সংঘাত নিরসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর কোনো প্রকার তৃতীয় মধ্যস্থতা ছাড়াই স্বাক্ষরিত হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি। যা সারাবিশ্বের এক অনন্য দৃষ্টান্ত। ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের ২৪ বছর পূর্তি আগামী ২ ডিসেম্বর।
অশান্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে শান্তির সু-বাতাস ছড়ানোর ২৪তম বর্ষ পালন উপলক্ষে ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তি চুক্তির প্রনেতা তৎকালীন চীফ হুইপ এবং বর্তমান মন্ত্রী পদমর্যাদায় থাকা পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক আলহাজ¦ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি’র নিজ এলাকা বরিশালে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এলক্ষ্যে শনিবার (২৭ নবেম্বর) বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের আয়োজনে বিশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সূত্রমতে, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মন্ত্রীসভার সদস্যদের উপস্থিতিতে সরকারের পক্ষে চীফ হুইপ আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং জনসংহতি সমিতির পক্ষে (জেএসএস সভাপতি) জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। চুক্তি অনুযায়ী, ১৯৯৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে শান্তি বাহিনীর ৭৩৯ সদস্যর প্রথম দলটি সন্তু লারমার নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অস্ত্রসমর্পণ করেন। পরবর্তী সময়ে ১৬ ও ২২ ফেব্রুয়ারি চার দফায় শান্তি বাহিনীর মোট ১৯৪৭ জন সদস্য অস্ত্রসমর্পণ করেন। ২৭ ফেব্রুয়ারি উপজাতীয় শরণার্থীদের সর্বশেষ দলটি উপেন্দ্র লাল চাকমার নেতৃত্বে মাতৃভূমিতে ফিরে আসেন। মোট ছয় দফায় ১২ হাজার ৩২২ পরিবারের ৬৩ হাজার ৬৪ শরণার্থী দেশে ফিরে আসেন।
চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ১৯৯৮ সালের ৬ মে স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন সংশোধন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইন সংসদে পাস হয়। ওই বছরের ১৫ জুলাই এক গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠণ করা হয়। খাগড়াছড়ির তৎকালীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য কল্প রঞ্জন চাকমাকে প্রথম পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের পূর্ণমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়। ১৯৯৮ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সরকার জনসংহতি সমিতির প্রধান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমাকে চেয়ারম্যান করে ২২ সদস্যর পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ গঠণ করে। ১৯৯৯ সালের ১২ মে আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমার (সন্তু লারমা) দায়িত্বভার গ্রহণের মাধ্যমে আঞ্চলিক পরিষদের কার্যক্রম শুরু হয়।
স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসব উপলক্ষে গত ২৫ নবেম্বর সংসদের বিশেষ অধিবেশনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সিনিয়র সদস্য, পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক (মন্ত্রী) আলহাজ¦ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি’র প্রদত্ত ভাষণে জানা গেছে, শান্তি চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে ইতোমধ্যে ৪৮টি ধারা সম্পূর্ণ ও ১৫টি ধারা আংশিক বাস্তবায়ন করা হয়েছে। বাকি নয়টি ধারা বাস্তবায়নের পথে রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির ঘ.১৯ ধারা অনুযায়ী ইতোমধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে একজন উপজাতীয়কে মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়কে সহযোগীতা করার জন্য ১২ সদস্য বিশিষ্ট উপদেষ্টা কমিটি রয়েছে। খ.২৪ ধারা অনুযায়ী-স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পুলিশ বাহিনীতে লোক নিয়োগে উপ-জাতীয় পুরুষ প্রার্থীদের উচ্চতার ক্ষেত্রে ৫ ফুট ৬ ইঞ্চির স্থলে ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি শিথিলকরণ এবং মহিলা প্রার্থীদের ক্ষেত্রে উচ্চতা বিদ্যমান ৫ ফুট ২ ইঞ্চি রাখার জন্য প্রজ্ঞাপন করে তা প্রতিপালন করা হচ্ছে। খ. ৩৩ ধারা অনুযায়ী-পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন সংশোধন করা হয়েছে। রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের নিকট হস্তান্তরিত দপ্তরসমুহের জনবল, পরিসম্পদ, বার্ষিক বাজেট বরাদ্দ প্রদান (বর্ষিক উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন বাজেট) পার্বত্য জেলা পরিষদসমুহ ন্যাস্ত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সর্বশেষ ২০১৭ সালের ২০ আগস্ট হস্তান্তরিত বিভাগের সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগে পত্র দেয়া হয়েছে।
মন্ত্রী পদমর্যাদায় থাকা পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির আহবায়ক, বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি বলেন, চুক্তির অধিকাংশ ধারাই বাস্তবায়িত হয়েছে। হাতেগোনা যে কয়টি ধারা আংশিক কিংবা প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে তা সরকারের এ মেয়াদেই বাস্তবায়িত হবে। তিনি আরও বলেন, পার্বত্য জেলাসমূহের উন্নয়ন সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে দলমত নির্বিশেষে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। শান্তি চুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের আর্থসামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়েছে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সুখী-সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ সোনার বাংলাদেশ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হব।
আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপের কারণে আজ পার্বত্য জেলাসমূহ কোনো পিছিয়ে পরা জনপদ নয়। দেশের সার্বিক উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় এ অঞ্চলের জনগণ সমান অংশীদার।