শীত আগমনে যশোরের যশ খেঁজুরের খেঁজুরের রস সংগ্রহের জন্য কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কেশবপুরের গাছিরা। হেমন্তের শুরুতেই তারা রস সংগ্রহের জন্য ঠিলে, খুংগি, দড়া, গাছি দাঁ ও বালিধরাসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ তৈরীর পাশাপাশি মানসিক প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন।
সরেজমিনে জানা গেছে, প্রকৃতিতে শীতের আমেজ শুরু হতেই কেশবপুরের ঐতিহ্য রস ও গুড়ের জন্য খেঁজুরের গাছ পরিষ্কার করা নিয়ে গাছিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। খেঁজুর গুড়ের জন্য যশোরের যে ঐতিহ্য, এর পেছনে কেশবপুরের গাছিদেরও শ্রম রয়েছে। গ্রামীণ জীবনে এসব গাছিদের কাছে শীত আসে ভিন্ন মাত্রা নিয়ে। নানান স্বপ্ন আর প্রত্যাশা নিয়ে তাদের শীতের সময়টা কেটে যায় খেঁজুর গাছের সঙ্গে। দিনের বেশির ভাগ সময় পার করেন এক গাছ থেকে অন্য গাছে উঠা-নামা করে। কিন্তু জলাবদ্ধতার অভিশাপে এ উপজেলায় খেঁজুর গাছের সংখ্যা কমার সঙ্গে সঙ্গে বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে গাছি হওয়ারও আগ্রহ হারাচ্ছে। ফলে এ কাজে উৎসাহিত করতে বিভিন্ন বেসরকারী সংগঠন ও সরকারীভাবে খেঁজুর গাছিদের প্রশিক্ষণ ও বিভিন্ন উপকরণ বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উপজেলার ত্রিমোহিনী, সাগরদাঁড়ী, মজিদপুর, বিদ্যানন্দকাটি, মঙ্গলকোট ও সদর ইউনিয়নে খেঁজুরের রস-গুড় বেশী উৎপাদন হয়।
উপজেলার ত্রিমোহিনী ইউনিয়নের বরণডালি গ্রামের গাছি আকছেদ আলী বলেন, ‘রস সংগ্রহের জন্য সাধারণত কার্তিক মাসে খেজুর গাছ পরিষ্কারের কাজ শুরু করা হয়। অগ্রহায়ণ মাস থেকেই রস পাওয়া যায়। রসের ধারা চলতে থাকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত। শীত যত বেশি পড়বে রস তত বেশি ঝরবে। রসের স্বাদও ততই মিষ্টি হবে। অগ্রহায়ণ, পৌষ ও মাঘ মাস হলো রসের ভরা মৌসুম। অগ্রহায়ণ থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত স্থান ভেদে একটি খেজুর গাছে মাসে ৪০-৪৫ কেজি রস পাওয়া যায়। প্রায় তিন কেজির এক ভাড় (ঠিলে) খেজুর রস ১২০-১৫০ টাকা বিক্রি হয়ে থাকে।
মজিদপুর গ্রামের গাছি আবদুল জব্বার বলেন, ‘খেজুরগাছ অল্প বয়স থেকে রস দেওয়া শুরু করে। একটি খেজুর গাছ থেকে ৩০-৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত রস পাওয়া যায়। তবে গাছ যতই পুরোনো হয় রস দেওয়া ততই কমতে থাকে। তবে পুরোনো গাছ রস কম দিলেও এ গাছের রস খুবই মিষ্টি ও সুস্বাদু হয়। মাঝ বয়সের গাছ থেকে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ রস পাওয়া যায়।’
লক্ষèীনাথকাটি গ্রামের কৃষক সাবেক মেম্বর ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ‘গাছি সংকটের কারণে তাদের এলাকার অধিকাংশ খেঁজুর গাছ থেকে রস আহরণ করা সম্ভব হয় না। মৌসুমের শুরুতেই দেশের বিভিন্ন এলাকায় কেশবপুরের নলেন গুড়ের পাটালি ও প্যাড়া সন্দেশের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এলাকার মানুষ এ সময় খেঁজুর রস খাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়। এজন্য গাছি সংকট কাটাতে নতুন প্রজন্মের মধ্যে এ পেশায় উৎসাহিত করার জন্য কৃষি অফিসের মাধ্যমে সরকারী ভাবে উদ্যোগ নিতে হবে।’
পৌরসভার সাবদিয়া গ্রামের গাছি আনিছুর রহমান বলেন, ‘শীতের শুরুতে রসের দাম অনেক বেশি পাওয়া যায়। শীত এলেই প্রায় প্রত্যেক পরিবারে মেয়ে-জামাইকে রসের পিঠা ও পায়েস খাওয়ানোর জন্য খেজুর রসের কদর বেড়ে যায়। এ সময় গাছিদের সংসার চলে রস বিক্রি করে। এজন্য আগে ভাগে খেজুর গাছ পরিষ্কার করছি।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঋতুরাজ সরকার বলেন, ‘কেশবপুর উপজেলায় প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার খেজুর গাছ রয়েছে। তার মধ্যে শীত মৌসুমে প্রায় ১ লাখ গাছ থেকে রস আহরণ করা হয়ে থাকে। মৌসুমের শুরুতেই স্বাস্থ্য সম্মতভাবে রস সংগ্রহ ও ভেজাল মুক্ত গুড় উৎপাদনে বিভিন্ন সংগঠন গাছিদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে থাকে। পাশাপাশি যশোরের যশ খেজুরের রস এ প্রবাদটি যথার্থ প্রমাণে জন্য রস আহরণে তারা যাতে আরো যতœবান হন সেজন্য গুড়ের ন্যায্য মূল্য পাওয়ার নানান উদ্যোগ নেওয়া হয়ে থাকে।