, দোকানপাঠ, চায়ের দোকানসহ রাস্তায় নেমে নিজ প্রার্থীদের পক্ষে স্লোগানে মেতে উঠেছেন। কেউ কেউ ভোটারদের মধ্যে প্রচারপত্র বিতরণ করে ভোট দেওয়ার অনুরোধ করছেন। মসজিদ, মন্দির ও উপাসনালয়গুলোতে দিচ্ছে সহযোগিতা। গ্রামের খাল-খন্দর রাস্তাগুলো মেরামতের জন্য দিচ্ছে অর্থ। ভোটারদের আকর্ষণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে প্রার্থীরা। কোলাকুলি আর কুশল বিনিময়সহ মাইকিংয়ের আওয়াজ মোটরসাইকেলের শোডাউন অন্য রকম এক দৃশ্য দেখা যাচ্ছে ইউনিয়নগুলোতে। দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই জমতে শুরু করেছে নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণা। এদিকে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে ৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ৯ জন বিএনপি নেতা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে এবার রহনপুর ও বোয়ালিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের নতুন মুখ দুই প্রার্থী। গোমস্তাপুর ইউনিয়ন ঃ এ ইউনিয়নে ভোটার সংখ্যা ৩১ হাজার ৫'শ ৫৭ জন। পুরুষ ভোটার ১৫ হাজার ৬’শ ৭১ ও মহিলা ভোটার ১৫ হাজার ৮’শ ৮৬ জন। চেয়ারম্যান পদে ৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁরা হলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জামালউদ্দিন (নৌকা) ও আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ মিঠু (আনারস), স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা প্রভাষক আনোয়ার হোসেন (ঘোড়া) ও অপর বিএনপি নেতা আশরাফ আলীর ছেলে আব্দুল্লাহ আল রায়হান (চশমা)। এখানে আওয়ামী লীগ এগিয়ে থাকলেও চতুর্মূখী লড়াইয়ের সম্ভবনা রয়েছে।
চৌডালা ইউনিয়ন ঃ এ ইউনিয়নে ভোটার সংখ্যা ২৫ হাজার ৮'শ ২২ জন। পুরুষ ভোটার ১২ হাজার ৭’শ ৯৭ ও মহিলা ভোটার ১৩ হাজার ২৫ জন। এখানে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪ জন। তাঁরা হলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত সাবেক চেয়ারম্যান আনসারুল হক (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী গোলাম কিবরিয়া হাবিব (আনারস) ও তাঁর স্ত্রী শামীম আরা বেগম (চশমা)। আরেকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন জামায়াত নেতা নুরে আলম সিদ্দিকী (অটোরিকসা) প্রতীকে। এ ইউনিয়নে মূলতঃ নৌকা, আনারস ও অটোরিকসা প্রতীকের মধ্যে ত্রিমূখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
বোয়ালিয়া ইউনিয়ন ঃ এ ইউনিয়নে ভোটার সংখ্যা ২০ হাজার ৯'শ ৭ জন। পুরুষ ভোটার ১০ হাজার ৩’শ ৫০ ও মহিলা ভোটার ১০ হাজার ৫’শ ৫৭ জন। চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩ জন। তাঁরা হলেন, আওয়ামী লীগের মনোনীত নতুন মুখ শামিউল আলম (নৌকা), আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান লালু (আনারস), স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা সালেহউদ্দিন (মোটরসাইকেল) প্রতীকে। তবে নৌকা ও আওয়ামী বিদ্রোহী আনারস প্রতীকের প্রার্থী হাড্ডাহাড্ডি অবস্থানে রয়েছে। অন্যদিকে মোটরসাইকেল প্রতীকেও সুবিধা অবস্থানে রয়েছে। এ ইউনিয়নেও ত্রিমূখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। বাঙ্গাবাড়ী ইউনিয়ন ঃ এ ইউনিয়নে ভোটার সংখ্যা ১৯ হাজার ৮'শ ৭৭ জন। পুরুষ ভোটার ৯ হাজার ৮’শ ০৮ ও মহিলা ভোটার ১০ হাজার ৬৯ জন। এখানে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩ জন। তাঁরা হলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত বর্তমান চেয়ারম্যান সাদেরুল ইসলাম (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী আমিজুল ইসলাম (মোটরসাইকেল) ও বিএনপি নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম (আনারস) প্রতীকে। এ ইউনিয়নে মূলতঃ নৌকা ও আনারস প্রতীকের দ্বিমুখী লড়াইয়ের সম্ভবনা রয়েছে।
আলীনগর ইউনিয়ন ঃ এ ইউনিয়ের মোট ভোটার সংখ্যা ১২ হাজার ৫'শ ৯৭ জন। পুরুষ ভোটার ৬ হাজার ৮৮ ও মহিলা ভোটার ৬ হাজার ৫’শ ০৯ জন। চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩ জন। তাঁরা হলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত বর্তমান চেয়ারম্যান তরিকুল ইসলাম (নৌকা),স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা আবুল কাশেম মুহাম্মদ মাসুম (আনারস) ও সরফরাজ নেওয়াজ (চশমা) প্রতীকে। এখানে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী থাকায় সুবিধা অবস্থানে রয়েছে। এ ইউনিয়নে মূলতঃ ত্রিমূখী লড়াইয়ের সম্ভবনা রয়েছে।
রহনপুর ইউনিয়ন ঃ এ ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ১৪ হাজার ৬'শ ৩৪ জন। পুরুষ ভোটার ৭ হাজার ৪’শ ০১ ও মহিলা ভোটার ৭ হাজার ২’শ ৩৩ জন। চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩ জন। তাঁরা হলেন, আওয়ামী লীগের মনোনীত নতুন মুখ তৌফিজুল ইসলাম (নৌকা), আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী ওবাইদুর রহমান (চমশা) ও বিএনপি নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুজ্জামান সোহরাব (আনারস) প্রতীকে। এ ইউনিয়নটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে খ্যাত। তবে বর্তমান চেয়ারম্যান শাহ আল শফি আনসারীকে ও তাঁর আনসারী পরিবারকে এবার আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেয়নি। এখানে তিন প্রার্থী শক্ত অবস্থানে রয়েছে। ত্রিমূখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
রাধানগর ইউনিয়ন ঃ এ ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ২৮ হাজার ৯'শ ৯২ জন। পুরুষ ভোটার ১৪ হাজার ৪’শ ০৬ ও মহিলা ভোটার ১৪ হাজার ৫’শ ৮৬ জন। চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২ জন। তাঁরা হলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত বর্তমান চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ (নৌকা) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা সাবেক চেয়ারম্যান মতিউর রহমান (আনারস) প্রতীকে। এ ইউনিয়নে দুজনের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি ভোটযুদ্ধ হবে। মুলতঃ দ্বিমুখী লড়াই হচ্ছে। পার্বতীপুর ইউনিয়ন ঃ এ ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ২৭ হাজার ১'শ ৬০ জন। পুরুষ ভোটার ১৩ হাজার ৬’শ ৫২ ও মহিলা ভোটার ১৩ হাজার ৫’শ ০৮ জন। চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩ জন। তাঁরা হলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত বর্তমান চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খান (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী নজরুল ইসলাম (চশমা) ও বিএনপি নেতা সাবেক চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন (আনারস) প্রতীকে। এখানে নৌকা ও আনারস প্রতীকের মধ্যে দ্বিমুখী লড়াই হবে বলে সংশ্লিষ্ট ধারণা করছেন।
নির্বাচন বিষয়ে গোমস্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দিলীপ কুমার দাস জানান, নির্বাচনী এলাকাগুলোতে এখন পর্যন্ত আইন- শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রয়েছে। এজন্য প্রত্যেক ইউনিয়নে থানা পুলিশের একটি করে টিম কাজ করছেন। উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রির্টানিং কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম জানান, আচরণ বিধিসহ নির্বাচনের সার্বিক বিষয় দেখাশোনার জন্য নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করেছেন। নির্বাচনে দায়িত্ব থাকা কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষন দেয়া হয়েছে। তিনি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সকলের সহযোগীতা চেয়েছেন।