নীলফামারীর সৈয়দপুর ১৯৭১ সালের ১৮ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয়। মুক্তি বাহিনী ও মিত্র বাহিনীর দূর্বার আক্রমণে পর্যদস্ত হয়ে হানাদার পাক বাহিনী ও তাদের অবাঙ্গালী দোসর সৈয়দপুর শহরে জড়ো হয়ে দুর্ভেদ্য বুহ্য গড়ে তোলে। যৌথ বাহিনী তৎকালীন মহকুমা নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলার ভারতীয় সীমান্ত ক্যাম্প হিমকুমারী থেকে মিত্র বাহিনী নীলফামারী শহরের নটখানায় ক্যাম্প স্থাপন করে। এর আগেই বিনা লড়াইয়ে ১৩ ডিসেম্বর নীলফামারী শত্রু মুক্ত হয়।
১৮ ডিসেম্বর সকালে মুক্তি বাহিনী ও মিত্র বাহিনী যৌথভাবে ট্যাংক বহর নিয়ে সৈয়দপুর শহরের ওয়াপদা এলাকায় অবস্থান নেয়। এর নের্তৃত্বে ছিলেন মিত্র বাহিনীর কমান্ডার কর্নেল জোগল ও মেজর কান্ত পাল এবং মুক্তি বাহিনীর ৬নং সেক্টরের সি সাব সেক্টরের কমান্ডার ক্যাপ্টেন ইকবাল ও মুক্তি বাহিনী দলের যুদ্ধকালীন কমান্ডার সামশুল হক সরকার। এ বহর থেকে মিত্র বাহিনী সৈয়দপুর সেনানিবাসে তার বার্তায় হানাদার পাকিস্তানী বাহিনীকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ পাঠানো হয়। এরপর বিনা বাঁধায় মিত্র বাহিনী সৈয়দপুর সেনানিবাসে প্রবেশ করে পাক বাহিনীকে নিরস্ত্র করে। এর পরই হানাদার মুক্ত হয় সৈয়দপুর। ১৬ ডিসেম্বর দেশ শত্রু মুক্ত হলে অবাঙ্গালী অধ্যুষিত সৈয়দপুরে বিজয় আসে দুদিন পর ১৮ ডিসেম্বর।
মুক্তি বাহিনী দলের তৎকালীন যুদ্ধকালীন এক কমান্ডার জানান, রংপুর, দিনাজপুর,নীলফামারী ও পার্বতীপুর থেকে মার খেয়ে পাক বাহিনী সৈয়দপুর সেনানিবাসে আশ্রয় নেয়। এ সময় তাদের দোসর অবাঙ্গালী, রাজাকার, আলবদর ও আল শামস বাহিনী সৈয়দপুর শহরে জড়ো হয়। ফলে তাদের মোকাবেলার সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে দুদিন পর সৈয়দপুরে প্রবেশ করে যৌথ বাহিনী। তবে যুদ্ধের সব প্রস্তুতি থাকলেও হানাদার পাক বাহিনী যুদ্ধ ছাড়াই আত্মসমর্পণ করে।
এ ব্যাপারে বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক কমান্ডার একরামুল হক সরকার জানান, সৈয়দপুর হানাদার মুক্ত হওয়ার খবর পেয়ে বিজয়ের আনন্দে হাজার হাজার জনতা রাস্তায় নেমে আসে। এদিন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা কাজী ওমর আলী আওয়ামী লীগ অফিস ও সৈয়দপুর পৌরসভায় স্বাধীন পতাকা উড়িয়ে দেন। এ সময় মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল উপস্থিত ছিলেন।
এখন অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ১৮ ডিসেম্বর সৈয়দপুর হানাদার মুক্ত দিবস এবং একটি ঐতিহাসিক দিন। এ দিবসটি বিশেষ করে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে পালন করা উচিৎ। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও দিনটি পালনে তারা নির্বিকার ভুমিকা রাখে। যার ফলে নিরবে নিভৃতে হারিয়ে যাচ্ছে মুক্ত দিবসের ঐতিহাসিক তাৎপর্য।