নওগাঁর মান্দা উপজেলার ১৪ ইউনিয়নে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন ভোটাররা। ভোটের আগের সহিংসতা ও উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করলেও ভোটের দিনের চিত্র ছিল একেবারেই উল্টো। কেন্দ্রগুলোতে নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। বিকেলে পুরুষ ভোটাররা দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে ভোট দিয়েছেন। ছোটখাটো বিচ্ছিন্ন দু’একটি ঘটনা ছাড়া কোনো কেন্দ্রেই বড় ধরণের সহিংসতার কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
সকাল থেকেই ভোটকেন্দ্রের বাইরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। ফলে সকাল থেকেই শীত উপেক্ষা করে নির্বাচন কেন্দ্রগুলোতে মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যায়। উপজেলার গনেশপুর, মৈনম, প্রসাদপুর, ভালাইন, পরানপুরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের অন্তত ২৫টি কেন্দ্র ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।
সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ভোটকেন্দ্রগুলোতে নারীদের বুথে দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে ভোট দিচ্ছেন ভোটাররা। এ সময় পুরুষদের বুথগুলো ছিল অনেকটা ভোটারশূন্য। পুুরুষ বুথগুলোতে ভোটাররা একজন একজন করে এসেছেন, আর ভোট দিয়ে চলে গেছেন। তবে দুপুরের পর আবার পুরুষদের বুথে ভিড় জমতে শুরু করে। তখন নারীদের বুথ ছিল প্রায় ফাঁকা।
সকাল ৭ টা ৪৫ মিনিটে নুরুল্লাবাদ ইউনিয়নের জোতবাজার কিন্টারগার্ডেন কেন্দ্রের সামনে গিয়ে দেখা যায়, ভোটগ্রহণ শুরুর জন্য তখনও ওই কেন্দ্রের প্রধান ফটক খুলে দেওয়া হয়নি। শতাধিক নারী ভোটার ও কিছু পুরুষ ভোটার ভোট দেওয়ার জন্য ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের জন্য প্রধান ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর ভোটগ্রহণ শুরু হলে ওই কেন্দ্রের তিনটি নারী বুথে ভোটাররা সারিতে দাঁড়িয়ে ভোট দিতে শুরু করে। অন্যদিকে পুরুষদের তিনটি বুথে দাঁড়ানো কোনো ভোটার ছিল না।
সকাল পৌনে ১০টার দিকে গনেশপুর ইউনিয়নের সতীহাট কেটি উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, চারটি পুরুষ বুথের সামনে কোনো ভোটার নেই। তবে নারী বুথের চারটিতে দীর্ঘ সারি। ওই চারটি বুথের সামনে অন্ত ১৫০ জন ভোটার দাঁড়িয়ে আছেন। ওই ইউনিয়নের শ্রীরামপুর পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের চিত্রও একই।
সতীহাট কেটি উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা নীলকুঠি গ্রামের ফাতেমা বিবি (৪৫) বলেন, ‘বাড়িতে কাজ পড়ে আছে। সকাল সকাল ভোট দিয়ে বাড়ির কাজ করতে হবে। তাই আমি ও শাশুড়ি সকালেই ভোট দিতে এসেছি। আমরা ভোট দিয়ে গেলে বাড়ির পুরুষ লোকেরা ভোট দিতে আসবে।
উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামের ভোটার অমল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘সকালে মাঠে ধান কাটার কাজ ছিল। দুপুরের মধ্যে কাজ শেষ করে ভোট দিতে এসেছি। বিকেলে কোনো কাজ করব না। ভোট গণনা পর্যন্ত কেন্দ্রেই থাকব।’
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবদুর রশিদ বলেন, ‘বিশৃঙ্খলা ছাড়াই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিকেল ৩টা পর্যন্ত ৬০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে। ভোটের আগে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কার সৃষ্টি হলেও কোনো ধরণের গোলযোগ ছাড়াই ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। আশা করছি, ভোট গণনা ও ফলাফল ঘোষণার সময়ে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না।’
উল্লেখ্য, তৃতীয় ধাপের এই নির্বাচনে মান্দা উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৯৩ জন, সংরক্ষিত পদে ১৭৩ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ৫৪৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।