দেশের বিভিন্ন জায়গায় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত হামলা ও সংঘর্ষে ২৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন। গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে চার শতাধিক। গত সোমবার মেহেরপুর জেলার গাংনীতে দুজন নিহত হয়েছেন। প্রথম ধাপে ৩৬৪টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুই পর্বে ২১ জুন ও ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে সাতজন নিহত হয়েছেন। প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে আহত হয়েছে দুই শর বেশি লোক। দ্বিতীয় ধাপে কাল ১১ নভেম্বর আরো ৮৪৬টি ইউপিতে ভোট হতে যাচ্ছে।
দেশে ইউপি নির্বাচন কখনই সহিংসতামুক্ত ছিল না। ব্যতিক্রম এবারও ঘটেনি। শেষ পর্যন্ত সহিংসতা রোধ করা যায়নি। সব নির্বাচনের আগেই সুনির্দিষ্টভাবে তালিকা করে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার এবং অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান পরিচালনার দাবি জানানো হয়। নির্বাচনসংশ্লিষ্ট অনেকেই সহিংসতা ও প্রাণহানির জন্য নির্বাচন কমিশনের অবহেলাকেই দায়ী করেছেন। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, সহিংসতা এড়াতে নির্বাচনের আগে বৈধ অস্ত্র জমা দেওয়া এবং আচরণবিধি লঙ্ঘনে প্রার্থিতা বাতিলের মতো কঠোর শাস্তির প্রস্তাব করেন মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। ঢাকা, খুলনা ও সিলেট বিভাগের সহিংসতার আশঙ্কা প্রকাশ করে আরো বেশি পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের প্রস্তাব রাখেন কয়েকজন বিভাগীয় কমিশনার এবং পুলিশের ডিআইজি পদের কর্মকর্তারা। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য মাঠ প্রশাসন থেকে নির্বাচন কমিশনের কাছে যেসব সুপারিশ করা হয়েছিল, তা বাস্তবায়নের কার্যকর কোনো উদ্যোগ এখনো দেখা যায়নি। নির্বাচন কমিশন পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারেনি। এবারও দলীয় মনোনয়নে এবং দলীয় প্রতীক নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। অনেকের মতে, এটিও নির্বাচনে সহিংসতা বেড়ে যাওয়ার একটি কারণ। নির্বাচন কমিশনের কাছে এ ক্ষেত্রে আরো বেশি সতর্কতা আশা করেছিল মানুষ। নির্বাচনসংশ্লিষ্ট অনেকেই মনে করেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী, বিশেষ করে পুলিশ যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে পারলে নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রক্ষা সম্ভব। কিন্তু তারা তা পারছে না। এর জন্য রাজনৈতিক প্রভাবও দায়ী। তাঁদের মতে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতার কারণেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। অথচ দেশের মানুষ যেকোনো পর্যায়ের নির্বাচনে চূড়ান্তভাবে নির্বাচন কমিশনের ওপরই আস্থাশীল থাকতে চায়।
এই নির্বাচনই শেষ নয়। ভবিষ্যতে স্থানীয় পর্যায়ে আরো অনেক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী সংঘাত-সহিংসতার যে ধারা তৈরি হয়েছে, দ্রুত তার অবসান হোক। সহিংসতার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করা হোক। ভবিষ্যতে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশনকে আরো কঠোর হতে হবে। আমাদের বিশ্বাস, সরকার বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে বিবেচনা করবে এবং দায়িত্বশীল নাগরিক ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে একটি স্থায়ী সমাধানের দিকে এগিয়ে যাবে এটাই প্রত্যাশা।