বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে পরাজিত হওয়ায় পটুয়াখালীর কলাপাড়ার পূর্ব মধুখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. আখতারুজ্জামানকে পিটিয়ে জখম করেছে নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থীর ছেলে নুর সায়েদ খানের নেতৃত্বে একদল যুবক। মঙ্গলবার বিকালে বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভিবকদের সামনে এ হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় আহত শিক্ষককে স্থানীয়রা উদ্ধার করে রাতে কলাপাড়া হাসপাতালে ভর্তি করে।
এ ঘটনায় রাতেই শিক্ষক আকতারুজ্জামান বাদি হয়ে নয়জনের নামে থানায় এজাহার দাখিল করেছে।
এদিকে স্কুল ক্যাম্পাসে ঢুকে শিক্ষকের উপর বর্বরোচিত হামলার ঘটনায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে বুধবার দুপুরে বিদ্যালয়ের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করেছে বিদ্যালয়ের শিক্ষক, অভিভাবক ও শতশত শিক্ষার্থীরা।
আহত শিক্ষক মো. আখতারুজ্জামান জানান, মঙ্গলবার বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পদে নির্বাচন ছিলো। ওই সময় তিনি বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষার কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন। নির্বাচনে অধ্যক্ষ বশির আহমেদ ৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়। তার প্রতিদ্বন্দ্বী আঃ রাজ্জাক খান পায় তিন ভোট।
নির্বাচন শেশে বিদ্যালয়ের পরীক্ষার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও টাকা নিয়ে অন্য শিক্ষকদের সাথে বাসায় ফেরার পথে পরাজিত প্রার্থীর ছেলে নুর সায়েদ খানের নেতৃত্বে আট- নয় জন অতর্কিতভাবে তার উপর হামলা চালায়। পাইপ ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে তাকে গুরুতর জখম করে। ছিনিয়ে নেয় তার সাথে থাকা পরীক্ষার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও টাকা। এ সময় হামলাকারীরা তাদের অবরুদ্ধ করে রাখে।
এ সময় নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের অ্যাকাডেমিক সুপারভাইজার মনিরুজ্জামান খান কলাপাড়া থানায় ফোন করে ও অন্য শিক্ষকরা ৯৯৯ এ কল করে পুলিশের সহায়তা চাইলে কলাপাড়া থানার এস আই সুজনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আহত শিক্ষককে উদ্ধার করে।
প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের অ্যাকাডেমিক সুপারভাইজার মনিরুজ্জামান খান বলেন, শিক্ষকের উপর হামলার ঘটনায় তাৎক্ষণিক পুলিশের সহায়তা নেয়া হয়েছে এবং আহত শিক্ষককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নির্বাচন শেষে এমন হামলার ঘটনা দুঃখজনক।
এদিকে বুধবার অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা দাবি করেন জরুরী ভিত্তিতে হামলাকারীদের গ্রেফতার করা হোক।
দশম শ্রেনির শিক্ষার্থী ফয়সাল তালুকদার, ইমন হোসেন, মুনিম হোসেন,মিতু মনি ও ইলমা, অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ডালিয়া জানায়, স্কুল ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে তাদের প্রিয় ইংরেজি শিক্ষককে নির্মমভাবে মারধর করা হয়েছে। যা ধিক্কারজনক। তাই দ্রুত হামলাকারীদের গ্রেফতার করা না হলে তারা আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলাম হোসেন জানান, সহকারী প্রধান শিক্ষক নির্বাচনের কোন দায়িত্বে ছিলেন না। কিন্তু তাকে নির্মমভাবে সবার সামনে মারধর করা হয়েছে। তারা শিক্ষা প্রশাসনের সাথে কথা বলে এ ঘটনায় আইনি পদক্ষেপ নিয়েছেন যাতে হামলাকারীরা রক্ষা না পায়।
এ ব্যাপারে কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জসিম জানান, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচনের পর হামলার ঘটনার খবর পেয়েই তাৎক্ষণিক পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি শান্ত ও আহত শিক্ষককে উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় আহত শিক্ষক বাদি হয়ে একটি এজাহার দিয়েছেন। অপর পক্ষও একটি অভিযোগ দিয়েছে। পুলিশ বিষয়টি গুরুত্বদিয়ে তদন্ত করে দেখছে। তবে এ ঘটনায় কেউ গ্রেফতার হয়নি।