পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখান করায় কৌশলে বাসায় নিয়ে যৌণ নিপীড়ণ ও মারধরের স্বীকার এসএসসি পরীক্ষার্থী এখন কলাপাড়া হাসপাতালে যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে। তাকে ধর্ষনের চেস্টায় ব্যর্থ হয়ে তার মাথা ও তলপেটে লাথি ও এলোপাতাড়ি মারধরে সে এখন সোজা হয়ে বসতেও পারছে না। মেয়েকে এমন যন্ত্রনায় ছটফট করতে দেখে হাসপাতালে মেয়ের বেডে বসে চোখের জল ফেলছে মা। বৃহস্পতিবার রাতে হাসপাতালে গিয়ে এ দৃশ্য দেখা যায়। কলাপাড়ার লালুয়া ইউনিয়নের চর চান্দুপাড়া গ্রামের এ ঘটনায় যদিও পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত প্রধান দুই অভিযুক্ত নুর বাহাদুর চৌধুরী(২৫) ও কলেজ ছাত্র সুজন হাওলাদার (২২)কে গ্রেফতার করেছে। কিন্তু দুঃসহ ওই ঘটনার কথা মনে পড়লেই ভয়ে আৎকে উঠছে ওই ছাত্রী। তারা দ্রুত ঘটনায় জড়িত সকলকে গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছেন। পটুয়াখালীর কলাপাড়া সংবাদদাতা মিলন কর্মকার রাজুর তথ্য ও ছবিতে প্রতিবেদন।
পুলিশ ও ওই ছাত্রীর পরিবার জানায়, কলাপাড়ার জনতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভোকেসনাল বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় বালিয়াতলী ইউনিয়নের চরনজির গ্রামের ওই ছাত্রী। গত বুধবার দুপুরে কলাপাড়া পৌর শহরের খেপুপাড়া মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে পরীক্ষা শেষে মোটরসাইকেল চালক নুর বাহাদুরের মোটরসাইকেলে করে নিজ বাসায় ফিরছিলেন ওই ছাত্রী। কিন্তু তাকে বাসায় না নিয়ে নুর বাহাদুর চর চান্দুপাড়ার তার নিজ বাসায় নিয়ে যায়। এ সময় তার বাসায় কেউ না থাকায় ওই ছাত্রীকে মারধর করে আহত করে এবং তার পড়নের কাপড় টেনেহেঁচড়ে খুলে তাকে যৌন নিপীড়ণ করে। এ সময় স্থানীয়রা ওই ছাত্রীর কান্নাকাটি শুনে কয়েক যুবক ওই বাসায় গিয়ে ছাত্রীকে উদ্ধার করে এবং তারাও নুর বাহাদুরের পক্ষ নিয়ে ছাত্রীকে অশ্লীল কথাবার্তা ও মারধর করে। একপর্যায়ে এলাকার লোক জড়ো হলে গ্রামবাসীরা থানায় খবর দিলে পুলিশ ওই বাসায় গিয়ে নুর বাহাদুর ও সুজনকে গ্রেফতার করে এবং ছাত্রীকে উদ্ধার করে রাত ১২টার দিকে কলাপাড়া হাসপাতালে ভর্তি করে। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার ছাত্রী বাদি হয়ে ছয়জনের নামে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। তবে পুলিশ আসার খবর পেয়েই পালিয়ে যায় অন্য অভিযুক্তরা।
ওই ছাত্রী জানায়, পরীক্ষা শুরুর প্রথম দিনেই মোটরসাইকেল চালক নুর বাহাদুর তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু সে পরীক্ষার মধ্যে তাকে এ বিষয়ে হয়রানী না করতে বলে। ঘটনার দিন তাকে বাড়ি পৌছে দেয়ার কথা বলে কৌশলে নুরবাহাদুর তার বাসায় নিয়ে গিয়ে তাকে যৌণ নিপীড়ণ করে। মারধর করে সে ও তার সহযোগীরা।
ওই ছাত্রীর মা জানায়, এ মেয়ে যখন তার গর্ভে সাত মাসের তখন তার বাবা মারা যায়। অনেক কষ্ট করে মেয়েকে বড় করেছেন। লেখাপড়া শেখাচ্ছেন যাতে বড় হয়ে সে চাকুরী করতে পারে। প্রত্যন্ত গ্রামে থাকলেও উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার স্বপ্ন ছিলো মেয়ের। কিন্তু পাষন্ডরা তার মেয়েকে নির্মম নির্যাতন,মারধর ও সন্মানহানি করেছে। সে এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জসীম জানান স্কুল ছাত্রীর পরিবারের অভিযোগ, তাকে ভুল বুঝিয়ে বাসায় নিয়ে নুর বাহাদুর তার সহযোগীদের নিয়ে জোড়পূর্বক ধর্ষন চেস্টা চালায়। এরআগেও তাকে উত্তক্ত করতো। তারা ঘটনার খবর পেয়ে প্রধান দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেন। ভিকটিম ছাত্রী এখনো কলাপাড়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে গ্রেপ্তার নুর বাহাদুর ও সুজনকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। মামলার অপর আসামি নিপুন শরীফ, আবদুল হাই সন্যামত, জুলহাস ও শামীম হাওলাদারকে গ্রেফতারের চেস্টা চলছে।