ভৈরবে গত একমাস যাবৎ প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধের সংকট দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি ঠান্ডা জনিত রোগ সর্দি-কাশি ও জ¦রসহ শীতকালীন অন্যান্য বিভিন্ন রোগের ওষুধ সংকটে পড়েছে নগরবাসীসহ গ্রামগঞ্জের বাসিন্দারা। এই সুযোগে গ্রাম ও ইউনিয়ন পর্যায়ের ফার্মেসী গুলোতে কিছু ওষুধ থাকলেও চড়া দামে বিক্রি করছে গ্রাম-গঞ্জের ছোটবড় ফার্মেসী মালিকরা। এছাড়াও পৌর শহরসহ ইউনিয়ন পর্যায়ের কোনো ফার্মেসীতেই মিলছে না এজিথ্রোমাইসিন, সিফিজিম ও সিপ্রোফ্লক্যাসিন জাতীয় কোন ঔষধ। এমনকি পাইকারী ও খুচরা ঔষধের দোকানেও এসব ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না।
গত এক সপ্তাহ সরজমিনে পৌরসভা ও সাত ইউনিয়নের বিভিন্ন ফার্মেসী ঘুরে জানাযায়, ভৈরবে গত একমাস ধরে জ¦র, সর্দি, কাশির রোগীরা প্যারাসিটামল, কাশির সিরাপ, জাতীয় ওষুধ সংকটে পড়েছে। ঔষধের দোকান বা ফার্মিসীতে গিয়ে এ জাতীয় ওষুধ মিলছে না রোগীদের। ওষুধ সংকট দেখা দেওয়ায় বিপাকে রোগী ও স্বজনরা। ভৈরবের বিভিন্ন গ্রাম ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা ঔষধের দোকান ও ফার্মেসীতে চড়া দামে বিক্রি করছে এই জাতীয় ঔষধ। বিপাকে পড়ে বাধ্য হয়ে ক্রয় করছে ক্রেতা ও ভূক্তভোগীরা। একটি প্যারাসিটামল খুচরা মূল্য ৮০পয়সা হলেও দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে ২ /৩ টাকা ,কাশির সিরাপ নির্ধারিত মূল্য ২০ টাকা হলেও দাম বাড়িয়ে ৪০/৬০ টাকা দরে বিক্রি করছে।
ভৈরব পৌর শহরের বাজার ও বাস ষ্ট্যান্ড এলাকায় ফার্মেসী আছে প্রায় দুই শতাধীক। এসব ফার্মেসীতে ঘুরে কথা হয় শীতকালীন ঠান্ডা-কাশিসহ বিভিন্ন রোগের ওষুধ কিনতে আসা ক্রেতাদের সাথে।
তাদের মাঝে একজন চাকুরীজীবি আমিনুল ইসলাম জানান, শিশু সন্তানের জন্য এজিথ্রোমাইসিন জাতীয় সিরাপ কিনতে এসে অন্তত ৫টি ফার্মেসী ঘুরেও মেলেনী কাঙ্খিত ঔষধ।
সাবিহা মাহবুব নামে অপর এক নারীর বক্তব্য একই। তিনি জানান, ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন হাতে নিয়ে দুইদিন এসেছেন ওষুধ কিনতে। প্রেসক্রিপশনের কিছু ওষুধ মিললেও অনেক ঔষধই পাওয়া যাচ্ছে না ফার্মেসী গুলোতে। এভাবে কাঙ্খিত ওষুধ না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন অনেকেই। পাশাপাশি উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের বিভিন্ন ফার্মেসী ঘুরে ভোগান্তীর ভীন্নতা পাওয়া গেছে। প্রয়োজনীয় ওষুধ সংকটের সুযোগ নিয়ে মজুদকৃত ওষুধ চড়া মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।
উপজেলার জাফরনগর এলাকার বাসিন্দা হুমায়ুন কবির জানান, একপাতা নাপা ট্যাবলেট শহর থেকে কিনেছিলাম ১০টাকায়। কিন্তু নিজের এলাকার গ্রাম থেকে কিনতে হয়েছে ৩০টাকায়। অথচ তথ্য অনুযায়ী প্রতি পিস নাপা ট্যাবলেটের দাম আশি পয়সা, ১০টি ট্যাবলেটের প্রতি পাতার মূল্য দাড়ায় মাত্র ৮টাকা। এভাবে উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের শতাধীক ফার্মেসীতে গ্রাম-গঞ্জের সাধারন মানুষদের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে বর্তমানে নাপাসহ প্যারাসিটামল জাতীয় সবধরনের ওষুধ চড়া মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে।
তবে জ¦র, সর্দি, কাশির ঔষধসহ এজিথ্রোমাইসিন, সিফিজিম, সিপ্রোফ্লক্যাসিন ও প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধের সংকটের কথা স্বীকার করেছে ওষুধ ব্যবসায়ী নেতারা।
স্থানীয় ফার্মেসীর মালিকরা জানান, স্থানীয় ডির্পো থেকে অনেক দিন যাবৎ এই জাতীয় ওষুধ সাপ্লাই কমিয়ে দিয়েছে এবং বন্ধ রয়েছে।
ভৈরব বাংলাদেশ কেমিস্ট এ- ড্যাগিস্ট সমিতি, ভৈরব শাখার, সিনিয়র সহ-সভাপতি ও ওষুধ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক, আলহাজ¦ আক্রাম হোসেন ওষুধ সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই জাতীয় সরবরাহ না থাকায় ওষুধ সংকট দেখা দেয়, কবে নাগাদ এর সুফল মিলবে তা অনিশ্চিত।
বাংলাদেশ কেমিস্ট এ- ড্যাগিস্ট সমিতির সভাপতি ও ভৈরব ওষুধ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি চন্দন কুমার পাল বলেন, প্যারাসিটামল, এজিয়োমাইসিন, সিফিজিম ও সিপ্রোফ্লক্যাসিন জাতীয় ওষুধ সংকট দীর্ঘ দিন ধরে। আমরা ক্রেতা ও রোগীদেরকে এইসব জাতীয় ওষুধ দিয়ে সেবা করতে পারছি না। ওষুধ কোম্পানি ও সরকারের কাছে অনুরোধ অতিদ্রুত এই জাতীয় সরবরাহ করার জন্য।
কিশোরগঞ্জ জেলা ওষুধ প্রশাসনের ওষুধ পরিদর্শক তাহমিদ জামিল বলেন, ঔষধের দাম বাড়িয়ে রাখা মারাত্মক অপরাধ। যদি এইরকম কোন অভিযোগ পাওয়া যায়, তাহলে অব্যশই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।