প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় সুপার সাইক্লোন সিড়রের ১৪তম দিবস আজ। ২০০৭ সালের এই দিনে সিডরের আঘাতে পূর্ব সুন্দরবনসহ শরণখোলার জনপদ মূহুর্তের মধ্যে লন্ডভন্ড হয়ে যায়। পরিণত হয় মৃত্যুপুরীতে। গণ কবর দেয়া হয় রাস্তার পাশে। কোটি কোটি টাকার সম্পদ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। প্রায় আশি ভাগ পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়ে। ভয়াল এ দিনের কথা স্মরণ করতে গেলে আজও আৎকে ওঠে অনেকে। প্রিয়জন হারা অনেকেই এখনো এই দিন এলে বুকফাটা কান্নায় ভেঙে পড়েন। সিডরের ক্ষতচিহ্ন বহন করে চলেছেন অনেকে। প্রত্যন্ত জনপদে এখনো স্বজন হারা মানুষের বিলাপ শোনা যায়। বিগম ৫০ বছরে নভেম্বর মাসেই আঘাত হানে ১০ টি বড় ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাস।
১৫ নভেম্বর সকালে ঘোষণা হয় ‘সিডর’ নামের ঘূর্ণিঝড়টি ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে বাংলাদেশের উপকূলে। দুপুর নাগাদ তা বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করবে। ‘১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত। মুহূর্তে উপকূলের মানুষ যেন আরো মহা বিপদের মুখোমুখি হয়ে যায়। আতঙ্কিত হয়ে পড়ে তারা। দমকা হাওয়া বইতে থাকে। সঙ্গে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। কিছু মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে পারলেও বেশির ভাগ মানুষ থেকে যায় নিজ বাড়িতে। রাত ১০ টার দিকে প্রবল বাতাসের সঙ্গে যুক্ত হয় জলোচ্ছ্াস।
রাত ১০টার পরই মূলত ঘূর্নিঝড় সুপার সাইক্লোন সিডরের আঘাতে বাগেরহাট, পিরোজপুর, সাতক্ষীরা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, লক্ষ্মীপুর ও সুন্দরবনসহ উপকুলীয় এলাকা বিদ্ধস্থ হয়। নিমেষেই যেন উড়ে গেল ঘর-বাড়ি, গাছ-পালা। জলোচ্ছ্াসে ভেসে যায় হাজার হাজার মানুষ। এ সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ২২০ থেকে ২৫০ কিলোমিটার। ঝড়ের ব্যাসার্ধ ছিল ৭৪ কিলোমিটার। পরের দিন চারদিকে শুধুই ধ্বংসলীলা। উদ্ধার হল লাশের পর লাশ। দাফনের জায়গা নেই, রাস্তার পাশে গণকবর করে চাপা দেওয়া হল বহু লাশের। স্বজন সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেল উপকূল এলাকার কয়েক লাখ মানুষ।
জানা যায়, এ সিডরে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল দেশের ৩০টি জেলা। ঝড়ে প্রায় ৫ হাজারের অধিক মানুষ মারা যায়। দক্ষিণের উপকূলীয় জেলাগুলো পরিণত হয়েছিল মৃত্যুপুরীতে। সরকারি হিসেবে সিডরে ৩৩৪৭ জন মানুষ নিহত, ৫৫২৮২ জন আহত ও ৮৭১ জন নিখোঁজ হয়। গবাদী পশু মারা যায় ১৭ লাখ ৮৭ হাজার ৫০৭টি। ৩০টি জেলা ক্ষতিগ্রস্থ হয়, এর মধ্যে ১২ টি জেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ২০০টি উপজেলার ১৯৫০টি ইউনিয়নের প্রায় ২১ লাখ পরিবারের ৮৯ লাখ ২৩ হাজার ২৫৯ জন মানুষ, ১৬৯৬১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ২৮ লাখ ৭২ হাজার হেক্টর জমির ফসল, ১৫ লাখ ১৮ হাজার ৯৪২টি বাড়ি, ৮০৭৫ কিলোমিটার সড়ক এবং ৩৫৬২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হয়।