রাজশাহী কোর্ট কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষানবিশ আইনজীবী শাহিন আলম ওরফে শাহেন শাহ্্ হত্যা মামলার রায়ে বিএনপিপন্থি এক সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ ৯ জনের মৃত্যুদন্ড এবং ২২ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (০৯ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক ওএইচএম ইলিয়াস হোসেন এই রায় ঘোষণা করেন। মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ৯ জনের প্রত্যেককে এক লাখ করে টাকাও জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়াও যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত ২২ জনের প্রত্যেককে ৫০ হাজার করে টাকা জরিমানা করা হয়। আর এ জরিমানার অর্থ ভিকটিমের পরিবারের নিকট হস্তান্তর করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন বিচারক। এর আগে চাঞ্চল্যকর এই মামলার রায় ঘোষণা ১২ বারের মতো পেছানো হয়েছিল। মামলায় ২৪ জন সাক্ষীর মধ্যে আদালত ১৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন। এ মামলায় উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হয় গত বছরের ১১ নভেম্বর।
মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত নয়জন হলেন- রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক) ১নং ওয়ার্ডের বিএনপিপন্থি সাবেক কাউন্সিলর মুনসুর রহমান। মৃত খলিলুর রহমানের ছেলে হাসানুজ্জামান হিমেল ও তৗফিকুল ইসলাম চাঁদ, গিয়াস উদ্দিনের ছেলে মহাসীন, মৃত ওয়াহেদ আলীর ছেলে সাইরুল, নুহু শেখের ছেলে রজব, মৃত আক্কাস আলীর ছেলে বিপ্লব, আবদুস সালামের ছেলে আরিফুল ইসলাম ও গোলসের কসায়ের ছেলে মমিন।
আর যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত ২২ জন হলেন- মৃত তাজু শেখের ছেলে সাত্তার, গিয়াস উদ্দিন ওরফে গেসুর ছেলে মাহাবুল, মৃত আজিম আলীর ছেলে সাজ্জাদ হোসেন, মৃত ঝড়- শেখের ছেলে বখতিয়ার আলম রানা ওরফে রংলাল ও হাসান আলী, মৃত লিয়াকত মন্ডল ওরফে লেক মন্ডলের ছেলে মাসুদ, মৃত তাইদের ছেলে রাসেল, ইমদাদুল হকের ছেলে রাজা, মজিবর রহমানের ছেলে মুর্তুজা, মোস্তফার ছেলে সুমন, মহাসীনের ছেলে আসাদুল ও আখতারুল, মৃত আবদুস সামাদের ছেলে জইদুর রহমান, মৃত গোলাপ শেখের ছেলে ফরমান আলী, মৃত খলিলুর রহমানের ছেলে জয়নাল আবেদীন, রেজাউল করিমের ছেলে রাজু আহম্মেদ, মৃত মাজদার আলীর ছেলে আকবর আলী, মৃত ওয়াহেদ আলীর ছেলে স¤্রাট হোসেন, মৃত ওয়াজেদ আলী ওরফে ওজার ছেলে লাল মোহাম্মদ ওরফে লালু ও টিয়া আলম, আজিম আলীর ছেলে আজাদ হোসেন ও মৃত ওয়াহেদ কসাইয়ের ছেলে মাসুম।
মামলা সুত্রে জানা গেছে, নিহত শাহিন শাহ রাসিকের বর্তমান প্যানেল মেয়র-২ ও এক নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রজব আলীর ছোট ভাই। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত ২০১৩ সালের ২৮ আগস্ট দুপুরে মটরসাইকেল যোগে নগরীর ক্লাব মোড় অতিক্রম করার সময় প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হন শাহিন শাহ। এ হত্যার ঘটনায় নিহত শাহিনের ছোট ভাই রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাহিদ আক্তার নাহান বাদী হয়ে ২৯ আগস্ট নগরীর রাজপাড়া থানায় ২৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ২৫-৩০ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। তদন্তের পর রাসিকের তৎকালীন এক নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মুনসুর রহমানসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান। এরপর মামলাটি দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। পরে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে মামলাটি বিচারের জন্য রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট মুসাব্বিরুল ইসলাম। মামলায় আসামি পক্ষের আইনজীবী ছিলেন হামিদুল হক।