খুলনার পাইকগাছায় এক প্রভাবশালী আদালতের আদেশ অমান্য করে মৎস ঘেরে বালু ভরাট করছে। সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার গদাইপুর ইউনিয়নের হিতামপুর মৌজায় এসএ ৩৭৮ খতিয়ানের ১৭৭ দাগ সহ বিভিন্ন দাগে ক্রয় ও ডিড মুলে মোট ১২ বিঘা জমিতে ৬ বছর ধরে মৎস লীজঘের করে আসছেন হিতামপুর গ্রামের মাকসুদুর ও তৈয়েবুর নামে দুই ভাই। গত আগষ্ট মাসে হঠাৎ করে মেলেকপুরাইকাটী গ্রামের মৃত অধীর সাধুর ছেলে প্রভাবশালী সমিরন সাধু তৈয়েবুর গংদের মৎস লিজঘেরের মধ্যো হতে মুকুল মোড়ল গং এর নিকট থেকে ৪ বিঘা জমি ক্রয় করেছে বলে তার ক্রয়কৃত জমি ছেড়ে দিতে বলে। তৈয়েবুরগং উপায়ন্ত না পেয়ে থানায় একটা জিডি করে যার নং ৯৪০/২১। পরবর্তীতে ২২ আগষ্ট পাইকগাছা সিনিয়র সহকারী জর্জ আদালতে দেওয়ানী মামলা করেন যার নং ২৫৮/২১ ইং। পরে দু’ভায়ের পিতা আব্দুল হামিদ মোড়ল পাইকগাছা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১০৭ ও ১১৭ ধারায় মামলা করে। মামলা করার পরে ৪ সেপ্টেম্বর ভোরে ভাড়াটিয়া লোকজন নিয়ে ওই প্রভাবশালী তৈয়েবুরের মৎস লিজঘেরের মধ্যো হতে প্রায় ৪ বিঘা জমি দখল করার জন্য বাঁধ দেয়ার চেষ্টা করে। এসময় থানা পুলিশ উপস্থিতে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রনে আনেন। পরদিন ৫ সেপ্টেম্বর সমিরন সাধুর দখলের বিরুদ্ধে মাকসুদুর রহমান এক সাংবাদিক সম্মেলন করেন। এরপর ৮ সেপ্টেম্বর সমিরন সাধুও পাল্টা সাংবাদিক সম্মেলন করে। গত ৯ সেপ্টেম্বর একটি মামলা করে মাকসুদুর রহমান যার নং ৬১৯/২১ ইং। মামলাটি বর্তমানে আদালতের নির্দেশে পিবিআই তদন্ত করছে। পরে আবারো নিষেধাজ্ঞা চেয়ে নির্বাহী আদালতে মামলা করে তৈয়েবুরগং যার নং ২০৭/২১ ইং। মামলাটি বর্তমানে আদালতে চলমান। গত ২৯ অক্টোবর সকালে বিরোধপূর্ণ স্থানে প্রভাবশালী আবারো লোকজন নিয়ে কাজ করলে আব্দুল হামিদ মোড়ল কাজের কারন জানতে গেলে তাকে মেরে রক্তাত্ব জখম করে। আহতকে উদ্ধার করতে যেয়ে তার পুত্র মাকসুদুর রহমানকেও বেদম মারপিট করে হাত ভেঙ্গে দেয়। এঘটনায় সমিরন সাধু বাদী হয়ে আহত তৈয়েবুর গংদের ৪ জনের নামে থানায় মামলা করে। যার নং ২৯১/২১ ইং। একইদিন মাকসুদুর রহমান বাদী হয়ে আদলতে মামলা করেন। আদালত থানাকে সরাসরি এফআইআরের নির্দেশ দেন। যার নং ২৯২/২১ইং। আদালত সমিরন সাধুর নামে মামলা এফআইআরের নির্দেশ দেয়ার পর গত ১০ নভেম্বর পূজা উদযাপন পরিষদের ব্যানারে মানববন্ধন করে উপজেলা পরিষদের সামনে। মানববন্ধন নিয়ে অনেক বিতর্কের জন্ম হয়। তৈয়েবুর গং সহ অনেকে বলেন সমিরন সাধু ব্যক্তি স্বার্থে সংগঠনকে ব্যবহার করেছেন। সমিরন সাধুর করা মামলায় তৈয়েবুরগং আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। তবে সমীরন সাধু ক্ষমতার বলে প্রকাশ্যে চলাফেরা করছে বলে মুকুলগং অভিযোগ। গত ৪ নভেম্বর সিনিয়র সহকারী জর্জ আদালত এক আদেশে বলেন নালিশী দরখাস্থ চুড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নালিশী জমির দখল ভিত্তিক স্থিতি অবস্থা বজায় রাখতে উভয় পক্ষকে নির্দেশ দেয়া হলো। তবে আদালতের আদেশ অমান্য করে দখল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিরোধপূর্ণ মৎস ঘেরের জমি দখল করে বালু ভরাট করে নিজের দখলে নেয়ার জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে সমিরন সাধু বিরোধপূর্ণ মৎস লিজঘের গত ১৮ নভেম্বর সকালে কর্গো ভর্তি বালু ফেলে ভরাট করতে থাকে। মো. তৈয়েবুর রহমান বলেন, সমিরন সাধু পাইকগাছা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি হওয়ার কারণে যখন যা ইচ্ছা তাই করে চলেছেন। তার ক্ষমতা ও টাকার কাছে আমরা জিম্মি হয়ে পড়েছি। আমরা তার অত্যাচার থেকে বাঁচতে চাই। মাকসুদুর রহমান বলেন, সমিরণ সাধু নির্বাহী আদালত থেকে যে রায় পেয়েছেন সে রায় গত ১৮ নভেম্বর খুলনা জেলা ও দায়রা জর্জ আদালতের বিচারক স্থগিত করেছেন এবং ৫ ডিসেম্বর পরবর্তীদিন ধার্য্য করেন। সমিরন সাধু বলেন, আমার কেনা জমির সকল কাগজপত্র ঠিক আছে। সেকারনে আমি নির্বাহী আদালত থেকে রায় পেয়েছি সেহেতু আমার জায়গায় বালু ভরাট করছি। থানা ওসি মো. জিয়াউর রহমান বলেন, জমি কার সেটা আদালত বিচার করবেন। আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে কাউকে ছাড় দেয়া হবেনা।