নেত্রকোণার কলমাকান্দা উপজেলার নয়ন মিয়া (৩৪) নামের এক প্রাইভেট কার চালকের লাশ দাফনের তিন মাস ২৪ দিন পর কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। প্রাথমিক ধারণা ওই চালককে নারী কেলেঙ্কারির ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য পরিকল্পিতভাবে অন্য গাড়ী দিয়ে পিছনে ধাক্কা দিয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার (১৫ নভেম্বর) বিকালে কলমাকান্দা উপজেলার খারনই ইউনিয়নের মেদিরকান্দা গ্রামের সার্বজনীন কবরস্থানে থেকে লাশটি উত্তোলন করা হয়।
এ সময় কলমাকান্দা উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অমিত রায়, কলমাকান্দা থানার ওসি (তদন্ত) হাবিবুল্লাহ্ খান, ওই মামলা তদন্তকারি কর্মকর্তা উপ- পরিদর্শক (এস,আই) সেকান্দর আলীসহ পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
কলমাকান্দা থানার ওসি (তদন্ত) হাবিবুল্লাহ্ খান বলেন, মুন্সিগঞ্জ জেলা আদালতের নির্দেশে গজারিয়া থানায় এই হত্যা মামলা করা হয়েছে এবং সোমবার নয়ন মিয়ার লাশ উত্তোলন করা হয়। উত্তোলনের পর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
নিহত নয়ন মিয়া কলমাকান্দা উপজেলার খারনই ইউনিয়নের মেদিরকান্দা গ্রামের মৃত আবদুল হেকিমের পুত্র। সে পেশায় একজন গাড়ির চালক। ঢাকার গুলশানের কালাচাঁদপুর নামক এলাকায় স্ত্রীসহ ৪ কন্যাসন্তান নিয়ে বসবাস করতেন।
এর আগে নিহতের স্ত্রী নিলুফা (৩৪) গত ১৯ আগস্ট মুন্সিগঞ্জ জেলার বিজ্ঞ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দুই জনের নাম উল্লেখসহ একটি পিটিশন মামলা করেন। পরে ৮ অক্টোবর আদালতের বিচারক আমলে নেন ও পিটিশনটিকে মামলা হিসেবে নথি করার এবং গজারিয়া থানা পুলিশকে নিহতের মরদেহ উত্তোলনসহ প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন।
পিটিশন ও নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত ২১ জুলাই দিবাগত রাতে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক রাজিব চৌধুরী ওরফে রকি তার বন্ধু নোমান, লিজা ও জারাসহ কয়েকজন বন্ধুদের সাথে কুমিল্লা শহরের উদ্দেশ্য রওয়ানা দেন। ওইদিনই রাতে কুমিল্লার একটি উইন ওয়ান হোটেলে বিশ্রাম শেষে ওখান থেকে লিজা ও জারা নামের দুই নারীদের নিয়ে (ঢাকা মেট্রো নং - গ ৩৪৫৪৬০) প্রাইভেটকার যোগে ঢাকার উদ্দেশ্য রওয়ানা হন। অপরদিকে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক রাজিব চৌধুরী ওরফে রকি তার বন্ধু নোমানসহ অন্যান্যের সাথে নিয়ে অপর গাড়ির চালক আশরাফ নিয়ে কুমিল্লা শহরের দিকে রওয়ানা হন।
মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া থানার আলীপুরা নামকস্থানে পৌঁছলে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই নারীসহ গাড়ির চালক নয়ন নিহত হন। পরে কোরবানি ঈদের পরের দিন ২৩ আগস্ট সকাল নিহতে নেত্রকোণার কলমাকান্দায় নিজ গ্রামে নয়নের লাশ দাফন করা হয়।
এ ঘটনায় ঢাকার গুলশানের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক রাজিব চৌধুরী ওরফে রকি (৩৬) ও তার স্ত্রী খালেদা ইয়াছমিন পুশন (২৮) সহ অজ্ঞাত অভিযুক্ত করে নিহত নয়ন মিয়া মুন্সিগঞ্জ জেলার বিজ্ঞ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন।
নিহত নয়ন মিয়ার স্ত্রী নিলুফা কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ঢাকার গুলশানের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক রাজিব চৌধুরী ওরফে রকি এর ব্যক্তিগত গাড়ীর চালাতেন। আমি আমার স্বামীর কাছে শুনেছি, জেনেছি রকি সাহেব অনেক বান্ধবীদের সাথে গভীর সম্পর্ক আছে। ঘটনার দিন আমার স্বামীর খালাতো ভাই করিমের মাধ্যমে জানতে পারি যে, মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া থানার আলীপুরা নামকস্থানে পৌঁছলে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই নারিসহ গাড়ির চালক নয়ন নিহত হন। নানান কথা শুনে সন্দেহ রকি সাহেবের নারি কেলেঙ্কারির ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য পরিকল্পিতভাবে অন্য গাড়ী দিয়ে পিছনে ধাক্কা দিয়ে হত্যা করেছে বলে আমার ধারণা। এখনও পর্যন্ত পুলিশ আসামীদের গ্রেফতার করতে পারেনি। আমি এ হত্যার বিচার চাই। তিনি বলেন, আমার চার মেয়ে। ওদের নিয়ে কি ভাবে বাঁচবো?
মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া থানার ওই মামলা তদন্তকারি কর্মকর্তা উপ- পরিদর্শক (এস, আই) সেকান্দর আলী জানতে তিনি প্রতিনিধিকে বলেন, আদালতের নির্দেশে প্রায় ৪ মাস পর নেত্রকোণার কলমাকান্দার মেদিরকান্দা গ্রামের সার্বজনীন কবরস্থানে থেকে লাশ নয়ন মিয়ার লাশ উত্তোলন করা হয়। উত্তোলনের পর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেলেই মৃত্যুর প্রকৃত রহস্য জানা যাবে। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।