ঢাল নেই,তলোয়ার নেই নিধিরাম সরদার প্রবাদ বাক্যের বাস্তব উদাহরণ হিসেবে কুড়িগ্রামে পাওয়া গেছে দুজন চেয়ারম্যান প্রার্থী। কর্মী-সমর্থক না থাকলেও ভোটের প্রচারণায় থেমে নেই তারা। কোন প্রকার যানবাহন ছাড়াই হাট-বাজার, চায়ের দোকানসহ বাড়ি-বাড়ি পায়ে হেঁটে ভোট চাচ্ছেন। দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি।
সরজমিনে দেখা যায়, ফুলবাড়ি উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের স্বতন্ত্র এক চেয়ারম্যান প্রার্থী তার স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে একটি হ্যান্ড মাইকে ভোটের প্রচারণা চালাচ্ছেন। ভোটারদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে দুই স্বামী স্ত্রী ভোট চাচ্ছেন এবং প্রতিক সম্বলিত লিফলেট বিতরণ করছেন। উৎসুক ভোটাররাও তাদের এই নির্বাচনী প্রচারণা উপভোগ করছেন। গ্রামের মেঠো পথে হেটে হেটে প্রার্থী মাইকে ঘোষণা করছেন “নিজের ভোট নষ্ট করবেন না-এটা টাকার বিনিময় খেয়ানত করবেন না”। গরিবের দু:খ গরিবই বুঝে। এমন বিভিন্ন কথা বলে ভোট চাচ্ছেন নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু বকর সিদ্দিক। তিনি মোটর সাইকেল প্রতিক নিয়ে প্রতিদ্ব›িদ্ধতা করছেন। সঙ্গে রয়েছেন তার স্ত্রী বিজলী খাতুন। তিনি ইউনিয়নের পশ্চিম ফুলমতি গ্রামের মৃত: কপুর উদ্দিনের ছেলে। এক বোন এবং সাত ভাইয়ের মধ্যে আবু বকর সিদ্দিক চতুর্থ। আবু বকর সিদ্দিক বড় ভাই আইয়ুব আলী প্রতিবন্ধী হওয়ার তার ভরণ পোষন দায়িত্ব পালন করেন তিনি। শুধু ভাই নয় বড় বোন বিউটি বেগম তিন বছর আগে তালাকপ্রাপ্ত হলে তারও ঠাই হয় আবু বকর সিদ্দিকের বাড়ীতে। আবু বকরের দুই ছেলে। বড় ছেলের বয়স ৬ ও ছোট ছেলের বয়স তিন। আবু বকর সিদ্দিক কৃষি কাজের পাশাপাশি পল্লী চিকিৎক। সম্পদ বলে বাড়ী ভিটাসহ তিন বিঘা জমি। দুই বিঘা জমি বন্ধক রেখে ১৩ শতক জমি ক্রয় করেছেন। বর্তমানে স্ত্রী,দুই ছেলে,এক ভাই ও এক বোনসহ ৬ সদ্যসের সংসার। তিনি ১৯৯৬ সালে এসএসসি ও ১৯৯৮সালে এইচএসসি পাশ করেন।
চেয়ারম্যান প্রার্থী আবু বকর সিদ্দিক বলেন, আমি কর্মী-সমর্থক বিশ^াস করি না-ভোটারদের বিশ^াস করি। সেজন্য আমার কোন নেতাকর্মী সমর্থক নেই। তাই স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ভোটারের বাড়ি বাড়ি হেটে প্রচার চালাচ্ছি। ভোটাররা যদি চায় তাহলে আমি বিপুল ভোটে জয়লাভ করবো।
আবু বকরের স্ত্রী বিজলী খাতুন বলেন, কর্মী সমর্থক না থাকলেও শেষ পর্যন্ত আমি আমার স্বামীর পাশে থাকবো। সবাই ভোট দেবার কথা দিছে। আমার বিশ্বাস জনগণ আমার স্বামীকে ভোট দিয়ে জয়লাভ করবে।
নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের ভোটার দুলালী বেগম বলেন, অন্য প্রার্থীরা তাদের কর্মী-সমর্থক নিয়ে ভোট চাবার আসে। কিন্তু ব্যতিক্রম হলো শুধু এই স্বামী-স্ত্রী। তাদের কোন কর্মী-সমর্থক নেই, তারা হেটে হেটে সব জায়গায় গিয়ে ভোট চেয়ে বেড়ায়।
একই চিত্র দেখা যায়,পাশ^বর্র্তী উপজেলা নাগেশে^রীর কেদার ইউনিয়নেও। সেখানে মাষ্টার্স পড়-য়া স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী শফিকুল ইসলাম শফিক চশমা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সে ইউনিয়নের বিষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা কৃষক হারেজ আলীর দুই ছেলে ও এক মেয়ে। এরমধ্যে শফিকুল মেজো। সে নিজেই তার নির্বাচনী পোষ্টার লাগিয়েছেন। লিফলেটসহ কর্মী-সমর্থক ছাড়াই প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন হাট-বাজার, পাড়া-মহল্লা সর্বত্র।
প্রার্থী শফিকুল ইসলাম বলেন, আমার নির্বাচনে আসার উদ্দেশ্য হলো আমার দেখা দেখি শিক্ষিত তরুণ নির্বাচনে অংশ নিক। তারুণ্য নির্ভর বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যেই আমার নির্বাচনে অংশ নেয়া। আমার কোন কর্মী বাহিনী নেই। আমি একাই ভোট চাচ্ছি,পথ সভা করছি। ভোটাররা সেগুলো শুনছে আমাকে আশ^স্ত করছে। তরুণরা এগিয়ে এলে মাদক মুক্ত সমাজ গঠন করা সম্ভব বলে মনে করি।
এই ইউনিয়নের ভোটার মজিবর রহমান বলেন, সকল মেম্বার,চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মী-সমর্থক থাকলেও শুধু আলাদা শফিক। তার কেউ নেই সে নিজে নিজে পোষ্টার লাগাচ্ছে, ভোট চাচ্ছে। বর্তমান সামাজিক অবস্থায় কেউ বিষয়টি ভালো ভাবে নেয় আবার অনেকে বিভিন্ন কথাবার্তাও বলে। দেখা সামনে ভোট মানুষ তাকে কেমন মূল্যায়ন করে।
ফুলবাড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুমন দাস বলেন, এখানে যারা প্রতিদ্ব›িদ্ধতা করছেন তারা নির্দিষ্ট কিছু কর্মী-সমর্থক নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। কিন্তু উপজেলায় ব্যতিক্রম রয়েছে প্রার্থী রয়েছে কর্মী-সমর্থক ছাড়াই প্রার্থী স্বামী-স্ত্রী প্রচারণা চালানোয় উপজেলা জুড়ে চমক সৃষ্টি করেছে। তিনি আরও বলেন, ২৮নভেম্বর ইউপি নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও সুন্দর করতে সকল ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। কোন প্রার্থীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি ভঙ্গের এখন পর্যন্ত মৌখিক বা লিখিত অভিযোগ পাইনি।