ডিজেলের দাম বাড়ায় জনগণের কাঁধে বাড়তি ভাড়ার চাপে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। বাস ও লঞ্চ মালিকদের তিন দিন ধর্মঘটে জনগণের হয়রানীর শিকার করে শেষ পর্যন্ত দূর পাল্লার রুটে বাসে ২৭ শতাংশ এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে চলাচল রত বাসে ২৬ দশমিক ৫০ শতাংশ ভাড়া বাড়িয়েছে সরকার। ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে মিনি বাসের ভাড়া ৫ টাকার স্থলে বাড়িয়ে ৮ টাকা ও বাসের ভাড়া ৭ টাকার স্থলে ১০ টাকা করা হয়েছে। অন্যদিকে লঞ্চের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে ৩৫ শতাংশ। নতুন ভাড়া নির্ধারণে তেলের দাম ছাড়াও এখানে বিনিয়োগ, ঋণের সুদ, রক্ষণাবেক্ষণ, যন্ত্রাংশ বিভিন্ন ধরনের চার্জ, শ্রমিক বেতনসহ অন্যান্য ব্যয়ও বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
ডিজেলের দাম বাড়াবার ফলে কৃষকের সেচের কারণে তার উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়বে, পণ্য পরিবহনে খরচ বাড়ায় সব নিত্য পণ্যের দামও বাড়বে। ইতোমধ্যে এর প্রভাব বাজারে পড়তে শুরু করেছে। সব নিত্য-পণ্যসহ তরি-তরকারি দাম বেড়ে গেছে। সরকার জনগণের সামর্থ্যরে কথা বিবেচনা না করে বাস ও লঞ্চ মালিকদের চাপের কাছে বাধ্য হয়ে নতুন ভাড়া নির্ধারণে সব কিছু মেনে নিয়েছে। বাস ও লঞ্চ মালিকরা তাদের বিনিয়োগ, ঋণের সুদ, রক্ষণাবেক্ষণ, যন্ত্রাংশ ও বিভিন্ন চার্জ সহ শ্রমিক বেতন আগেও দিতেন বাস ও লঞ্চ পরিচালনাকারীরা। তবে নতুন করে সেসব বিশ্লেষণের প্রয়োজন হলো কেন? সমস্যা তো এখানেই শেষ না, ভাড়া সরকার ২৬ দশমিক ৫০ শতাংশ বাড়িয়েছে। কিন্তু যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে আরো বেশি। সরকারের বেধে দেওয়া ভাড়া যদি ৩২ টাকা হয় তবে আদায় করা হচ্ছে ৩৫ টাকা। এমন অভিযোগও আছে, যাত্রীদের কাছ থেকে ইচ্ছে মতো ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। তাছাড়া ডিজেলের দাম বেড়েছে ২৩ শতাংশ আর ভাড়া বাড়ানো হয়েছে ২৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। অর্থাৎ বাস মালিকরা শাঁখের করাত হয়ে উঠেছেন। বিপিসি বিগত ৭ বছর জ¦ালানি তেলে মুনাফা করেছে। সরকারের কোনো ভর্তুকি দিতে হয় নি। উল্টো মুনাফায় ভাগ বসিয়েছে। মুনাফার টাকা বিপিসির কোষাগারে থাকলে এখন সরকারের ভর্তুকি সহায়তার প্রয়োজন হতো না। বিপিসি নিজেই নিজস্ব তহবিল থেকে ভর্তুকি দিতে পারতো। টানা মুনাফার পর এক বছর লোকসান করলে কি এমন আসে যায়। দাম না বাড়িয়ে সরকার ভর্তুকি দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারতো।
এমনিতেই করোনার কারণে দেশের জনগণের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই নাজুক। অেেনেক কাজ হারিয়ে বেকার। এমন অবস্থায় যদি নিত্য পণ্যের অতিরিক্ত দাম ও চলাচলের যানবাহনের বাড়তি ভাড়া গুনা কতটা সম্ভব, তা কেউ বিবেচনা করেন না। এ অবস্থায় মানুষ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, ভরসার জায়গা সরকার যখন তাদের কথা বিবেচনা করে না, সেক্ষেত্রে তাদের জীবন যুদ্ধে পরাজিত সৈনিক হওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। অসহায় যাত্রী সাধারণ বাস সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও সরকারের কাছে অসহায়। ডিজেলের দাম সমন্বয়ের নামে যে ভাবে জনগণকে জিম্মি করে অস্বাভাবিক হারে ভাড়া বাড়ানো হলো তা সত্যিই বিস্ময়কর। আমরা চাই সরকার মনিটরিংয়ের মাধ্যমে অযথা বাড়তি ভাড়া যাতে কেউ আদায় করতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য দেয়া।