শীত আর খেজুরের রসের মধ্যে রয়েছে সুমধুর সম্পর্ক। দিঘলিয়া উপজেলার গাছিরা কেউ কেউ কার্তিক মাসের মধ্য ভাগে খেজুর গাছের রস সংগ্রহ শুরু করেছেন কেউবা রস পাবার জন্য এখনো গাছের পরিচর্যা ও অপেক্ষা করছেন। তবে উপজেলার ঐতিহ্যবাহী গ্রাম ফরমাইশখানায় এখনও অনেক খেজুরগাছ আছে যা গাছির অভাবে পড়ে আছে।
আমাদের দেশে ক্যালেন্ডারে শীতের ঘোষণা দিলেও মানতে নারাজ আবহাওয়া ও পরিবেশ। প্রকৃতি এখন আর পঞ্জিকার অনুশাসন মানছে না। আর সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই গাছ থেকে রস সংগ্রহের পর্ব শুরু হবে। প্রান্তিক জনপদের গ্রামে গ্রামে সকালের শিশিরের সাথে অনুভূত হচ্ছে মৃদু শীত।
আর মাত্র কয়েক দিন পর রস সংগ্রহ করে রস থেকে লালি ও গুড় তৈরির পর্ব শুরু হয়ে চলবে প্রায় মাঘ মাস পর্যন্ত। খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের প্রস্তুতি উপজেলার প্রতিটি গ্রামে চোখে পড়ছে। সময়ের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী খেজুরের গুড়। কিছুদিন আগেও বিভিন্ন এলাকার অধিকাংশ বাড়িতে, ফসলের ক্ষেতের আইলে, ঝোপ-ঝাড়ের পাশে ও রাস্তার দুই ধার দিয়ে ছিল অসংখ্য খেজুর গাছ। কারো কারো জমিতে ছিল খেজুর বন। দিঘলিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদের পাশে এমনই একটা এলাকাকে এখনও দিঘলিয়া খেজুরবন নামে পরিচিত। কালের বিবর্তনে সেখানের সেই খেজুর বন নেই বললেই চলে।
কোনো পরির্র্চযা ছাড়াই অনেকটা প্রকৃতিকভাবে বেড়ে উঠত এসব খেজুর গাছ। প্রতিটি পরিবারের চাহিদা পূরণ করে অতিরিক্ত রস দিয়ে তৈরি করা হতো সুস্বাদু খেজুরের গুড়। গ্রামীণ জনপদে সাধারণ মানুষের সচেতনতার অভাবে পুকুরের পাড়ে বা রাস্তার ধারে পরিবেশ বান্ধব খেজুর গাছ এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। ইট ভাটায় জ¦ালানি হিসেবে ব্যবহার বেশি হওয়ার কারণে যে পরিমাণ গাছ চোখে পড়ে তা নির্বিচারে নিধন করায় দিনদিন খেজুর গাছ কমছেই। সব মিলিয়ে দিঘলিয়া উপজেলায় এখনও যে খেজুরগাছ আছে তা দিয়ে দিঘলিয়ার চাহিদা পুরণ করেও আশপাশের মানুষের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব কিন্তু খেজুরগাছ তোলা লোক বা গাছির দেখা মিলানো কষ্ট। দিঘলিয়ার ফরমাইশখানার ইউসুফ মোল্লা এ প্রতিবেদককে জানান, আগে খেজুরগাছও ছিল গাছিও ছিল। শূণ্যে দাঁড়িয়ে খেজুরগাছ পরিষ্কার করা ও রস বের করা খুবই কষ্টের কাজ। দিঘলিয়ায় অনেক গাছি ছিল। তাঁদের কেউবা মারা গেছে কেউবা গাছ তোলা ছেড়ে দিয়েছে। আমি আমাদের নিজের এলাকার কিছু গাছ তুলি নিজের পরিবারের চাহিদা পূরণে। এলাকার পাচু শেখ ছিল যিনি পালাক্রমে অনেক গাছ কাটত। তিনি মারা যাওয়ার পর আর কেউ এভাবে বানিজ্যিকভাবে গাছ কাটেন। দিঘলিয়ার ফরমাইশখানা নিবাসী সবুজ মোল্লা এ প্রতিবেদককে জানান, এ গ্রামের আজিজ মিয়া পালাক্রমে অনেক খেজুরগাছ কাটত। এখন খেজুরগাছ তোলা বা কাটা ছেড়ে দিয়েছে। আমি অন্যান্য বছর আমাদের নিজেদের কিছু খেজুরগাছ তুলতাম নিজেদের চাহিদা পূরণের জন্য। এ বছর আর কোনো খেজুরগাছ কাটবনা। কারণ হিসেবে তিনি জানান, এলাকার যুব সমাজ খুব খারাপ হয়ে গেছে। কষ্টকরে গাছ কেটে কলস খুলিয়ে রেখে আসি। রাতে তারা চুরি করে নিয়ে যায়।