লাগামহীন ভাবে বাড়ছে নিত্য পণ্যের দাম। ব্যবসায়ীরা নানা কারণে নিত্য পণ্যের দাম বাড়ালে বাংলাদেশ ট্রেডিং করপোরেশন (টিসিবি) ট্রাকে করে সারা দেশে চাল, তেল, চিনি, পিয়াজ সহ নানা নিত্য পণ্য বাজার দরের চেয়ে কম দামে বিক্রি করে থাকে। তাই সাম্প্রতিক কালে টিসিবির ট্রাকের পেছনে বিরাট লাইন কারো চোখ এড়ায় না। কিন্তু এবার টিসিবিই বোতল জাত তেল, মসুরের ডালের দাম বাড়িয়েছে। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১০ টাকা বাড়িয়ে ১১০ টাকা করা হয়েছে। আর মসুরের ডালের কেজি ৫ টাকা বাড়িয়ে প্রতি কেজি ৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অবশ্য চিনির দাম বাড়ায় নি, আগের ৫৫ টাকা কেজিই রয়েছে। এর আগে গত মার্চ মাসে টিসিবি সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটার ১০ টাকা আর চিনির দাম প্রতিকেজি ৫ টাকা বাড়িয়েছে।
দাম বাড়ানো সম্পর্কে টিসিবির ব্যাখ্যা হচ্ছে, বাজারের সাথে দামের পার্থক্য বেশি হলে পণ্য কালোবাজারি হবার আশঙ্কা থাকে। তাদের এ বক্তব্যে কেউ সন্তুষ্ট হতে পারছে না। পর্যবেক্ষক মহল মনে করে, তবে দেশে এত আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কি কালো বাজারি নিয়ন্ত্রণে অক্ষম? উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপিয়ে জনগণের পকেট কেটে নেয়ার কোনো অর্থ হয় না। অন্যদিকে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম এক লাফে লিটার প্রতি ১৫ টাকা বাড়িয়েছে সরকার। ৬৫ টাকা জ¦ালানী তেল এখন ৮০ টাকা লিটার কিনতে হচ্ছে। গত ৩ নভেম্বর থেকে জ¦ালানী তেল ও টিসিবির পণ্যের দাম বেড়েছে। বর্তমান বাজার দর বিবেচনায় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ডিজেল প্রতি লিটার ১৩ টাকা ১ পয়সা ও ফার্নেস ওয়েল ৬ টাকা ২১ পয়সা করে কমে বিক্রি করায় প্রতিদিন ২০ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে।
দেশের ট্রাক, বাসসহ পরিবহনের জ¦ালানী হিসেবে ডিজেল ব্যবহৃত হয়। এর দাম বাড়ার সাথে পরিবহন ভাড়া বাড়তে বাধ্য। এর প্রতিক্রিয়া পড়েছে নিত্যপণ্যের দামের ওপর। সব পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। কিন্তু দেশের অধিকাংশ নাগরিক করোনা যুদ্ধের কারণে খুব আর্থিক কষ্টে রয়েছেন। অনেকেরই নুন আনতে পান্তা ফুরবার অবস্থা। চাকুরীজীবী কারো বেতন বাড়ে নি। কিন্তু বাজারে নিত্য পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় পারিবারিক খরচ সামলাতে সবাই হিমশিম খাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ না করে যদি নিত্য পণ্যের দাম বাড়াতে থাকেন তবে জনগণ দাঁড়াবে কোথায়? ভুলে যাওয়া চলবে না, রাষ্ট্র একটি সেবা প্রতিষ্ঠান। অধিকাংশ জনগণের কল্যাণই তার দায়িত্ব। যদিও সরকার বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রতিবেশী দেশ সহ বিশে^র অন্যান্য দেশে জ¦ালানী তেলের দাম নিয়মিত সমন্বয় করা হচ্ছে। আর এ সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নিত্য পণ্যের দাম বাড়িয়ে অতিরিক্ত মুনাফা করার সুযোগ খোঁজেন। তাই সরকারের উচিত বাজার মনিটরিংয়ের মাধ্যমে নিত্য পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখার ব্যবস্থা করা।