জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল স্থাপন নিয়ে কটূক্তি ও বিতর্কিত মন্তব্য করা রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলীকে সাময়িক বরখাস্ত করেছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ওই মন্ত্রনালয় থেকে জারিকৃত আদেশ সংক্রান্ত চিঠি রাজশাহী জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) বিকেলে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন রাজশাহীর জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আবদুল জলিল।
এ বিষয়ে ডিসি আবদুল জলিল বলেন, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপন নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের দায়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তারকৃত কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলীকে সাময়িক বরখাস্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। বৃহস্পতিবার রাতে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব ফারজানা মান্নান স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে এই নির্দেশনা এসেছে।
ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আব্বাস আলী কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সেবা গ্রহণকারীরা বঞ্চিত হচ্ছেন; যা পৌরসভার স্বার্থের পরিপন্থী ও প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণ থেকে সমীচীন নয়। তাই আব্বাস আলীকে স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন মোতাবেক সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা যুক্তিযুক্ত। এছাড়াও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ আসার পর মেয়র আব্বাস আলীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার পরও জবাব পায়নি বলেও বরখাস্তকৃত প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করেছেন স্থানীয় সরকার বিভাগ।
এদিকে, তিনদিন জিজ্ঞাসাবাদের পর আদালতের মাধ্যমে মেয়র আব্বাসকে বৃহস্পতিবার রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে জাতির জনকের ম্যুরাল স্থাপন নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলীর বিরুদ্ধে গত ২৩ নভেম্বর রাতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করা হয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তরের অনুমোদনের পর ২৪ নভেম্বর মামলাটি গ্রহণ করা হয়। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক) ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আবদুল মোমিন বাদী হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেন। মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পান বোয়ালিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শাহাবুল আলম। এরপর রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলী গা ঢাকা দেন।
প্রসজ্ঞত, নৌকা প্রতীকে দুইবারের নির্বাচিত রাজশাহীর কাটাখালি পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলী সম্প্রতি একটি বৈঠকে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কের পৌরসভার অংশের উন্নয়নকাজ নিয়ে কথা বলার সময় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করেন। গত ২২ নভেম্বর রাত থেকে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটুক্তিকৃত মেয়র আব্বাস আলীর দুটি অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অন্য আরেকটি অডিওতে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক) মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের সমালোচনা করা হয়। ঘরোয়া বৈঠকের ওই কথোপকথনে অশ্লীল ভাষায় গালাগালও রয়েছে। এ দুটি অডিও ছড়িয়ে পড়ার পর রাজশাহীতে তোলপাড় শুরু হয়। এ ঘটনায় মেয়র আব্বাস আলীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। এরপর জেলা ও কাটাখালী পৌরসভা আওয়ামী লীগের পদ থেকে তাকে বহিস্কার করা হয়। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে তাকে স্থায়ীভাবে বহিস্কারের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটিকে সুপারিশ করেন জেলা আওয়ামী লীগ। আর তখন থেকেই গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন। এছাড়াও কাটাখালী পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর খোকনুজ্জামান মাসুদ বিতর্কিত এই মেয়রকে ধরিয়ে দিতে এক লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেন।