রাজশাহীর তানোরে রাষ্ট্রপতির স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত স্বশিক্ষিত কৃষিবিজ্ঞানী নূর মোহাম্মদের ১০ বছরের গবেষণালব্ধ ৬২ জাতের ধান একত্র করে তছনছ করা হয়েছে। তাঁর গবেষণা প্লটে রোপণ করা ধান নষ্ট করে ভেতর দিয়ে ট্রলি পার করা হয়েছে। চিৎকার করে বাধা দিতে গেলে তাঁকে আটকে রেখে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার গোল্লাপাড়া মহল্লায় সোমবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সোমবার রাতেই গোল্লাপাড়া মহল্লার বাসিন্দা আবদুল ওহাব (৪২) ও অঞ্জন মালাকারের (৪৫) বিরুদ্ধে তানোর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন নূর মোহাম্মদ।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, তানোর পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওহাবের নির্দেশে এই বিজ্ঞানীকে মারধর করে তাঁর গবেষণা প্লটের ধান নষ্ট করা হয় বলে াভিযোগে দাবি করেন নূর মোহাম্মাদ। এতে তাঁর ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছেন। তবে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্তু এ ঘটনায় থানায় মামলা রুজু করা হয়নি।
নূর মোহাম্মাদ জানান, তানোর সদরের গোল্লাপাড়া মহল্লার বাসিন্দা নূর মোহাম্মদ দশম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। বরেন্দ্রভূমিতে প্রায় প্রতিবছরই খরায় নষ্ট হয়ে যায় ধান। সেই ধান রক্ষা করতেই কাজে লেগে যান তিনি। নিজের মাটির ঘরটাকে বানিয়ে ফেলেন গবেষণাগার। সেখানেই তিনি ধান নিয়ে নতুন নতুন উদ্ভাবন শুরু করেন। এ পর্যন্ত সংকরায়ণের পর নূর মোহাম্মদের কৌলিক সারির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই শতাধিক। এগুলোর মধ্যে চার-পাঁচটি ধান জাত হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। এর আগে তিনি খরাসহিষ্ণু, সুগন্ধি ও স্বল্প জীবনকালের ধান উদ্ভাবন করেছেন তিনি।
কৃষি উৎপাদনে সাফল্যের জন্য নূর মোহাম্মদ ২০০৫ সালে পান রাষ্ট্রপতির স্বর্ণপদক। সেরা কৃষি উদ্ভাবন শ্রেণিতে তীর-প্রথম আলো কৃষি পুরস্কার-২০১৮ পেয়েছেন এই কৃষিবিজ্ঞানী। এমন একজন মানুষকে ওহাব সরদারের হুকুমে একদল শ্রমিক নূর মোহাম্মদকে তুলে নিয়ে এক জায়গায় আটকে রেখে মারধর করেন। অন্যরা তাঁর গবেষণা প্লট নষ্ট করে ট্রলি পার করে নিয়ে যান। তবে, গাড়ি পার করা হলে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
অভিযোগে বলা হয়েছে, গোল্লাপাড়া মহল্লায় সোমবার বিকেল সাড়ে চারটায় স্থানীয় অঞ্জন মালাকারের (৪৫) জমির ধান কাটা হচ্ছিল। সেখানে টিটু নামের চাঁপাইনবাবগঞ্জের একজন আর ওহাব সরদারের নেতৃত্বে ২৪-২৫ জন শ্রমিক ধান কাটার কাজ করছিলেন। পাশে নূর মোহাম্মদের গবেষণা প্লটের ছোট ছোট অংশে বিভিন্ন জাতের ধান ছিল। এর মধ্যে কিছু ধান কাটা ছিল, কিছু এখনো কাটা হয়নি। তাঁরা নূর মোহাম্মদের গবেষণা প্লটের ৬২ জাতের কাটা ধান একত্র করে এবং জমির খাড়া ধান নষ্ট করে ট্রলি পার করছিলেন।
এসময় তিনি বাধা দিতে গেলে সেখানে উপস্থিত যুবলীগ নেতা আবদুল ওহাব সরদার (৩৮) হুমকি দিয়ে বলেন, ‘আমরা পুলিশের ভয় করি না। তোর যা করার তুই কর। অঞ্জন মালাকার হুমকি দিয়ে বলেন, ‘তোর কোন বাপ আছে, ডেকে নিয়ে আয়। আমরা তোর জমির ওপর দিয়েই ধানের ট্রলি পার করব।
তাঁদের হুকুম পেয়ে একদল শ্রমিক নূর মোহাম্মদকে তুলে নিয়ে এক জায়গায় আটকে রেখে মারধর করেন। অন্যরা তাঁর গবেষণা প্লট নষ্ট করে ট্রলি পার করে নিয়ে যান। গাড়ি পার করা হলে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর তিনি জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ ফোন করেন। তবে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ঘটনাস্থল থেকে চলে যান। এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও যুবলীগ নেতা আবদুল ওহাবের ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এবিষয়ে তানোর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রাকিবুল হাসানের মোবাইলে ফোন দেয়া হলে তিনি বলেন, অভিযোগের পর পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।