তিন দফায় সাতক্ষীরার সাত উপজেলার মধ্যে পাঁচ উপজেলার ৫১টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে। গত ২০ সেপ্টেম্বর প্রথম ধাপে তালা উপজেলান ১২টির মধ্যে ১১টি এবং কলারোয়া উপজেলার ১২টির মধ্যে ১০টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর গত ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ১৪টির মধ্যে ১৩টি ইউনিয়নে অনুষ্ঠিত হয় নির্বাচন। এরপর ২৮ নভেম্বর তৃতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত হয় দেবহাটার ৫টি ও কালিগঞ্জের ১২টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। মোট ৫১টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের ১৮জন, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ১৭জন, বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র ১০জন, জাতীয় পার্টির লাঙল প্রতীকে ১ ও স্বতন্ত্র ১জন, জামাতের ৩জন এবং ওয়ার্কার্স পার্টির একজন ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, প্রথম ধাপের নির্বাচনে তালা উপজেলায় নৌকার প্রার্থী ৫, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ২, স্বতন্ত্র ২, জামাতের এক এবং ওয়ার্কার্স পার্টির একজন বিজয়ী হয়েছেন। এ উপজেলায় বাকী রয়েছে কুমিরা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। যা চতুর্থ ধাপে অনুষ্ঠিত হবে। কলারোয়া উপজেলায় নৌকার প্রার্থী ৪জন, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ৫জন এবং একজন বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। এ ইউনিয়নে বাকী রয়েছে কেরালকাতা ও কুশোডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। আগামী ২৬ ডিসেম্বর চতুর্থ ধাপে অনুষ্ঠিত হবে এ দুটি ইউনিয়নের নির্বাচন।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রতীকে ৩টি, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ৫টি, বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র ২টি, জাপা ১টি ও জামায়াত ২টিতে জয়লাভ করেছে। সাতক্ষীরা সদরে আলিপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে দু’বছর পর।
২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে দেবহাটা উপজেলার ৫টি ইউপির মধ্যে ১টিতে নৌকার বিজয়ী হয়েছেন। বাকী ৪টি ইউপিতে ৩টিতে বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র এবং একটিতে বিদ্রোহী প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। কালিগঞ্জ উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫টি নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। বাকী ৭টির মধ্যে ১টি জাতীয়পার্টি, ২টিতে বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র এবং ৪টিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জয়লাভ করেছেন।
আগামী ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে চতুর্থ ধাপের নির্বাচন। এ নির্বাচনে সাতক্ষীরার তালার একটি, কলারোয়ার দুটি এবং শ্যামনগরের ৯টি ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ করা হবে। এ ছাড়া ২০২২ সালের ৫জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে পঞ্চ ধাপের নির্বাচন। এ নির্বাচনে শ্যামনগরের তিনটি এবং আশাশুনির ১১টি ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ করা হবে। নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী অনুষ্ঠিতব্য এসব ইউনিয়নের ভোটগ্রহণের খবর পাওয়া গেছে।
দুই-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া প্রত্যেকটি ইউনিয়নে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে বলে জেলার সুশীল সমাজ মনে করেন। জেলা নাগরিক নেতা আবুল কালাম আজাদ বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী যতবার স্থানীয় নির্বাচন হয়েছে তারমধ্যে এবারের নির্বাচনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য ভোটারদের কাছে অন্য একমাত্রা যোগ করেছে। প্রত্যেকটি ভোট কেন্দ্রে উৎসবমূখর পরিবেশ লক্ষ্য করা গেছে। নারী-পুরুষ দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট প্রদান করতে পেরে আনন্দ প্রকাশ করেছেন। জেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক আনিসুর রহিম বলেন, আইন-শৃংখলা বাহিনীর নিরপেক্ষ ভূমিকার কারণে সাধারণ মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছেন। বিশেষ করে পুলিশ, র্যাব, গোয়েন্দার কঠোর নজরদারীর কারণে জেলায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে মানুষ ভোট উৎসবে মেতে উঠতে পেরেছে। কেউ বিশৃংখলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে আইন-শৃংখলা বাহিনীর হাত থেকে রেহাই পায়নি। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভোটাধিকার প্রয়োগে এক ধরণের বিশ্বাস ও আস্থার জায়গা তৈরী হয়েছে। আগামীতে বিশ্বাস ও আস্থার জায়গাটি ধরে রাখতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান সুশীল সমাজের নেতারা।