দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে গত এক সপ্তাহে অজ্ঞাত রোগে ২০ টি গরুর মৃত্যুর ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে গৃহস্থরা। গৃহস্থদের অভিযোগ এলাকায় ব্যাটারি কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যরে কারণে মারা যাচ্ছে গরুগুলো। গরু মড়কের ঘটনাটি ঘটছে, উপজেলার আলাদিপুর ইউনিয়নের বাসুদেবপুর গ্রামে এবং পাশর্^বর্তী বেতদীঘি ইউনিয়নের মহেশপুর গ্রামে। গরুর মৃত্যুতে পথে বসেছেন গবাদীপশু মালিকরা।
স্থানীয়রা জানান, বাসুদেবপুর পাকড়ডাঙ্গা গ্রামে (ফুলবাড়ী-মাদিলাহাট সড়ক) সড়কের পাশে আবাদি জমিতে তৈরি করা হয় ব্যাটারি কারখানা। সেখানে পুরোতন ব্যাটারি সংগ্রহ করে সেগুলো পুনরায় ব্যবহার যোগ্য করা হচ্ছিল। ওই কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকাজুড়ে। এতে আশপাশের জমির ঘাষ ও খড় খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে পালিত গরু। পরে শ^াসকষ্ট ও পেট ফেঁপে কাঁপানী রোগ ধরছে। দুই একদিন এমন যন্ত্রণার পর মারা যাচ্ছে গরুগুলো।
সরেজমিনে শুক্রবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় গরু মড়কের ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়লে তড়িঘড়ি করে কারখানাটি ভেঙে ফেলেন কারখানার মালিক প্রভাষক দুলাল হোসেন।
দক্ষিন বাসুদেবপুর গ্রামের ফয়জুর রহমান মুকুল বলেন, গত বৃহস্পতিবার (২ ডিসেম্বর) তার পালিত বাছুরসহ ২টি গরু মারা গেছে। এর আগে ৩০ নভেম্বর তার আরো ৩টি গরুর মৃত্যু হয়েছে। একইভাবে গত ২৭ নভেম্বর একই গ্রামের বাদশা মিয়ার দুটি গরু, সোহেল রানার ১টি ও হাফিজের ১টি গরুসহ ওই গ্রামে গত সাতদিনে প্রায় ১০ টি গরুর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
মহেষপুর গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, ওই গ্রামের জাকিরের ১টি, শফিকুলের ১টি, বেলালের ১টি, মুক্তারের ২টি, মজিবরের ২টিসহ ওই গ্রামের ১০টি গরু মারা গেছে। এ নিয়ে দুই গ্রামের প্রায় ২০টি গরুর মৃত্যু হয়েছে। এই ভাবে একের পর এক গবাদি পশুর মৃত্যুতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে গ্রামের সাধারণ কৃষকরা।
ক্ষতিগ্রস্থ গবাদীপশুর মালিকরা জানান, মাঠের মধ্যে একটি অস্থায়ী ব্যাটারি কারখানা তৈরি করার পর থেকে ওই মাঠে চলাচলকরা গরু গুলোর এই সম্যসা দেখা দিচ্ছে। এ ছাড়া পশু চিকিৎসকরা ব্যাটারীতে ব্যবহৃত শিশার বিষক্রিয়ার কারণে গরুগুলোর মৃত্যু হতে পারে বলে শঙ্কা করছেন। বর্তমানে ওই এলাকার অনেকও বেশকিছু গরু অসুস্থ অবস্থায় রয়েছে। অনেকেই আতঙ্কে গরু বিক্রি করে দিচ্ছেন।
কারখানা অবস্থিত ওই জমির সত্ত্বাধিকারী প্রভাষক দুলাল হোসেন বলেন, ব্যাটারি কারখানার জন্য জমিটি ভাড়া দেওয়া হয়েছে। বেশ কিছু দিন আগে এলাকাবাসীর অভিযোগে কারখানাটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। গরু মারা যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, অল্প কয়েকেটি গরু মারা গেছে। কারখানার কারণে তেমন ক্ষতি হওয়ার কথা না। বিভিন্ন রোগের কারণেও গরুগুলো মরতে পারে।
উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা আহসান হাবিব বলেন, ওই এলাকার ব্যাটারী কারখানার বর্জ্য ঘাস অথবা খড় খেয়ে বিষক্রিয়ায় গরুগুলোর মৃত্যু হতে পারে। জয়পুরহাটের বিশেষ টিম বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, বিষয়টি শুনেছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে দ্রুত ওই এলাকায় আমাদের একটি বিশেষ তদন্ত টিম কাজ করছে। তদন্ত শেষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।