উপকূলীয় জনপদ খুলনার কয়রা উপজেলার অধিকাংশ জায়গার নদীর বাঁধ ভাঙ্গা ও ঝুঁকিপূর্ণ এবং প্রতি বছর লোনা পানিতে প্লাবিত হয় উপজেলাটি। দুর্যোগ কবলির্ত এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল টেকসই বেড়িবাঁধ।
অবশেষে কয়রাবাসীর দীর্ঘ চাওয়া পাওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হত চলেছে। স্বস্তির নিশ্বাস এখন উপকূল জুড়ে। লোনা পানির অভিশাপ থেকে কয়রাকে মুক্ত করতে নদীতে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য বড় একটি প্রকল্প পাশ হয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায়। গত মঙ্গলবার একনেক চেয়ারপারসন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শেরে বাংলা নগরস্থ এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেকের সভায় যুক্ত হন। মন্ত্রীপরিষদ, মন্ত্রীপরিষদ সচিবসহ সকলের অংশগ্রহণে কয়রা উপজেলার পোল্ডার নম্বর-১৪/১ টেকসই বাঁধ নির্মাণের ১১৭২ কোটি টাকার প্রকল্প পাশসহ ২৯ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকার ১০ প্রকল্প অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। আর কয়রা বাসীর এ স্বপ্ন পুরুন হয়েছে সংসদ সদস্য আলহজ¦ মোঃ আক্তারুজ্জামান বাবুর নিরলশ প্রচেষ্টায়। এদিকে উপকূলবাসীর দীর্ঘদিনের স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় আনন্দে উচ্ছ্বসিত প্রতিনিয়ত দুর্যোগের সাথে যুদ্ধ করা লক্ষ লক্ষ মানুষ। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ হেলাল এমপি, পরিকল্পনা মন্ত্রী আবদুল মান্নান এমপি, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক এমপি, পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এ.কে.এম এনামুল হক শামীম এমপি এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ¦ মোঃ আখতারুজ্জামান বাবু এমপিকে কৃতজ্ঞতা এবং অভিনন্দন জানিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে-২০০৯ সালের ২৫ মে আইলায় বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর ১০ বছরেও প্রকৃত অর্থে উন্নয়ন হয়নি এখানকার ১২১ কিলোমিটার বাঁধের। প্রায় তিন বছর বেশ কিছু এলাকা নোনা পানিতে নিমজ্জিত ছিলো। বিশেষ করে কয়রা সদর ইউনিয়ন, উত্তর বেদকাশী ও দক্ষিণ বেদকাশীর মানুষ চরমভাবে ক্ষতির শিকার হয়। আইলা পরবর্তী সময়ের মতো দুঃসহ কষ্টের মধ্যে পড়ে এ উপজেলার মানুষ। আম্ফান, ইয়াস, ফনির মত ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসে দফায় দফায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে উপকূলবাসী। এতে এ এলাকার মানুষ অর্থনৈতকভাবে ব্যাপক ক্ষতির শিকার হচ্ছে। ষাটের দশকে নির্মিত এসব দুর্বল বেড়িবাঁধের ওপর বছর বছর কোন রকমে মাটি চাপা দিয়ে পানি আটকানো হতো। নদীর নাব্যতা সংকটে পানির চাপ ও বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ এসব বাঁধ পানি আটকাতে ব্যর্থ হচ্ছিল। এ অবস্থায় প্রয়োজন ছিল দীর্ঘমেয়াদী শক্ত মজবুত বেড়িবাঁধ নির্মাণ। বর্তমান কয়রা-পাইকগাছার এমপি আলহাজ¦ মোঃ আকতারুজ্জামান বাবুর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় গেল একনেক সভায় এ-সংক্রান্ত দুটি প্রকল্প অনুমোদন দেয় সরকার। প্রকল্পটির নাম দেওয়া হয়েছে-কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী ও উত্তর বেদাকশী ইউনিয়নে পোল্ডার নং-১৪/১ পুনর্বাসন প্রকল্প। প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ১৭২ কোটি ৩১ লাখ টাকা। এ টাকার মধ্যে ১০ দশমিক ৯৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের নদী তীর সংরক্ষণ, নদীর সেøাপ প্রতিরক্ষা হবে ৩ কিলোমিটার, বাঁধ পুনর্বাসন কাজ হবে ১৩ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার, বাঁধের অভ্যন্তরে বৃষ্টির পানি অপসারণে রেগুলেটর নির্মাণ কাজ হবে ৪টি, চিংড়ি চাষের জন্য পরিকল্পিত উপায়ে নদী থেকে লবণ পানি প্রবেশ করাতে ইনলেট নির্মাণ হবে ১৩টি। এ ছাড়া প্রকল্প এলাকায় ৬ দশমিক ১৫৫ কিলোমিটার খাল খনন ও একই সাথে কপোতাক্ষ নদের ২ কিলোমিটার খনন করা হবে। বাস্তবায়নাধীন এ বাঁধের উপরের রাস্তার প্রস্থ হবে ৫ মিটার এবং নিচের অংশ প্রস্থ হবে অবস্থান ভেদে ২২ থেকে ৩০ মিটারের মধ্যে। অবস্থান ভেদে উচ্চতা সর্বোচ্চ ৫ থেকে ৭ মিটার হবে। ২০২৪ সাল পর্যন্ত মেয়াদ ধরা হয়েছে। প্রকল্প ব্যয় সংকুলান করা হবে রাজস্ব খাত থেকে। অপরদিকে এ প্রকল্পের বাইরে জাপান ভিত্তিক আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা জাইকার অর্থায়নে ১৩ ও ১৪/২ পোল্ডারের আওতায় ২ দশমিক ১৮৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নতুন করে নির্মাণ করা হবে। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৩২৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে গাববুনিয়ায় ৬৫০মিটার, বেদকাশির গাজিপাড়ায় ২৫০ মিটার, কাশিরহাট খোলার ৪৫০ মিটার, ২ নং কয়রার ২শ’ মিটার ও ৬৩৫ মিটার বাঁধ নির্মাণ করা হবে। এ প্রকল্পেরও মেয়াদ ২০২৪ সাল পর্যন্ত। বাঁধ নির্মাণের বিষয়ে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের সময় জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা ছিল ৩ দশমিক ৮মিটার। বর্তমানে যে বাঁধ নির্মাণ করা হবে সেটি হবে অন্তত ৫মিটার। ফলে বাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করার সুযোগ থাকবে না। বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হবে আগামী ২/৩ মাসের মধ্যে। বেড়িবাঁধ নির্মাণের বিষয়ে খুলনা ৬ আসনের এমপি আলহাজ¦ মোঃ আক্তারুজ্জামান বাবু বলেন, আমার নির্বাচনী ইশতেহারেই ছিল এ অঞ্চলের মানুষের জন্য টেকসই বাঁধ নির্মাণ। আল্লাহর রহমতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের কথা শুনেছেন। বিপুল অর্থে বাঁধ নির্মাণের জন্য অনুমোদন দিয়েছেন। শুধু এ প্রকল্পই নয় নির্বাচনের আগে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আরো কয়েকটি প্রকল্প খুব অচিরেই পাশ হবে বলে আশা করছি। এর মধ্যে এ অঞ্চলে সুপেয় পানির ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, দক্ষিণ বেদকাশীতে পর্যটন এলাকা ঘোষণা এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া, বটিয়াঘাটার দারুল মল্লিক থেকে পাইকগাছা পর্যন্ত তিনটি ব্রীজসহ বড় রাস্তা নির্মাণ, ৩৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে হাইওয়ে নির্মাণ, কয়রা সদর থেকে কাশিরহাট পর্যন্ত ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন রাস্তা নির্মাণ। এসব প্রকল্প খুব শীঘ্রই বাস্তবায়ন হবে। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অবহেলিত কয়রার-পাইকগাছার মানুষের উন্নয়নে কাজ করছি। এজন্য তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন।