‘রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভা ফান্ডে রাজস্ব আদায়কৃত প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা ছিল। এখন সেখান থেকে চা খাওয়ানোর জন্যও টাকা খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। কিভাবে এই টাকা গায়েব হয়েছে তা বুঝতে পারছিনা। এছাড়াও বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতিকারী মেয়র আব্বাসের আগ্রাসন থেকে কাউন্সিলর ও কর্মকর্তা-কর্মচারিরা মুক্তি চায়।’ শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) কাটাখালী পৌর ভবনে আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় সভাপতিত্বকালে সাংবাদিকদের সামনে এ কথা বলেছেন কাটাখালী পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মঞ্জুর রহমান।
এসময় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কটূক্তি ও বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণ প্রতিহতের ঘোষণা দেয়া সেই আব্বাস আলীকে মেয়র পদ থেকে দ্রুত অপসারণের দাবি জানান কাটাখালী পৌরসভার ১২ জন কাউন্সিলর। একই সঙ্গে দ্রুত তাকে গ্রেপ্তার করে শাস্তির দাবি জানিয়েছেন কাউন্সিলরগণ। প্রতিবাদ সভায় মেয়র আব্বাস আলীকে অপসারণে অনাস্থা প্রস্তাবের রেজুলেশন সাংবাদিকদের পড়ে শোনান কাউন্সিলর মঞ্জুর রহমান।
কাটাখালী পৌরসভার কাউন্সিলর ও কর্মকর্তা-কর্মচারিরা মেয়র আব্বাসের আগ্রাসন থেকে মুক্তি চায় উল্লেখ করে মঞ্জুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) পৌরসভার ১২ জন কাউন্সিলরের জরুরী সভায় সর্বসম্মতিক্রমে মেয়রকে অপসারণে অনাস্থা প্রস্তাব গৃহীত হয়। যেটি বৃহস্পতিবার রাতেই রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আবদুল জলিলের সরকারি বাংলোতে গিয়ে দেয়া হয়েছে।
পৌর ফান্ডের প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা গায়েব হওয়ার বিষয়টি দ্রুত তদন্তের দাবি জানিয়ে মঞ্জুর রহমান বলেন, করোনাকালিন অনুদান দেয়ার জন্য কাটাখালি বাজারের কাপড় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ৮০ লাখ টাকা উঠিয়েছিলেন মেয়র আব্বাস। কিন্তু সে টাকাও কাউকে দেয়া হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। শুধু তাই নয়, মেয়র আব্বাস কারোনাকালে চা ব্যবসায়ীদের অনুদান দেওয়ার নামে কয়েক লাখ টাকা পৌরসভার ফান্ড থেকে নিয়েছেন। কিন্তু কোন চায়ের দোকানদার এই অনুদান পেয়েছে কি না তা উপস্থিত কোন কাউন্সিলর বলতে পারবে না।
কাউন্সিলর মঞ্জুর আরো বলেন, প্রতি মাসে মেয়র আব্বাসের প্রতি মাসে অবৈধ আয় প্রায় দেড় কোটি টাকা। এটি তিনি গর্ব করে বলে থাকেন। সম্প্রতি তিনি গণমাধ্যমকর্মীদেরও এ কথা বলেছেন; যা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
প্রতিবাদ সভায় ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল মজিদ বলেন, পৌরসভার কাউন্সিলর ও কর্মকর্তা-কর্মচারিদের ৩৬ মাসের বেতন-ভাতা বকেয়া রয়েছে। ফান্ডে টাকা থাকার পরও মেয়র আব্বাস এই বেতন-ভাতা দেয়নি। তিনি বলেন, মেয়র আব্বাস কর্মকর্তা-কর্মচারিদের জোর করে বিভিন্ন কাগজে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করে থাকেন। কেউ স্বাক্ষর না করলে তাকে চাকরিচ্যুতসহ নানাভাবে হুমকি দেন। এছাড়াও তার অন্যায় কাজের কোন প্রতিবাদ করলে কাউন্সিলর ও কর্মকর্তা-কর্মচারিদের অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ করতো মেয়র আব্বাস।
তিনি আরো বলেন, আত্মীয়-স্বজনদের নামে ঠিকাদারী লাইসেন্স করে নগর অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ মেয়র নিজে করতো। আত্মীয়-স্বজনদের নামে হাট-ঘাট ও যানবাহনের টোল আদায়ের ইজারা নিজে ইজারা নিয়েছেন। এসব টোল আদায়ের নামে নিজের লোকজন দিয়ে চাঁদাবাজি করে। এসব নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করলে হত্যার হুমকি দেয়াসহ বিভিন্নভাবে ভয়ভিতি দেখাতেন মেয়র আব্বাস।
এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করা মেয়র আব্বাসের শাস্তির দাবিতে শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) দুপুর ১২ টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল শেষে কুশপুত্তলিকা দাহ করেছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এছাড়াও রাজশাহীতে তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে গণধোলাই দেওয়ার আহবান জানিয়েছেন রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগ।
মহানগরীর আলুপট্টি মোড় থেকে বের হয়ে বিক্ষোভ মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে সাহেব বাজার জিরো পয়েটে এসে শেষ করে। এরপর সেখানে পৌর মেয়র আব্বাস আলীর কুশপুত্তলিকা দাহ করেন।