মণিরামপুর ১৬ ইউপিতে নির্বাচন ২৮ নভেম্বর। ভোট নিয়ে ঝড় চলছে চায়ের কাপ থেকে শুরু করে অফিস পাড়া পর্যন্ত। হিসাব মিলাচ্ছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষ। তবে শংঙ্কা আর উৎকণ্ঠা নিয়েই সাধারণ মানুষের পার হচ্ছে প্রতিটা দিন। হামলা, মামলা-ভাংচুর তো আছেই। তবে এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বি হচ্ছেন দলের বিদ্রোহীরা। এসব বিদ্রোহী প্রার্থীদের সম্প্রতি দল থেকে বহিস্কারও করা হয়েছে। তারপরও যে যার অবস্থানে অনড় রয়েছেন। আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক থেকে আসা স্বতন্ত্র/বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে চেয়ারম্যান পদে ১৫টি ইউনিয়নে লড়ছেন ৭৫ জন। তবে সাধারণ ভোটাররা বলছেন, ভোটে যেই জিতুক না কেন অবাধ সুষ্ঠু এবং সংঘাত ছাড়াই নির্বাচন সম্পন্ন হোক। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কেউ যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয় এমনটি চাওয়া সাধারণ ভোটারদের। উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নে সাধারণ ভোটারদের সাথে কথা বলে এমনটি মিলেছে।
রোহিতা: এই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হাফিজ উদ্দীন। বর্তমান চেয়ারম্যান আনছার আলী সরদার, মিজানুর রহমান, হাফিজুর রহমান, এস এম আতিয়ার রহমান, সাইফুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ও আবদুর রাজ্জাক। হাফিজ উদ্দীন ছাড়া অন্য প্রার্থীরা হচ্ছেন সকলেই স্বতন্ত্র। এর মধ্যে আনছার আলীকে বিদ্রোহী হিসেবে বলা হচ্ছে। মিজানুর রহমান সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা। বর্তমানে হাফিজ উদ্দীন, আনছার আলী সরদার এবং মিজানুর রহমান এ তিনজনকে নিয়েই হিসেব কষছেন ইউনিয়নবাসী। এলাকার সাধারণ ভোটারদের ভাষায় এই ইউনিয়নে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ত্রিমূখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখছেন।
কাশিমনগর: নৌকা প্রতীকের প্রার্থী তৌহিদুর রহমান। এ ছাড়া ইয়াকুব আলী, খোরশেদ আলম, মিজানুর রহমান ও আশরাফুল আলম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন। গত নির্বাচনেও এই ইউনিয়ন থেকে বিএনপির আহাদ আলী নির্বাচিত হয়েছিলেন। বর্তমানে বিএনপির আরেক নেতা ইয়াকুব আলী নির্বাচনে অলোচনায় চলে এসেছেন। এলাকার ভোটাররা ভাবছেন এই ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী তৌহিদুর রহমানের সাথে বিএনপি নেতা ইয়াকুব আলীর প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাবনা ভাবছেন এলাকার ভোটাররা।
ভোজগাতী: নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আসমা তুন্নাহার। বর্তমান চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক, শহিদুল ইসলাম দলের বিদ্রোহী প্রার্থী। এ ছাড়া আসাদুজ্জামান নামে আরও একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন। এলাকায় নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা জমে উঠেছে। নৌকা প্রতীক প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বর্তমান চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক এবং শহিদুল ইসলাম মোড়ল। এলাকার সাধারণ ভোটাররা মনে করছেন বিদ্রোহী দু’প্রার্থীর সাথেই নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হাড্ডা-হাড্ডি লড়াই হবে।
ঢাকুরিয়া: আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান এরশাদ আলী সরদার। এছাড়াও বিদ্রোহী প্রার্থী আয়ুব আলী গাজী, স্বতন্ত্র প্রার্থী মোশাররফ হোসেন ও হাফিজুর রহমান নির্বাচনী মাঠে আদায় জল খেয়ে লেগেছেন। তবে এলাকার ভোটাররা ভাবছেন আবারও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এরশাদ আলী সরদার বিজয়ী হতে পারেন।
হরিদাসকাটি: বিপদ ভঞ্জন পাড়ে এ ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী। তিনি বর্তমানেও চেয়ারম্যান রয়েছেন। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আলমগীর কবির লিটন। সম্প্রতি নির্বাচন কাজে গেলে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী কর্মী বাহিনীর হাতুড়ী পিটায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এই ইউনিয়নের সাধারণ ভোটাররা আতংকের মধ্যে কাটাচ্ছেন। বিপদ ভঞ্জন পাড়ে- আলমগীর কবির লিটন ছাড়াও প্রফেসর নিছার আলী, বিএনপি নেতা নবীরুজ্জামান আজাদ ও স্বপন সরকার নামে আরও তিন স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন। তবে এলাকাবাসী ভাবছেন, বর্তমান চেয়ারম্যান বিপদ ভঞ্জন পাড়ে এবং বিদ্রোহী প্রার্থী আলমগীর কবির লিটনের মধ্যে হাড্ডা-হাড্ডি লড়াই হতে পারে।
মণিরামপুর: ইয়াকুব আলী এ ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী। এছাড়াও বিএনপি নেতা নিস্তার ফারুক, জামায়াত নেতা আহসান হাবিব লিটন স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন। গত নির্বাচনেও এ তিন প্রার্থী ভোট যুদ্ধে ছিলেন। সামান্য ভোটের ব্যবধানে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে পরাজিত করে বিএনপি নেতা নিস্তার ফারুক নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে এবারের নির্বাচনে ভিন্নতা ভাবছেন সাধারণ ভোটাররা। তবে ইউনিয়নবাসী বলছেন, তিন প্রার্থীই ত্রিমুখী লড়াইয়ের মুখোমুখি অবস্থান করছেন।
খেদাপাড়া: নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবদুল আলিম জিন্নাহ। এ ছাড়া বিএনপি নেতা শামসুজ্জামান শান্ত, আজিবার রহমান, মাহাবুবুর রহমান নাজিম, মিজানুর রহমান স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। বর্তমান চেয়ারম্যান আবদুল হক আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রাথী। এ ইউনিয়নেও নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সাথে অপর দু প্রার্থী আবদুল হক শামসুজ্জামান শান্তর প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে এমনটি ভাবছেন ইউনিয়নবাসী।
ঝাঁপা: নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান শামসুল হক মন্টু। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী শক্ত প্রার্থী থানা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক স.ম আলাউদ্দীন। এছড়াও জাতীয় পার্টির থেকে সাংবাদিক রুহুল কুদ্দুস, স্বতন্ত্র প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম ও নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। এই ইউনিয়নে নৌকার প্রতীকের প্রার্থী শামসুল হক মন্টু প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী যুবলীগ নেতা স.ম আলাউদ্দীন, এমনটি দাবী করছেন এলাকার সাধারণ ভোটাররা।
মশ্বিমনগর: বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল হোসেন নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। এছাড়াও বিএনপি নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল গফুর, জামায়াত নেতা সেলিম জাহাঙ্গীর, ইয়ামিন হোসেন, ইউনুচ আলী স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করছেন। এলাকার ভোটাররা জানিয়েছেন, এই ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সাথে বিএনপি নেতা আবদুল গফুর ও জামায়াত নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী সেলিম জাহাঙ্গীরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন।
চালুয়াহাটী: নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবুল ইসলামসহ পাঁচজন প্রার্থী নির্বাচনে নেমেছেন। বর্তমান চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুল হামিদ সরদার, বিএনপি নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান বজলুর রহমান, রবিউল ইসলাম ও মেহেদী হাসান স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। এই ইউনিয়নে সাবেক দুই চেয়ারম্যানের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে এমনটি ভাবছেন ভোটাররা।
খানপুর: আবুল কালাম আজাদ মিলন নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোটের মাঠে নেমেছেন। সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম, বিএনপি নেতা এ্যাড. মুজিবুর রহমান, রবিউল ইসলাম, আবদুল মান্নান ও লাভলু আক্তার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। এই ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের সাথে সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম এবং বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আবদুল মান্নানের মধ্যে ভোটের লড়াই হতে পারে এমনটাই ভাবছেন ভোটাররা।
শ্যামকুড়: এই ইউনিয়নে প্রতিদ্বন্দ্বি না থাকায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আলমগীর হোসেন বিজয়ের ঘোষনার অপেক্ষায় রয়েছেন। তবে এই ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সংরক্ষিত সদস্য এবং সাধারণ সদস্য পদের প্রার্থীদের নিয়ে।
নেহালপুর: আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী এম এম ফারুক হুসাইন’সহ চারজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বর্তমান চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা নজমুস শাহদৎ, মনোয়ার হোসেন ও আনিসুল ইসলাম স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করছেন। এ ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সাথে বিএনপি নেতা বর্তমান চেয়ারম্যান নজমুস শাহদৎ মধ্যে ভোটের লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখছেন।
দূর্বাডাঙ্গা: বর্তমান চেয়ারম্যান মাযহারুল ইসলাম নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোট যুদ্ধে নেমেছেন। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মাসুদ পারভেজ, বিএনপি নেতা আলতাফ হোসেন, আতাউর রহমান লাভলু ও নজরুল ইসলাম স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী মাযহারুল আনোয়ারের সাথে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মাসুদ পারভেজ এবং বিএনপি নেতা আলতাফ হোসেনের মধ্যে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখছেন। মঙ্গলবার মাসুদ পারভেজের দুটি নির্বাচনী অফিস প্রতিদ্বন্দ্বি এক প্রার্থীর সমর্থিতরা ভাংচুর করায় উত্তেজনা চলছে। পরিস্থিতি এড়াতে ইউনিয়ন টিকে বিশেষ ভাবে প্রশাসন নজর দারীতে রেখেছেন।
কুলটিয়া: বর্তমান চেয়ারম্যান শেখর চন্দ্র রায় আবারও নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোট যুদ্ধে নেমেছেন। এছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ব্যাংকার আদিত্য কুমার, বিএনপি নেতা নাজমুল হক ও তৌহিদ মিজানুর রহমান, মনোহর মন্ডল, জাহিদ হাসান ও প্রভাষ ঘোষ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। তবে এই ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শেখর রায়ের সাথে স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যাংকার আদিত্য কুমারের মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে এমনটি মনে করছেন স্থানীয় ভোটাররা।
মনোহরপুর: বর্তমান চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মাস্টার মশিয়ূর রহমান নৌকা প্রতীক নিয়ে আবারও মাঠে নেমেছেন। এছাড়াও বিএনপি নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান আক্তার ফারুক মিন্টু ও সিরাজুল ইসলাম নামের এক স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। এলাকাবাসী ভাবছেন, বর্তমান চেয়ারম্যান মশিয়ূর রহমানের সাথে সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা আক্তার ফারুক মিন্টুর ভোটের লড়াই হতে পারে। তবে নির্বাচন শংঙ্কা রয়েছেন সাধারণ ভোটাররা।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রভাষ ফারুক হোসেন বলেন, ২৮ নভেম্বর মণিরামপুর উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ নির্বাচনে সংঘাত-সংঘর্ষ ছাড়াই শান্তি পূর্ণ ভাবে মণিরামপুরের সাধারণ মানুষ ভোট প্রদান করতে পারবেন। উপজেলা নির্বাচন অফিসার আবদুর রশিদ বলেন, চেষ্টা করা হচ্ছে নির্বাচনটা অবাধ সুষ্ঠু এবং শান্তি পূর্ণ ভাবে সম্পন্ন করার। এক্ষেত্রে সকল দলের রাজনৈতিক নেতাদেরও আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন রয়েছে।