অসুস্থ মানুষ সুস্থতার আশায় হাসপাতালে যায়। ওয়ার্ড বা কেবিনে থেকে চিকিৎসা নেয়। কিন্তু যদি হাসপাতালের পরিবেশ যদি অসুস্থকর বা নোংরা হয়, তবে রোগীর চিকিৎসা হবে কি করে? মেঝেতে ধুলার স্তর, ব্যবহৃত মাস্ক, টিস্যু, কাগজের টুকরো, ফলের খোসার ছড়াছড়ি। দেয়ালে থুতু, পানের পিকের দাগ। গোসলখানা, শৌচাগারগুলো নোংরা। শুধু তাই নয় বিছানার চাদরগুলোও নোংরা। এমন পরিবেশে তো সারাক্ষণ মাছি, মশা ভনভন করবেই। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে এমন চিত্র গাজীপুরের সার্কিট হাউজ রোডে অবস্থিত তাজউদ্দীন আহমদ হাসপাতালের।
৫০০ শয্যার এ হাসপাতালটিতে প্রতিদিন দু’হাজার মানুষ চিকিৎসা নিতে আসেন। রোগীর চাপ বেশি হওয়ায় নির্দিষ্ট আসনের বাইরে অনেককে হাসপাতালের বারান্দায় আশ্রয় নিয়ে চিকিৎসা নিতে হয়। ওয়ার্ডের ভেতরেই ধুলাবালির স্তর, ওষুধ রাখার ট্রেতেও মরীচিকা পড়ে ময়লা দাগ, সেখানে বারান্দার অবস্থা কতটা অসস্থিকর তা ভাবাই যায় না। তারপরও মানুষ বেঁচে থাকতে ওই হাসপাতালে যায়। নোংরা পরিবেশের সাথে যুদ্ধ করে সুস্থ হবার চেষ্টা করে।
সমস্যার শেষ এখানেই নয়, পুরো ওয়ার্ডের রুগীদের জন্য এ হাসপাতালে আছে মাত্র একটি গোসলখানা ও দু’টি শৌচাগার। অথচ কোনোটির দরজা ভাঙ্গা আবার কোনোটিতে নাই পানির ব্যবস্থা। ভয়াবহ অবস্থা হচ্ছে, শৌচাগারের সামনে জমে থাকে পানি। আর সেই পানিতে ভাসছে উচ্ছিষ্ট খাবার ও আবর্জনা। দুর্গন্ধে বমি হয়ে যাবার অবস্থা। সুস্থ মানুষের পক্ষেই সে দুর্গন্ধ সহ্য করা সম্ভব নয়। আর রোগীরা কতটা বিড়ম্বনা সহ্য করে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন, তা ভাবলেও আতঙ্কিত হতে হয়।
এককথায় বলা যায়, তাজউদ্দীন আহমদ হাসপাতাল নিজেই অসুস্থ। সে রোগীদের চিকিৎসা দেবে কি করে? কারণ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, রোগীর সুস্থতা অনেকাংশেই হাসপাতালের পরিবেশের ওপর নির্ভরশীল। তাই হাসপাতাল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা খুবই জরুরি। কোনো কারণে হাসপাতালের পরিবেশ দূষিত হলে রোগীর শ্বাসতন্ত্র ও কিডনি আক্রান্ত হতে পারে। এ ছাড়া যক্ষ্মা, কলেরা, ডায়রিয়াসহ নানা রোগে সংক্রমিত হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
করোনা সংক্রমিত হওয়ায় আমাদের স্বাস্থ্য খাতের ভঙ্গুর চিত্র আমরা জেনেছি। কিন্তু হাসপাতালগুলোর পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর তা নিয়ে ভাবার সময় পাই নি। মানছি বহু জায়গায় জনবল সংকট রয়েছে। কিন্তু পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতাই যথেষ্ট। তাই আমরা মনে করি তাজউদ্দীন আহমদ হাসপাতালে জনবল নিয়োগের ব্যবস্থা করে প্রকৃত স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিতে উদ্যোগী হবেন সংশ্লিষ্টরা। আর তা যত দ্রুত সম্ভব ততোই মঙ্গলকর।