কুনুই পর্যন্ত নেই দুই হাত, হাঁটু পর্যন্ত নেই একটি পায়ের। আরেকটি পায়ের পাতায় নেই কোনো আঙুল। তবুও অতি কষ্টে গুড়িগুড়ি করে চলে হাঁটুতে ভর করে। মুখটাও বাঁকা। দু-একটি কথা ভেঙে ভেঙে বললেও তা অস্পষ্ট। একবারেই পুরোদস্তুর প্রতিবন্ধী ফজলুল হক নামের এই শিশু। অথচ সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত প্রতিবন্ধী শিশুটি। সে উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের কুটি বামনডাঙ্গা এলাকার, ৪ নং ওয়ার্ডের বন্ধুবাজার সংলগ্ন ফরিদুল ইসলামের ছেলে। অসহায় এই পরিবারের অভিযোগ, টাকা দিতে না পারায় পায়নি কোনো সুযোগ সুবিধা।
জন্ম সনদ অনুযায়ী ২০১৭ সালের ২৮ নভেম্বর জন্ম নেয় ফজলুল হক। আর জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী সে। হাত-পা এমনকী বাক প্রতবন্ধী হয়েও সরকারি কোনো সুযোগ সুবিধা না পাওয়ায় হতাশ তারা। বর্তমান সরকার বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য অগ্রাধিকার দিলেও ফজলুল পায়নি প্রতিবন্ধী ভাতা, যতœ প্রকল্পের পুষ্টি ভাতা এবং মাতৃত্বকালীনভাতাসহ কোনো প্রকার সুযোগ সুবিধা।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, বাবা ফরিদুল ইসলাম একজন দিনমজুর। সামান্য আয়ে সংসারের খরচ যোগাতেই হিমশিম খেতে হয় তাকে। ছেলের এমন অবস্থাতে বিশেষ কোনো খাবার ব্যবস্থা করাররও জো নেই তার। তাই চাপা কষ্টে বুক ফাটে অসহায় বাবা-মায়ের। গোপন এই কষ্ট যেনো দেখার কেউ নেই।
বাবা ফরিদুল ইসলাম অভিযোগ করে জানায়, মেম্বার, চেয়ারম্যান ও এনজিওসহ অনেককে ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিয়েছেন। সবাই বিভিন্নভাবে আশ্বাস দিলেও ভাগ্যে কিছুই মেলেনি তাদের। যারা টাকা দিতে পারে তাদের ভাতা হয়। তারা অনেক কিছুই পায়। যারা টাকা দিতে পারে না তাদের কোনো কিছুই হয় না। তিনিও টাকা দিতে পারেননি বলে কোনোকিছুই পাননি।
ফজলুল হকের মা শিরিনা বেগম বলেন, জন্মের পর থেকে বাচ্চাটা দুধ পায়নি। পুষ্টিহীনতায় ভুগেছে। গরিব মানুষ ঠিকমতো দুধ কিনেও খাওয়াতে পারিনি। অনেক কষ্ট গেছে ছেলেটাকে নিয়ে। এখনও তাকে নিয়ে অনেক কষ্ট। অনেক বড়লোক মানুষ ছোট বাচ্চাদের জন্য পুষ্টি ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতাসহ বিভিন্ন সুবিধা পায়, কিন্তু আমরা গরিব মানুষ তাই কিছুই পাইনি। ফজলুর দাদিও একই কথা জানান সংবাদকর্মীদের। তিনি জানান, ছেলেটা হাঁটতে পারে না। সারাদিন কোলে করে নিয়ে বেড়াতে হয়। একটি হুইল চেয়ার পেলেও অনেকটা সস্তি পেতেন তারা। তাই একটি হুইল চেয়ারের দাবি করেন তিনি।
এদিকে বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়াম্যানের বাড়ির পার্শ্ববতী ফরিদুল ইসলামের বাড়ি হলেও এ ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান ইউপি চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন।
নব নির্বাচিত ইউপি চেয়াম্যান আসাদুজ্জামান রনি বলেন, মানুষের সেবা করার জন্যই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। আর বিষয়টি আমি জানি, দায়িত্ব হাতে পেলে প্রথম বরাদ্দ পেয়েই তার জন্য সকল ভাতার ব্যবস্থা করে দেব।
উপজেলা সমাজসেবা অফিসার সালেকুল ইসলাম বলেন, বাচ্চাটার বাবা মাকে প্রতিবন্ধীর কার্ড নিয়ে এসে আমার এখানে জমা দিলে তাকে যে কোনো সুবিধা দেয়া যাবে।