ঘূর্ণিঝড় জোয়াদের প্রভাবে ফরিদপুরে দুদিনের টানা বৃষ্টিতে চলতি মৌসুমী ফসলে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে মুড়িকাটা পেঁয়াজ, দানা পেঁয়াজের ক্ষেত, হালি ঁেপয়াজের বীজতলাসহ রবি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এসব ফসলের ক্ষেত এখন বৃষ্টির পানিতে নিমজ্জিত হয়ে আছে। কৃষি বিভাগ বলছে, প্রাথমিক ভাবে জেলায় চলতি মৌসুমের ২০ হাজার ১০১ হেক্টর ফসলের জমি বৃষ্টির পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।
কালোসোনা খ্যাত পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনকারী (কৃষপদক প্রপ্ত) চাষি শাহীদা বেগম জানান, প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও ব্যাপক ভাবে পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনের জন্য পেঁয়াজের ভাল্ব (পেঁয়াজ) জমিতে রোপন করা হয়েছে। অনেক জমির পেঁয়াজ গজিয়ে সবজু আকার ধারণ করেছে, অনেক জমির পেঁয়াজ গজিয়ে উঠতে শুরু করেছে। আবার অনেক জমিতে সবেমাত্র রোপন করা হয়েছে। হঠাৎ করে বৃষ্টিতে এসব জমিতে পানি জমে গেছে। দ্রুত পানি সরে না গেলে আমার ৩৫বিঘা জমিতে রোপনকৃত পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যাবে। আমি কয়েক কয়েক লক্ষ টাকার ক্ষতির মধ্যে পড়ে গেছি। আর বৃষ্টি না হলে এবং দ্রুত পানি নেমে গেলে ক্ষতির পরিমান কিছুটা কমে আসবে।
ঘূর্ণিঝড় জোয়াদের প্রভাবে ফরিদপুরে দুদিনের টানা বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে মুড়িকাটা পেঁয়াজ। দেশে মোট উৎপাদিত পেঁয়াজের দ্বিতীয় স্থানে আছে ফরিদপুর জেলা। চাষিদের ক্ষেতে এখন মুড়িকাটা পেঁয়াজ শোভাপাচ্ছে। আর কয়েকদিন পরে এ পেঁয়াজ ঘরে উঠবে। চলতি মৌসুমে জেলায় আবাদ হয়েছে পাঁচ হাজারের অধিক জমিতে। চাষীরা এখন ক্ষেত থেকে সেই পেঁয়াজ ঘড়ে তোলার অপেক্ষায় রয়েছে। কিন্তু হঠাৎ ঘূর্ণিঝড় জোয়াদের প্রভাবে গত দুইদিন টানা বৃষ্টিতে পেঁয়াজ ক্ষেত লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। বৃষ্টির পানিতে নিমজ্জিত হয়ে আছে পেয়াজের ক্ষেত। বৃষ্টির পানি স্থায়ী হলে পেঁয়াজে পচন ধরার আশঙ্কা করছে চাষিরা।
জেলা সদর উপজেলার চরমাধবদিয়া ও অম্বিকাপুর মাঠে গিয়ে দেখা যায় মুড়িকাটা পেঁয়াজের ক্ষেত এবং দানা পেঁয়াজের ক্ষেত বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে আছে। চাষীরা বলছেন, এক বিঘা জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ খরচ ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার বেশি। জেলার অধিকাংশ ক্ষেত থেকে চাষীরা আগামী সপ্তাহ খানিকের পেঁয়াজ তুলার কাজ শুরু করবে। কিন্তু এখন বাধা হয়ে দাড়িয়েছে ঘূর্ণিঝড় জোয়াদের প্রভাব। ক্ষেতে পানি জমে থাকায় নামতে পারছে না চাষী।
জেলায় শুধু মুড়িকাটা পেঁয়াজ নয়, ক্ষেত তলিয়েছে রশুন, আলু ও সরিষার। আকর্ষিক বৃষ্টিতে সরিষার ফুল ঝড়ে গেছে। আলু ক্ষেতের ডুবে যাওয়ায় গাছে পচন শুরু হবে।
চাষিরা জানায়, ভাবতে পারিনি এ সময় এভাবে বৃষ্টি হবে। এখন পেঁয়াজ ঘরে তোলা সময়, কিন্তু বৈরী আবহাওয়া ক্ষেতে পানি জমে গেছে। চলতি মৌসুমে মাঠে যে ফসল আছে সবই ক্ষতির মধ্যে। কিভাবে চলবো, আর পুজি উঠবে কি ভাবে, সেই চিন্তায় দিশে হারা আমরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফরিদপুরের উপপরিচালক কৃষিবিদ ড. মো: হযরত আলী জানান, দূযোগপূর্ণ আবহাওয়ার ফলে বৃষ্টিতে জেলার ২০ হাজার ১০১হেক্টর জমিতে নিমজ্জিত হয়েছে। আমরা চেষ্টা করবো কৃষকদের এই ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়া জন্য অন্য ফসলের প্রণোদনা দিতে।