গত সোমবার সকাল থেকে হচ্ছে বিরামহীন বৃষ্টি। ফলে বেহাল হয়ে পড়েছে সরাইল উপজেলার সরাইল-অরুয়াইল সড়ক। কাঁদা পানিতে একাকার। আটকে যাচ্ছে যানবাহনের চাকা। বাড়ছে ঝুঁকি। ফলে উপজেলা সদরের সাথে পাকশিমুল, অরুয়াইল ইউনিয়নসহ নাসিনগর ইউনিয়নের ২০ গ্রামের মানুষের যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়েছে। যানবাহন চলাচল বিঘিœত হওয়ায় জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। রাস্তায় গাড়ি না থাকায় হেঁটেই চলেছে মানুষ।
সরজমিনে গেলে এলাকাবাসীর এলাকাবাসী জানায়, ২দিনের বৃষ্টিতে অরুয়াইল - সরাইল সড়কের চুন্টা থেকে ভুইশ্বর বাজার পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার অংশে পানি ও কাঁদা জমে যাওয়ায় সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। জরুরী কাজে মেঘনার নৌ-পথে আশুগঞ্জ হয়ে জেলা সদরে যাচ্ছে মানুষ।
অরুয়াইল আবদুস সাত্তার কলেজ কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল ইকবাল হোসেন মৃধা জানান, সরাইল সদর থেকে অরুয়াইলে আসার একমাত্র সড়ক এটি। বৃষ্টির কারণে ১২ কিলোমিটার রাস্তার ৩ কিলোমিটারই এখন ধানের জমির আকার ধারণ করেছে। যানবাহন দূরের কথা মানুষই খালি পায়ে হাঁটতে পারছেন না। ফলে উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষার দায়িত্বপালনের জন্য জুতা হাতে নিয়ে কর্দমাক্ত পিচ্ছিল সড়কের ৩ কিলোমিটার রাস্তা পায়ে হেঁটে কেন্দ্র পৌছতে হলো তাঁদের।
অরুয়াইল স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উপসহকারি কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ইউসুফ মিয়া জানান,কাঁদার কারণে রাস্তায় কোন গাড়ি ছিল না।রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ। সাবানের মতো পিচ্ছিল। দুইবার পিছল খেয়ে পড়ে গেছেন। অফিসের বিশেষ কাজে সরাইল সদরে গিয়েছিলেন তিনি। হাঁটতে হাঁটতে তাঁর পায়ে ব্যথা করছে।
বরইচারা গ্রামের লিয়াকত মিয়া জানান, বৃষ্টির কারণে রাস্তাটি কাদা হয়ে যাওয়ায় তিনি তাঁর অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। কারণ এই কর্দমাক্ত ভাঙ্গা রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলেনা।
ষষ্ঠ শ্রেনির ছাত্র আদিম রাজা বলেন,' আজ দুপুর ১২ টায় আমাদের স্কুলে ভর্তি পরীক্ষা। রাস্তার অবস্থা খারাপ। রাস্তায় রিকশা সিএনজি কোনটাই নাই। তাই বৃষ্টিতে ভিজেই স্কুল যাচ্ছি। সকাল থেকে বৃষ্টি। ১মিনিটের জন্যও থামিনি। পরীক্ষা তো দিতে হবে। তাই হেঁটেই কাদা -পানি ভেঙে স্কুলে যাচ্ছি।
সিএনজি চালক আক্তার হোসেন জানান, অরুয়াইল- সরাইল রাস্তা যেন কাদা ভরা চাষের জমি।কাদা আর পানিতে চুন্টা পর্যন্ত একাকার হয়ে গেছে। শুনেছি ৩/৪ টি গাড়ি উল্টে গেছে। তাই গাড়ি গ্যারেজে রেখে দিয়ে আসলাম। আজ আর গাড়ি নিয়ে বের হবো না।
দুই বছর আগে ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কটির সাড়ে ১১ কিলোমিটার অংশের সংস্কার করা হয়। বাকি রয়েছে চুন্টা ইউনিয়নের ঘাগড়াজোর থেকে পাকশিমুল ইউনিয়নের ভূঈশ্বরবাজার পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার অংশ। এ অংশটি পুরোপুরি হাওরের মধ্যে পড়েছে। প্রতিবছর বর্ষার ভাঙনে পড়ে ওই অংশটুকুর অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে। দুইদিনের বৃষ্টিতে রাস্তার এই ভাঙ্গা অংশটি যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
অরুয়াইল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, উপজেলার উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগের একমাত্র সড়ক এটি। অথচ পাঁচ বছর ধরে সড়কটির ভুইশ্বর থেকে চুন্টা পর্যন্ত বেহাল অবস্থায় আছে। দুইদিনের বৃষ্টিতে রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে যান চলাচল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ আছে। ফলে ২০গ্রামের মানুষ চরম দূর্ভোগে পড়েছে। রাস্তাটি দ্রুত সংস্কার না করা হলে এলাকার মানুষ নিয়ে গণ-অনশন নামবো।
এলজিইডির উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী মাসুদুর রহমান জানান, সড়কটির মাঝখানের আড়াই কিলোমিটার অংশের সংস্কার কাজের জন্য ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ঠিকাদারও নিয়োগ হয়েছে। ৮/১০ দিনের মধ্যেই রাস্তার কাজ শুরু হয়ে যাবে। মানুষের আর দূর্ভোগ থাকবে না।