দেশে নূন্যতম স্নাতক ডিগ্রিধারী শিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার ৩৩ দশমিক ১৯ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী এ হার আরো বেশি। তাদের হিসাবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় উত্তীর্ণ স্নাতকদের মধ্যে বেকারত্বের হার ৬৬ শতাংশ।
দেশে বর্তমানে বিপুলসংখ্যক কর্মপ্রার্থী শিক্ষিত তরুণ রয়েছেন, যাদের অধিকাংশের আকাক্সক্ষার মধ্যে রয়েছে যেকোনো উপায়েই হোক একটি চাকরি খুঁজে পাওয়া, তাদের লক্ষ্য ও দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে পারলে তাদের মধ্যকার বেকারত্বের হার সহসাই অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। আর এ পরিবর্তিত দৃষ্টিভঙ্গিটি হতে পারে চাকরির পেছনে হন্যে হয়ে না ঘুরে নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা এবং এটি করতে পারলে তা শুধু শিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হারই কমাবে না, অধিকতর মেধাবীদের যুক্ততার কারণে দেশের প্রায় সব খাতে উৎপাদন বৃদ্ধি ও উচ্চতর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনেও সহায়ক হবে।
কিন্তু একজন শিক্ষিত তরুণকে উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য মুখে বলা যতটা সহজ, এর বাস্তব প্রয়োগ ততটাই সমস্যাসংকুল। একেবারে প্রথম সমস্যা হচ্ছে মানসিকতার। বাংলাদেশ সমাজের অভ্যস্ত ধারায় অধিকাংশ মানুষের মধ্যে ব্যবসাকে যথেষ্ট সম্মানজনক পেশা হিসেবে গ্রহণের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রস্তুতি এখন পর্যন্ত একেবারেই গড়ে ওঠেনি। বেশির ভাগ মানুষ এখনো চাকরিকেই সবচেয়ে কাম্য পেশা বলে গণ্য করেন। ফলে একজন শিক্ষিত তরুণ মনে মনে উদ্যাক্তা হওয়ার আকাক্সক্ষা পোষণ করলেও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির কাছে হেরে গিয়ে শেষ পর্যন্ত করণিক, খাজাঞ্চি বা বিক্রয়কর্মী হওয়ার পথকেই বেছে নেন।
উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় বিধিবিধানগত শর্ত পূরণ এবং একই উদ্দেশ্যে প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে দেশে যেসব হয়রানি, দীর্ঘসূত্রতা ও অনিয়মের চর্চা রয়েছে, সেগুলোও উদ্যোক্তাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে গ্রহণের ক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে বৈকি! অনেক সম্ভাবনাময় আগ্রহী নতুন উদ্যোক্তাই এসব ‘ব্যয়বহুল’ ও হয়রানিপূর্ণ প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তার ধরন দেখে ভয় পেয়ে গিয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার ব্যাপারে সব আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। উদ্যোক্তা উন্নয়নের তাত্ত্বিক আলোচনায় যতই বলা হোক না কেন যে ঝুঁকি গ্রহণের সামর্থ্যই একজন প্রকৃত উদ্যোক্তার মূল বৈশিষ্ট্য কিন্তু বাংলাদেশের উদ্যোক্তা উন্নয়ন সংস্কৃতিতে ঝুঁকির যে আদল, তা মোকাবেলার সাহস সঞ্চয় করা সত্যি এক কঠিন কাজ!
নতুন প্রজন্মের শিক্ষিত তরুণদের জন্য উদ্যোক্তাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে নেয়ার পরামর্শটি শুধু কর্মসংস্থান সৃষ্টির দৃষ্টিকোণ থেকেই নয়, সমাজ ও অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানা গুণগত পরিবর্তন আনার জন্যও জরুরি। শিক্ষিত তরুণ বর্ধিত সংখ্যায় শিল্প ও ব্যবসায় যুক্ত হলে তাদের উচ্চতর মেধা একদিকে যেমন সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলোয় উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে, অন্যদিকে তেমনি উচ্চপ্রযুক্তিসম্পন্ন উদ্ভাবনময় ক্ষেত্রগুলোয় বিনিয়োগও বৃদ্ধি পাবে, যা সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশ রাষ্ট্র, সমাজ ও তার অর্থনীতিকে প্রকৃত অর্থেই বৈশ্বিক মানদ-ে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে। কাজেই সরকার এ বিষয়ে দৃষ্টিপ্রদানপূর্বক কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এটাই প্রত্যাশা।