বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাষ্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) নিয়ন্ত্রণাধীন জামালপুরের সরিষাবাড়ি তারাকান্দিতে অবস্থিত যমুনা ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিঃ (জেএফসিএল)-এর প্রায় ২০ হাজার মে.টন ইউরিয়া সার যার আন্তর্জাতিক বাজার মুল্য প্রায় ৩১ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ৩ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করেছেন বিসিআইসি কর্তৃপক্ষ। অভিযুক্ত ৩ কর্মকর্তারা হলেনÑ ব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক) বিক্রয় শাখা প্রধান ওয়ায়েছুর রহমান, জেএফসিএল সাবেক মহা-ব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক) খোকন চন্দ্র দাস, এবং ব্যাগিং শাখা প্রধান রসায়নবিদ নজরুল ইসলাম। বিসিআইসি’র চেয়ারম্যান (গ্রেডÑ১) শাহ্ মোঃ ইমদাদুল হক স্বাক্ষরিত পৃথক তিনটি সাময়িক বরখাস্ত পত্রের মাধ্যমে এবং যমুনা ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড এর বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সুদীপ মজুমদার পিইঞ্জ ঐ তিন কর্মকর্তার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাষ্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) চেয়ারম্যান (গ্রেডÑ১) শাহ্ মোঃ ইমদাদুল হক স্বাক্ষরিত পত্রের অভিযোগ বিবরণী সূত্রে জানাযায়Ñ শিল্প মন্ত্রণালয়ের এপিএ, শুদ্ধাচার ও অভিযোগ নিষ্পত্তি অধিশাখার সুত্র নং ৩৬.০০.০০০০.০৯৩.২৭.০০৩.২০ (অংশÑ১).৫১ তারিখ ৫/৯/২১ এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের বিসিআইসি শাখার সুত্র নং ৩৬.০০.০০০০.০৬২.৯৯.০৫৬.২০.৩০১ তারিখ ৯/৯/২১ মোতাবেক জেএফসিএল-এর ১৯হাজার ১৩৩.১ মে.টন ইউরিয়া সার যার মূল্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা আত্মসাৎ পরিকল্পনার অভিযোগটি তদন্তের নির্দেশ দেয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৬/৯/২১ ইং তারিখের সুত্র নং ৩৬.০১.০২৭.০১.০২.৪৫৪২.২০২১/১৮২ মোতাবেক প্রধান কার্যালয় হতে ৬ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ঐ তদন্ত কমিটি সরেজমিনে এসে বিক্রয় শাখা প্রধান ওয়ায়েছুর রহমানের কাছ থেকে গত ২৯/৯/২১ তারিখে জেএফসিএল এর উৎপাদিত সারের পরিসংখ্যান/ মজুদ হিসাব তার কাছ থেকে সংগ্রহ করেন। তার লিখিত তথ্যানুযায়ী জেএফসিএল এর উৎপাদিত সারের ব্যাগ মজুদের পরিমাণ ছিল ৩৭,৫৭৪.৭০ মে.টন ও লুজ সারের পরিমাণ ৫১,৮৬৬.৬০ মে.টন। সর্বমোট ৮৯,৪৪১.৩০মেঃ টন সার অবশিষ্ট থাকার কথা রয়েছে।
কিন্তু বিসিআইসি তদন্ত কমিটি সরেজমিনে উৎপাদিত সারের ব্যাগ মজুদের পরিমাণ ২১,৩১০.৩৫ মে.টন এবং লুজ সারের পরিমাণ ৫১,৬৪৯.৯২ মে.টন সর্বমোট ৭২,৯৬০.২৭মে.টন সার পায়। তাতে জেএফসিএল এর উৎপাদিত সারের ব্যাগ ১৬,৪৮১.০৩ মে.টন, এসএফসিএল এর সার ১২১.১০ মে.টন এবং লুজ সার ২১৬.৬৮ মে.টন সর্বমোট ১৬,৬০২.১৩ মে.টন সার পাওয়া যায়নি। যার আর্থিক বাজার মূল্য ২৩ কোটি ২৪ লক্ষ ১৯হাজার ৮ শ’ ২০ টাকা। বিক্রয় শাখা প্রধান হিসেবে ওয়ায়েছুর রহমানের উপর ঘাটতিকৃত সারের দায়ভার তার ওপর বর্তায়।
অপর দিকে জেএফসিএল এর ০২ নং গোডাউনে রক্ষিত কাফকো সার ১,১১৩.০০ মে.টন, এসএফসিএল এর সার ১২১.১০ মে.টন এবং আমদানি সার ২,৭০৮.০০ মে.টন সর্বমোট ৩৯৪২.১০ মজুদ থাকার কথা। কিন্তু তদন্ত কমিটি সরেজমিনে গণনায় কাফকো সার ৯০.০০ মে.টন, এসএফসিএল-এর ১২১.১০ মে.টন এবং আমদানি সার ১২০০.০০ মে.টন সর্বমোট ১৪১১.১০ মে.টন মজুদ পেয়েছেন। তাতে মোট ২৫৩১.০০ মে.টন সার খোঁজে পায়নি তদন্ত কমিটি। এতে করে খোঁজে না পাওয়া সারের আর্থিত (আন্তর্জাতিক বাজার মুল্যে গড়ে) প্রায় ৭ কোটি ১ লক্ষ ৯৯হাজার ৮শ’ ১৬ টাকা।
তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন অনুযায়ী ঘাটতিকৃত সার ২৫৩১.০০ মে.টন এবং ১৬,৬০২.১৩ মে.টন সর্বমোট ১৯,১৩৩.১৩ মে.টন ইউরিয়া সার। যার বাজার মুল্য সর্বমোট ৩০ কোটি ২৬লক্ষ ১৯হাজার ৬শ ৩৬টাকারর দায়ভার বিক্রয় শাখা প্রধানসহ ঐ ৩ কর্মকর্তার যোগসাজসে আত্মসাতের অভিযুক্ত করে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করে তাদের বিরোদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে পত্রে উল্লেখ রয়েছে। অপর একটি সূত্রে জানা গেছে, একই অভিযোগের গত জুলাই/২১ ইনভেন্টরী কমিটি সঠিক তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল না করায় তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত জেএফসিএল ব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক) ওয়ায়েছুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,যমুনা সার কারখানা থেকে সার আত্মসাতের কোন সুযোগ নেই। কারখানায় গোডাউন না থাকায় বিভিন্ন সময়ে রোদ-বৃষ্টিতে বিপুল পরিমাণ সার নষ্ট হওয়াতে প্রকৃত হিসাব গড়মিল হয়েছে। তাই যথা সময়ে আমি কর্তৃপক্ষের কাছে আমার বক্তব্য প্রদান করবো।
এ বিষয়ে যমুনা ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড-এর বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সুদীপ মজুমদার পিইঞ্জ-এর সাথে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি ৩ কর্মকর্তার সাময়িক বরখাস্তের বিষয় সত্যতা স্বীকার করে বলেন,তদন্ত হচ্ছে। ঘটনাটি এ মুহুর্তে এর বেশী কিছু বলা যাবে না বলে জানান।