বিস্তীর্ণ গারো পাহাড় কেটে দিন দিন গড়ে উঠছে
বসতি, বেদখল হচ্ছে বন বিভাগের ভূমি। অন্যদিকে বিরূপ প্রভাবে সেই গারো
পাহাড়ে এখন বন্যহাতির বিচরণক্ষেত্র বা অভয়ারণ্য না থাকায় ওপার থেকে প্রতি
বছর নেমে আসা বন্যহাতির দল খাবার না পেয়ে পাহাড়ঘেঁষা লোকালয়ে নেমে এসে
সাবাড় করছে কৃষকের কোটি কোটি টাকার আবাদি ফসলসহ গাছপালা। এতে যেন পাল্লা
দিয়েই বাড়ছে হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব। আর এ দ্বন্দ্বে দীর্ঘ প্রায় দুই যুগে
হাতির আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছে স্থানীয় আদিবাসীসহ অন্তত ৫৮ জন। আহত
হয়েছেন আরও ৫ শতাধিক। অন্যদিকে একই সময়ে মানুষের আক্রমণ ও নানা ফাঁদে পড়ে
৩১টি হাতির মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে গত ১০ দিনের ব্যবধানেই শ্রীবরদী ও
নালিতাবাড়ী সীমান্তে ২টি হাতির মৃত্যু হয়েছে। হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে
পাহাড়ের জীববৈচিত্র্য ও প্রাণীরক্ষা। কিন্তু ওই ভয়াবহ অবস্থার দীর্ঘদিন
পরও হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনে গ্রহণ করা হয়নি কার্যকর ও টেকসই
উদ্যোগ।
এদিকে গারো পাহাড়ে হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসন এবং বন্যহাতি হত্যার
প্রতিবাদ, হাতির জন্য অভয়াশ্রম এবং বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষার
দাবিতে মানববন্ধন করেছে নাগরিক সংগঠন জনউদ্যোগ। রোববার ( (২১ নবেম্বর )
দুপুরে জেলা কালেক্টরেট ভবন চত্বরে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা আইইডির
সহযোগিতায় ঘণ্টাব্যাপী ওই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। জনউদ্যোগের আহ্বায়ক
আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন জেলা জাসদের
সভাপতি মনিরুল ইসলাম লিটন, প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মলয় মোহন বল,
সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম আধার, জেলা উদীচী সভাপতি তপন সারওয়ার,
সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মানিক দত্ত, আয়োজক সংগঠনের সদস্য সচিব হাকিম
বাবুল, আইনজীবী আলমগীর কিবরিয়া কামরুল, নারীনেত্রী নীরু শামছুন্নাহার
নীরা, আইরিন পারভীন, আঞ্জুমান লিপি, সদর উপজেলা কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি
সোলায়মান হোসেন প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ১৯৯৫ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত শেরপুরের গারো
পাহাড়ী এলাকায় বন্যহাতির আক্রমণে মানুষ মারা গেছেন ৫৮জন। অন্যদিকে একই
সময়ে মানুষের হাতে ৩১টি হাতির মৃত্যু হয়েছে। তাদের বেশির ভাগের মৃত্যু
হয়েছে বৈদ্যুতিক ফাঁদে, গুলিবিদ্ধ হয়ে নয়তো ধারালো অস্ত্রের আঘাতে।
বক্তারা গারো পাহাড়ে ১০ দিনের ব্যবধানে দুইটি হাতি হত্যার ঘটনায় উদ্বেগ
প্রকাশ করেন এবং বনে হাতিদের অভয়ারণ্য গড়ে তুলে হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব
নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান।
জানা যায়, ভারতের সীমানাঘেঁষা শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলায়
এমন প্রায় ৩০/৩৫টি গ্রাম রয়েছে, যেগুলোর চারপাশ গারো পাহাড় ঘেরা। প্রতি
বছরের ন্যায় এবারও প্রায় একমাস যাবত ভারত থেকে নেমে আসা শতাধিক বন্যহাতি
কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে ওইসব পাহাড়ী জনপদে বিচরণ করছে।
শেরপুরের সহকারী বন সংরক্ষক মোঃ আবু ইউসুফ বলেন, হাতি অত্যন্ত নিরীহ
প্রাণী। আমরা চেষ্টা করছি যাতে হাতির কোন ক্ষতি না হয়। তিনি বলেন, হাতিকে
মেরে ফেললে আমরা কোন ছাড় দেব না। তবে মানুষের জানমালেরও যেন কোন ক্ষতি না
হয়, সেদিকেও সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। ওই বিষয়ে ইতোমধ্যে বেশ কিছু
সচেতনতামূলক ক্যাম্পেন করা হয়েছে। তিনি বলেন, হাতি মানুষের দ্বন্দ্ব
নিরসনে গারো পাহাড়ে অভয়াশ্রম গড়ে তোলার কোন বিকল্প নেই। এজন্য তিনি
প্রশাসনসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা কামনা করেন।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোঃ মোমিনুর রশীদ বলেন, সীমান্তের গারো পাহাড়ে
সম্প্রতি হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি আমাদের উদ্বিগ্ন করে
তুলেছে। আমরা বন্যহাতির হামলায় নিহত, আহত ও ঘরবাড়িসহ ফসল ক্ষতিগ্রস্তদের
মাঝে আর্থিক সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি পাহাড়ে হাতিসহ প্রাণবৈচিত্র্য
রক্ষায় চেষ্টা করছি। তবে স্থায়ী সমাধানে অভয়ারণ্য গড়ে তোলাসহ টেকসই
পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।