দেয়া হয়েছে নিয়োগপত্র, চাকরিও করেছেন টানা এক বছর। কিন্তু কোনো বেতন নেই। আর এক পদে বেতন হয়নি বলে পুনরায় আরও একটি শাখায় শূণ্য পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সেখানেও মেলেনি বেতন। আর বেতন চালু করাতে চাহিদা মত ২য় দফায় হাসপাতালের এক কর্মকর্তাকে আড়াই লাখ টাকা ঘুষ দিয়েও কাজ হচ্ছেনা বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যে কারণে বেতন চালুর জন্য কর্তৃপক্ষের দ্বারেদ্বারে ঘুরছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের নিয়োগপ্রাপ্ত সেই নারী কর্মচারী নুর-ই তানজিলা।
জানা গেছে, এই নুর-ই তানজিলা গত ২০২০ সালের নভেম্বরে রামেক হাসপাতালে দর্জি শাখায় নিয়োগ পেয়েছিলেন। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের একটি ভুলের জন্য তার বেতন হয়নি। এমনকি পুনরায় আবারো ২০২১ সালের জুন মাসে লিফটম্যান হিসাবে নিয়োগ দেয়া হলেও বেতন পাননি। তবে রামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন একটু ভুলের জন্য এ কর্মচারীর নিয়োগ নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। যদিও সেটি সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালে জনবল (রাজস্ব খাতে) নিয়োগের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেন। অন্যান্য পদের সাথে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে দর্জি শাখায় দুটি পদে নিয়োগ দেয়া হবে মর্মে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। সেই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির সুবাদে নুর-ই তানজিলা দর্জি শাখায় দাখিলকৃত আবেদনের প্রেক্ষিতে রামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যাচাই-বাছাই করে গত ২০২০ সালের ৮ নভেম্বর হাসপাতালটির সাবেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিলুর রহমানের স্বাক্ষরে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। একই সাথে সুমি খাতুন নামে আরো একজন নারী ওই পদে নিয়োগ পান। নুর- ই তানজিলা নিয়োগ পাওয়ার পর কর্মস্থলে যোগদান করেন। এরপর তিনি সার্ভিস বুক খুলেন। মাস দুয়েক পর তিনি হিসাব রক্ষন অফিসে (এজি) যান বেতন তোলার জন্য। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখা যায় রামেক হাসপাতালে দর্জি শাখায় একজনের নিয়োগ হয়েছে। সেটা সুমি নামে এক নারীর।
এর পর হিসাব রক্ষন অফিস (এজি) থেকে নুর-ই তানজিলাকে জানানো হয় দর্জি পদে একজনের নিয়োগ হয়েছে। ওই পদও একটি ছিল। সেই পদে যার চাকরি হয়েছে তার বেতন মঞ্জুর হয়েছে। বিষয়টি খোঁজ নেয়ার জন্য তাকে রামেক হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ প্রদান করা হয়। পরে নুর-ই তানজিলা রামেক হাসপাতালের পরিচালককে বিষয়টি অবগত করেন। এরপর রামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারে দর্জি পদে একজনের নিয়োগ হয়েছে। এমনকি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকেও একটি পদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ায় বেকায়দায় পড়েন এই চাকরি প্রত্যাশী নারী। ঘুরতে থাকেন কর্মকর্তাদের দ্বারেদ্বারে।
এদিকে দর্জি পদে নিয়োগ দেওয়ার পর বেতন না হওয়ায় রামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নুর-ই তানজিলাকে পুনরায় ২০২১ সালের ২৪ জুন লিফটম্যান হিসাবে নিয়োগপত্র দেন। তানজিলা সেই নিয়োগপত্র নিয়ে গত ৬ মাস যাবৎ লিফটম্যান হিসাবে কাজ করছেন। কিন্তু তারপরও তিনি বেতন পাননি। দুটি নিয়োগপত্র থাকার পরও বেতনভাতা না পেয়ে এখন মানবেতর জীবন যাপন করছেন এই নারী কর্মচারি। এখন প্রতিদিন তিনি কখনো পরিচালক, কখনো প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবার কখনো প্রধান সহকারীর অফিসে দৌঁড়ঝাপ করছেন। কিন্তু কোনো সুরাহা হচ্ছে না।
অপরদিকে মন্ত্রণালয় থেকে ওই পদে একজনকে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলা হলেও রামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দিয়েছেন দুটি পদে। এই নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। এটি কেনো বা কিভাবে হলো সেই বিষয়টি নিয়ে রীতিমত প্রশ্নের জন্ম হয়েছে।
এ ঘটনায় রামেক হাসপাতালের একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, এটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ভুল নয়, এই ভুলটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।
এ ব্যাপারে রামেক হাসপাতালে দর্জি শাখায় নিয়োগ পাওয়া কর্মচারী নুর-ই তানজিলা জানান, তার সাথে সুমি খাতুন নামে যে নারী নিয়োগ পেয়েছিলেন তিনি নিয়োগ পাওয়ার পরপরই মাতৃত্বকালীন ছুটিতে চলে যান। আর তিনি একাই ওই শাখায় চাকরি করেছেন। ছুটি শেষে ওই কর্মচারির বেতন হয়েছে কিন্তু আমার বেতন হয়নি।
নুর-ই তানজিলা অভিযোগ করে বলেন, দর্জি শাখায় নিয়োগপত্র দেয়ার পরও তার বেতন হয়নি, এমনকি পুনরায় লিফটম্যান হিসাবে নিয়োগ দেয়া হলেও সেখানে বেতন হয়নি। আজ না কাল বা পরশু বেতন হবে এমন আশ্বাস দেয়া হয়েছে তাকে।
তিনি অভিযোগ করে আরো বলেন, আমার চাকরি নিশ্চিত করতে খরচের কথা বলে রামেক হাসপাতালের সাবেক প্রধান সহকারী তার কাছ থেকে ৭৫ হাজার টাকা নিয়েছিলেন। তবে তিনি চাকরির বেতন করাতে না পেরে ওই টাকা ফেরত দিয়েছেন। আর এ বিষয়টি দেখবেন বলে হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মুক্তার হোসেন আমার কাছ থেকে আড়াই লাখ টাকা নিয়েছেন। কিন্তু বছর অতিবাহিত হলেও এ বিষয়ে কোনো সুরাহা হয়নি। এমনকি প্রশাসনিক কর্মকর্তা মুক্তার হোসেন টাকাও ফেরৎ দেননি।
তবে টাকা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে রামেক হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মুক্তার হোসেন বলেন, মন্ত্রণালয় দর্জির দুটি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়ার নিদের্শ দেয়। কিন্তু পরে জানা যায় এ পদটি ছিল একটি। যে কারণে বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়ে কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এখনো কোনো সমাধান হয়নি। তবে সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।
এ ঘটনায় রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানি জানান, দর্জি শাখায় বেতন না হওয়ায় পরে ওই নিয়োগ কমিটির সিদ্ধান্তে তাকে লিফটম্যান হিসাবে পুনরায় নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু সেখানেও চাকরির বেতন করানো যায়নি। এমনকি তার চাকরি স্থায়ীও করা যায়নি। তবে তাকে লিফটম্যান পদে চাকরি স্থায়ী করার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। আর কিভাবে একটি পদের জায়গায় দুটি পদে সারকুলার হলো সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।