লক্ষ্মীপুর থেকে চট্রগ্রাম শহরমুখী যাত্রীদের দুর্ভোগ বাড়ছে। জ¦ালানি তেলের দাম বাড়ায় নতুন করে গণপরিবহনের ভাড়া বেড়েছে। সরকারের নির্ধারিত প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৮০ পয়সা হলেও ১৭২.৬ কিলোমিটারের জন্য সর্বমোট আসে ৩১০ টাকা। আর নির্ধারিত যাত্রীর চেয়ে অধিক যাত্রীতুলে তার পরও নেয়া হচ্ছে ৩ শত ৮০ টাকা করে। এমন অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। যাত্রীরা বলছেন, আগের চেয়ে প্রতি কিলোমিটারে ৩৮ পয়সা বৃদ্ধিতে পদে পদে এক এক ধরনের নৈরাজ্য চলছে গণপরিবহনে। বাসচালক ও হেলপার ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করছেন। এ রুটে লোকাল আল কাশেদ, জননী,এ-ওয়ান,শাহীন,শাহা,ছাবিদ,কাল বৈশাখী,ছামিয়া,বি-শ্যামলী,আর-শ্যামলী,শাহিন,সোহাগ প্লাস পরিবহনসহ ড্রাইরেক্ট পরিবহন রয়েছে চলাচল করছে যাত্রীবাহি শাহী ও জোনাকি পরিবহন। আর লক্ষ্মীপুর থেকে চট্রগ্রাম শহরমুখী নৌ ও রেল পথের যাতায়াতের ব্যবস্থা না থাকায় এই সুযোগে যাত্রীদের জিম্মি করে সরকার কর্তৃক ভাড়া চেয়ে দ্বিগুণ হারে বাস ভাড়া আদায় চলছে। শহরমুখী যেতে হচ্ছে নানা প্রকার দুর্ভোগে মধ্যদিয়ে।
সরেজমিন লক্ষ্মীপুর পৌর বাসটার্মিনালে দেখা গেছে, এসব এলাকায় নেই কোনো ধরনের বাড়তি ভাড়ার চার্ট। তবে, কয়েকটি বাসের হেলপার জানান, বাসটার্মিনাল এলাকায় স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন প্রকার চার্ট টানানো হয়নি। তবে নতুন ভাড়ার তালিকা তাদের মুখস্ত আছে সেই নিয়মেই তারা ভাড়া আদায় করছেন।
জোনাকিবাস চালক জালান বলেন, আমরা নতুন ভাড়ার তালিকা হাতে পেয়েছি। এ অবস্থায় (রানিং) টাঙানো হয়নি। অন্যদিকে, বাড়তি ভাড়া নিয়ে নানা প্রকার প্রতিক্রিয়া দেখাগেছে যাত্রী সাধারণদের মধ্যে। তারা বলছেন,লক্ষ্মীপুর থেকে ঢাকার দূরত্ব বেশি সেই তুলনায় লক্ষ্মীপুর থেকে চট্রগ্রামের দূরত্ব অনেক কম। আদায় করা হচ্ছে বাড়তি ভাড়া।
জোনাকী (ঢাকা মেট্রো ব ১৫-৫৫৩৮) গাড়ীর সুপার ভাইজার মতিউর রহমান জানান,লক্ষ্মীপুর থেকে ঢাকার দূরত্ব বেশি ভাড়া ৩৫০ টাকা আর লক্ষ্মীপুর থেকে চট্রগ্রামের ভাড়া নিচ্ছেন তারা ৩৮০ টাকা ৪০০ শত টাকা করে। অন্যান্য পরিবহনের সাথে মিল রেখেই তারা এ ভাড়া নিচ্ছেন।
যাত্রী ইলিয়াস মিয়া বলেন, লক্ষ্মীপুর থেকে চট্রগ্রামের যেতে আগে ভাড়া লাগতো ৩০০ টাকা। এখন গুনতে হচ্ছে ৩৮০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা। এটা কত বড় অমানবিক। ভাড়া বাড়লে ১০-২০ টাকা বাড়াতে পারত। তাহলে কোনো কথা ছিল না। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ভাড়া বাড়ে, সব জিনিসের দাম বাড়ে, আমাদের আয়তো বাড়ে না। নতুন বাড়তি ভাড়ার টাকা আসবে কোত্থেকে। তিনি আরো বলেন, এমনইতেই নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম নাগালের বাইরে চলে গেছে, তার ওপর আবার যানবাহনের ভাড়া বৃদ্ধি, এটা যেন ‘মড়ার ওপর খাঁরার ঘা’। তেলের দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের ওপর বিরাট আঘাত করা হলো।
কথা হয় ঢাকা বাস যাত্রী তাছলিমার সাথে,তিনি যাচ্ছেন লক্ষ্মীপুর থেকে চট্রগ্রামে। কিনেছেন জোনাকী কাউন্টারের টিকেট। আরো কিছুদিন আগেও তিনি চট্রগ্রাম থেকে লক্ষ্মীপুর আসতে জনপ্রতি গুনতে হয়েছে ৩২০ টাকা করে। এখন নেয়া হচ্ছে তার কাছ থেকে জনপ্রতি টিকেট নিয়েছেন ৪০০ টাকা করে। তিনি আরো জানান,যাত্রীদের জিম্মি করে শহরমুখী বাসগুলো দ্বিগুণ হারে বাস ভাড়া আদায়সহ পথে তুলছেন যাত্রী, কেউ সিটে যাচ্ছেন কেউ বা যাচ্ছেন ঝুলে।
যাত্রী নাজমুল ইসলাম তায়েফ বলেন, তিনি যাবেন লক্ষ্মীপুর থেকে চট্রগ্রামে,সঙ্গে রয়েছে তার সাথে তা মা নাজমা বেগম। তাই তিনি টিকেট নিয়েছেন ২টি ৪০০ টাকা করে টিকেট ক্রয় করেছেন। তিনি অভিযোগ করে আরো বলেন,এভাবে দিন দিন চালকরা তাদের ইচ্ছে মতোন অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। শহর থেকে বাড়ি আসা যাওয়ায় গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। এখন বেশি ভাড়া নিয়েও উঠানো হচ্ছে পথে পথে যাত্রী। রাস্তাঘাট ভালো থাকার পর পথে পথে থামিয়ে যাত্রী নেয়ার সময়ও লাগছে বেশি। বাস কাউন্টার ও র্টামিনালে সরকারের র্নিধারিত ভাড়ার তালিকা টাঙ্গানোর আগে ছিল। এখোন তাও নেই। এসব যারা দেখবার করার কথা তাদের দেখা নেই বাসটার্মিনালে।
থাকলে যাত্রীরা দ্বিগুন ভাড়া দিত না।
অপর এক যাত্রী ফখর উদ্দিন বলেন, সীমিত আয়ের মানুষ, নিম্ন ও মধ্যআয়ের মানুষ যারা তাদের কথা ভেবে তেলের দাম বাড়ানো উচিত ছিল। আরেক যাত্রী ইন্তাজ আলী বলেন, আমরা বড়ই অসহায়। আমাদের দুঃখ কে দেখবে বা শুনবে। গরিব হয়ে জন্ম নেয়াটাই আমাদের অপরাধ!
লক্ষ্মীপুর বিআরটিএর সহকারী পরিচালক মো: এনায়েত হোসেন মন্টু বলেন, যাত্রীদের নিকট অতিরিক্ত ভাড়া টাকা গ্রহণের অভিযোগ টি সঠিক। জ¦ালানি তেলের দাম বাড়ায় নতুন করে প্রতি কিলোমিটারে ৩৮ পয়সা বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন সরকারের নির্ধারিত প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৮০ পয়সা করা হয়েছে। আর লক্ষ্মীপুর থেকে চট্রগ্রামের দূরত্ব ১৭২.৬২ কিলোমিটার। এর জন্য সরকারি নির্ধারিত ভাড়া আসে ৩১০ টাকা ৭১ পয়সা। চালকরা ইচ্ছে মতোন ভাড়া নিতে পারবে না। এর জন্য ভাড়ার তালিকা বাসটার্মিনালে টানিয়ে দেওয়া হবে। এরপর তা না মানলে ভ্রাম্যমান আদালতে মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হবে। তাহলে চালকরা নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে তাদের ইচ্ছে মতোন ভাড়া নিতে পারবে না।
জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোছাইন আখন্দ জানান,লক্ষ্মীপুর সদর, মজুচৌধুরীর হাট, রায়পুর,রামগঞ্জ,রামগতি পৌর শহরগুলোতে বাস যাত্রীদের সুবিধার্থে ভাড়া তালিকা টানিয়ে দেওয়া হবে। ওই ভাড়ার ব্যতীত কেউ অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষনিক আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। ্এছাড়া নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি নেওয়া হলে ভ্রাম্যমান আদালতে মাধ্যমে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।