সমাজের দুষ্টক্ষত কিশোর গ্যাংয়ের কারণে নাগরিক জীবনে এক অসস্থি বিরাজ করছে। মারামারি খুনোখুনি করে তারা সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট করছে। আন্তর্জাতিক মানদ- অনুযায়ী ১২ থেকে ১৭ বছর পর্যন্ত কিশোর ধরা হয়। জীবনের এ সময়টি একজন মানুষের ভবিষ্যৎ জীবন যুদ্ধের সফল সৈনিক হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার সময়। লেখাপড়া, খেলাধুলা, শিল্প-সাহিত্যে নিজেদের যুক্ত করে নিজের সুকুমার বৃত্তির বিকাশ ঘটানোই ওই বয়সের মূল কাজ। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে, তারা অস্ত্র হাতে মারামারি করে নিজেদের হাত রক্তে রাঙ্গিয়ে তুলছে। মূলত খারাপ সঙ্গ ও সমাজ ব্যবস্থার কারণে কিশোররা অপরাধে যুক্ত হচ্ছে।
অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হাতে বিনা বিচারে ক্রসফায়ারে অনেক অভিযুক্ত আসামি মৃত্যু বরণ করছে। অথচ আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, অধিকাংশ ক্রসফায়ারের ঘটনা প্রায় একই। সে কারণে সচেতন সমাজ ক্রস ফায়ারের খবরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কারণ সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করেন। ইন-কাউন্টারের বিরুদ্ধের ক্রমান্বয়ে জনমত গড়ে উঠলেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তা করে যাচ্ছে তাদের খেয়াল খুশি মতো। এমন পরিস্থিতিতে শিল্প প্রতিমন্ত্রী ঢাকা-১৫ আসনের সাংসদ কামাল আহমেদ মজুমদার ক্রসফায়ারের পক্ষে মত প্রকাশ করলেন মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ আয়োজিত কিশোর অপরাধ নির্মূলে জনসচেতনতামূলক অনুষ্ঠানে। গত ১৩ নভেম্বর এ অনুষ্ঠান রূপনগরে স্কুল ও কলেজ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়।
কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, ‘অনেক সময় বিরোধী দলের নেতারা বলেন, আমরা ক্রসফায়ার নিয়ে মানুষ হত্যা করছি। আমি ক্রসফায়ারে পক্ষে। এইজন্য পক্ষে, একজন সন্ত্রাসীর কারণে লাখ লাখ মানুষের ঘুম যেখানে হারাম হয়ে যায়, সেই সন্ত্রাসীর সমাজে বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই।’ কিন্তু সভ্য দুনিয়ায় ক্রসফায়ার খুবই নিন্দনীয়। বিনা বিচারে মানুষ হত্যা বেআইনি। একজন অপরাধ করলে আইনের আওতায় তার বিচার করে শাস্তি নিশ্চিত করাই নিয়ম। সেখানে একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি হিসেবে ক্রস ফায়ারের পক্ষে মত প্রকাশ কতটা যুক্তিযুক্ত তা ভাববার বিষয়। তবে ওই অনুষ্ঠানে তিনি একটি সত্য উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যারা সমাজে নেতৃত্ব দেই, যারা রাজনীতি করি, আমরা যারা মন্ত্রী, সাংসদ ও কাউন্সিলর আমরাই কিশোর গ্যাং লালন পালন করছি। আমাদের কারণেই কিশোর গ্যাং জন্ম হচ্ছে। ক্ষমতা বাড়াবার জন্য আমরা কিশোর অপরাধীদের ব্যবহার করছি।
গত এক বছরের রাজধানীতে অনেক কিশোর গ্যাং সৃষ্টি হয়েছে। এ পর্যন্ত বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ২৭৪ কিশোরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের ৪০ জনকে তাদের অভিভাবকের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকিদের সংশোধন কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে সচেতন না হলে কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে না। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের ব্যাপারে সচেতন হবেন, সমাজের নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিরা নিজ নিজ এলাকার কিশোররা কোথায় কি করছে, সেিেদক দৃষ্টি দেবেন, সর্বোপরি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর পদক্ষেপ থাকবে, যাতে কেউ অপরাধ কাজে জড়াতে না পারে। আগামী প্রজন্মকে একটি সুস্থ ও বিবেকবান সমাজ উপহার দেয়ার জন্য আমাদের সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই।