প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা নতুন নয়। পাবলিক পরীক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন নিয়োগ ও ভর্তি পরীক্ষায়ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের খবর আসছে সংবাদমাধ্যমে। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি দুরারোগ্য ব্যাধির মতো জেঁকে বসেছে। কোনোভাবেই এর হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারি প্রেসের কর্মী থেকে শুরু করে ছাত্র-শিক্ষক, ব্যাংক কর্মকর্তাÑঅনেকেই এই চক্রের সঙ্গে জড়িত বলে এর আগে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে। গত বছর নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতির দায়ে পাঁচ পরীক্ষার্থীকে পুলিশে সোপর্দ করে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। গত অক্টোবরে নেত্রকোনায় পুলিশের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষার আবেদনে জালিয়াতি করতে গিয়ে ধরা পড়েন দুই যুবক। ২০১৫ সালে কৃষি ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে রাজধানীতে চার ব্যক্তিকে এক বছর করে কারাদ- দেওয়া হয়। ২০১৪ সালে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের সুপারভাইজার পদে নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতির দায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে এক বছর করে কারাদ- দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। ২০১৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা, ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা এমনকি বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ জালিয়াতির অভিযোগে দেশের সবচেয়ে বড় চক্র শনাক্ত করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ। গত শনিবার পাঁচ ব্যাংকে অফিসার (ক্যাশ) পদে এক হাজার ৫১১ জনকে নিয়োগ দিতে যে পরীক্ষা হয়েছে সেখানে ভয়ংকর জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, এই পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি বিভাগ থেকে প্রশ্ন ফাঁস করে ১১টি বুথে ৮৫ শতাংশ ‘উত্তর সমাধান’ দিয়েছে জালিয়াতচক্র। নিয়োগপ্রক্রিয়ার বিভিন্ন পর্যায়ে টাকা দেওয়ার চুক্তি করা হলেও প্রাথমিকভাবে অন্তত ৬০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার তথ্য মিলেছে। ২০০ চাকরিপ্রার্থী ‘উত্তর সমাধান’ কিনেছেন বলেও প্রমাণ পেয়েছে ডিবি। আরো দুই হাজার চাকরিপ্রার্থী এই চুক্তি করেছেন বলে খোঁজ পেয়েছেন তদন্তকারীরা।
এই ধরণের ঘটনা মোটেই স্বস্তিদায়ক নয়। সমাজে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এই জঘন্য অপরাধ প্রতিরোধের সহজ উপায় হচ্ছে অপরাধীদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করা। প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা প্রতিরোধে দেশে আইন আছে। জালিয়াতচক্রের সন্ধান যখন পাওয়া গেছে, তখন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে আরো কঠোর হতে হবে। এই চক্রের সবাইকে আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করা হোক। সরকার এ ক্ষেত্রে শক্ত পদক্ষেপ নেবে এটাই প্রত্যাশা।