চলতি রবি মৌসুমে ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে সারের সংকট দেখা দিয়েছে। সার সংকটে কৃষকরা তাদের চাষাবাদ নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
তবে কৃষকদের অভিযোগ সার ডিলাররা সারের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে কৃষকদের কাছ থেকে অবৈধভাবে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। এতে চলতি রবি ভরা মৌসুমে সময় মত কৃষককরা সার না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
উপজেলার ৫নং হরিপুর সদর ইউনিয়নের কৃষক ও হরিপুর পাইলট সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জামালউদ্দীন বলেন, চলতি মৌসুমে গম, ভুট্রা ও আলুর ক্ষেতে বিভিন্ন প্রকার সার প্রয়োগ করতে হচ্ছে। কিন্তু সার ডিলারদের কাছে গিয়ে সময় মত সার পাওয়া যাচ্ছে না। ডিলার ও খুচরা বিক্রেতাগণ সারের কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে বেশি দামে সার বিক্রি করছে। সরকার কর্তৃত নির্ধারিত বিক্রি মূল্য এমওপি (পটাশ) সার প্রতি বস্তা ৭৫০ টাকা, ইউরিয়া ৮০০ টাকা ও টিএসপি ১১০০ টাকা। তবে বাজার থেকে কৃষকদের ক্রয় করতে হচ্ছে পটাশ (এমওপি) ৯৭০ থেকে ১০৫০ টাকায়, ইউরিয়া ৮৫০ টাকায় ও ডিএপি ১ হাজার থেকে ১৩০০ টাকায়। তিনি আরো বলেন কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা নিয়মিত সারের বাজার মনিটরিং না করার ফলে সারের কৃত্রিম সংকট দেখা দিয়েছে ও কৃষকদের বাড়তি টাকা দিয়ে সার ক্রয় করতে হচ্ছে। কৃষকদের সারের সংকট ও বেশি দামে ক্রয় করে ক্ষতি হওয়ার বিষয়টি দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সূ-দৃষ্টি কামনা করছি।
সরেজমিনে উপজেলার কয়েকটি বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দাম নেয়া হচ্ছে।
সারের বেশি দাম নেওয়া কেন্দ্র করে খুচরা সার বিক্রেতা বাবলু মিয়ার সঙ্গে কয়েকজন স্থানীয় কৃষকের সঙ্গে বাকবিতন্ড হয়। উপজেলার কৃষকদের দাবি, সার ডিলার ও খুচরা বিক্রেতাগণ সারের কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে সব ধরণের সারের দাম বেশি নিচ্ছে। আমরা খুচরা বিক্রেতা ও ডিলারদের কাছে ইউরিয়া সার কিনতে চাইলে তারা ইউরিয়ার সঙ্গে বোরনসহ অন্যান্য সার নিতে বাধ্য করছেন। এতে আমরা অনেক আর্থিক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি।
বৃহস্প্রতিবার সকালে ২নং আমগাঁও ইউনিয়নের জামাল উদ্দীন নামে এক বিএডিসি সার ডিলারের কাছ থেকে ১ বস্তা এমওপি (পটাশ) সার ১ হাজার টাকা দিয়ে ক্রয় করেন আনন্দ চন্দ্র বণিক নামে এক কৃষক। তবে সারের দাম বেশি নেওয়ার বিষয়ে জানতে বিএডিসি সার ডিলার জামাল উদ্দীনকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
আমগাঁও ইউনিয়নের কৃষক আবু সায়েম জানান, ডিলার ও খুচরা সার বিক্রেতারা কৃত্রিম সার সংকট দেখিয়ে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে প্রতি বস্তা এমওপি (পটাশ) সার ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা নিচ্ছে। আর বাদ্ধ্য হয়েও অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে সার ক্রয় করতে হচ্ছে। তিনি আরো বলেন সারের অতিরিক্ত দাম নেওয়ার কারণে কয়েক দিন পূর্বে উপজেলার কয়েকটি সার ডিলারকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হয়েছে৷ তবুও থামছেনা ডিলারদের অতিরিক্ত দামে সার বিক্রি করা।
হরিপুর উপজেলার বিএডিসি সার ডিলার সমিতির সভাপতি মাইনুদ্দিন বলেন আমাদের বিএডিসি ডিলারদের বরাদ্দ থেকে কেটে বিসিআইসি অনুমোদিত ডিলারদের নামে বরাদ্দ দেওয়ার কারণে সার সংকট দেখা দিয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুবেল হোসেন বলেন, দু-তিন দিনের মধ্যে সার সংকটের বিষয়টি কেটে যাবে। দু-তিন দিনের মধ্যে উপজেলায় পর্যাপ্ত পরিমাণ সার আমদানি হবে।