শিক্ষকতা, সাংবাদিকতা, সামাজিক কাজের অধিকাংশ সময় ব্যস্ত থাকার পরও তিনি সময় পেলেই ছুটে যান বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। শিক্ষার্থীদের প্রতিদিনের এ্যাসেম্বলী (সমাবেশ) দেখেন, জাতীয় সংগীত শুদ্ধ করে শেখানোর চেষ্টা করেন। সাথে করে নিয়ে যান তাঁর নিজের শুদ্ধ জাতীয় সংগীতের উপর লেখা ফিচার। সেই ফিচার বিলি করেন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মাঝে। তিনি আদমদীঘি উপজেলা কলেজ শিক্ষক সমিতির আহবায়ক।
এই অবিরাম ছুটে চলা, সৎ, অসম্ভব তেজস্বী, ব্যক্তির নাম রবিউল ইসলাম রবীন। শুদ্ধ সুরে জাতীয় সংগীত শেখানো এই শিক্ষকের স্বপ্ন ও নেশা। প্রাথমিক, উচ্চবিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় সমাবেশ শুরু হতেই তিনি পৌঁছে যান বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। শিক্ষার্থীদের সঠিক স্বরলিপি, সুর ও কথায় গেয়ে শেখান আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি। আমাদের জাতীয় সংগীত। সম্ভান্ত পরিবারে জন্ম নেওয়া রবিউলের প্রবল ইচ্ছে দেশের ৫,০০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে শুদ্ধ সুরে জাতীয় সংগীত গাওয়ার তালিম দেওয়ার। কিন্তু নানা ব্যস্ততা, চাকুরি আর নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা না থাকায় পেরে উঠছেন না তিনি। তাছাড়া করোনার কারণে বর্তমানে স্কুল খোলা থাকলেও সমাবেশ হচ্ছে না। এর পরও ৫৬ বছর ছুঁই ছুঁই এই ব্যাতিক্রম ধর্মী, মানুষটি কখনো পায়ে হেটে, কখনো ভ্যানে চড়ে, কখনো বাসে চড়ে গত দশ বছর ধরে এই মহৎ কাজটি করে চলেছেন। শুদ্ধ সংগীতের এই ফেরিওয়ালা এ পযর্ন্ত টাঙ্গাইলের ভারতেশ্বরী হোমস, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এ- কলেজ, উদয়ন স্কুল, বগুড়ার টিএমএসএস স্কুল এ- কলেজ, দেশসেরা শ্রেষ্ট্র শিক্ষা প্রতিষ্টানের পুরস্কার প্রাপ্ত বগুড়ার দুপচাঁািচয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নিজ উপজেলার প্রায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ ১১৯ টি শিক্ষা প্রতিষ্টানে গিয়ে দৈনিক সমাবেশ দেখেছেন এবং শুদ্ধ সংগীত প্রচার করেছেন। তার তালিম পেয়ে খুশি এলাকার শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ অনেকেই। বর্তমানে তিনি ব্যক্তি গত জীবনে তিনি সান্তাহার বীর বিক্রম শহীদ লেঃ আহসানুল হক ডিগ্রী কলেজের সহকারী অধ্যাপক। সান্তাহার নাগরিক কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ও সান্তাহার প্রেস ক্লাবের সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক। দুই সন্তানের জনক এই সৎ, প্রতিবাদী মানুষটির স্ত্রী স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। সান্তাহার ইউনিয়নের দমদমা গ্রামের সন্তান তিনি। তাঁর দুটি কন্যা সন্তান আছে।
এ বিষয়ে সান্তাহার নাগরিক কমিটির সভাপতি সাবেক অধ্যক্ষ মোসলেম উদ্দীন বলেন, তিনি বহুমুখি প্রতিভার অধিকারী। শিক্ষকতা ও সাংবাদিকতার পাশপাশি তিনি যে শুদ্ধ জাতীয় সংগীত প্রচার করছেন, এক কথায় অসাধারন। তার পথচলা সুন্দর হোক, স্বাথর্ক হোক এই কামনা করি। আদমদীঘি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ¦ সিরাজুল ইসলাম খান রাজু বলেন, রবিউল ইসলাম আমাদের উপজেলার গৌরব। জাতীয় সংগীত শুদ্ধ ভাবে গাওয়ার বিষয়ে তিনি যে কাজটি করছেন তা অসাধারন। আমি ব্যক্তিগত ভাবে তাঁকে চিনি। আমি তাঁর সাফল্য কামনা করি। মুঠোফোনে সাংবাদিক রবিউল ইসলাম রবীন বলেন, ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া আমাদের জাতীয় সংগীত। যখন কোথাও অশুদ্ধ ভাবে জাতীয় সংগীত গাইতে দেখি, মনে কষ্ঠ পাই। তাই শুদ্ধ ভাবে জাতীয় সংগীত চর্চার কাজ করছি। চাকরি করার পাশাপাশি এই কাজটি করতে পেরে আমি ধন্য। আমার স্বপ্ন পাঁচ হাজার স্কুলে গিয়ে আমি শুদ্ধ ভাবে জাতীয় সংগীত চর্চার তালিম দেব।