রক্তের দাগ শুকানোর আগেই আমরা অযোগ্য ঘোষিত হলাম। কিন্তু কেন? ঘোষিত কমিটিতে যাদের আনা হয়েছে, তারা কি আমাদের চেয়ে যোগ্য? আন্দোলন সংগ্রাম, মানবতার সেবায় ও হাজারো কর্মসূচি পালনে আমাদের অযোগ্যতা কোথায়? সারাদেশে বিএনপির রাজনীতি চর্চায় অন্যতম মডেল খুলনা মহানগর বিএনপি কেন আক্রমণের শিকার?
খুলনা বিএনপি থেকে বাদ পড়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এমন আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জু।
ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, দল গঠনে নেতৃত্বে প্রাধান্য পেয়েছে শহরের বড় ছিনতাইকারী, কর্মীর খুনীর সহযোগী, মাদক কারবারি, মোটরসাইকেল চোর, ক্লাব পাড়ার মাতাল জুয়াড়ি। পদবঞ্চিত হয়েছে আন্দোলন সংগ্রামে সাহসী ভূমিকা পালনকারীরা, সাবেক ছাত্রনেতা মরহুম এসএম কামালের মত রাজপথের সাহসী নেতৃত্বকে পদহীন হয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে হয়েছে, তার মৃত্যুর পর কতিপয় ব্যক্তির মায়া কান্না ও অভিনয় দেখেছে দলের নেতা কর্মীরা ও জনগণ।
সদ্য কেন্দ্র থেকে ঘোষিত খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপির কমিটি নিয়ে শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) ফেসবুকে দেওয়া এই স্ট্যাটাসে নানা প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। একইসঙ্গে তার অনুসারীদের ধৈর্যধারণ ও পরবর্তী করণীয় বিষয়ে মতবিনিময় করবেন বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া খুলনা বিএনপির সার্বিক বিষয় নিয়ে দু-এক দিনের মধ্যে সংবাদ সম্মেলনে আসবেন বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
সদ্য বিদায়ী মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু ফেসবুকে তার দেওয়া স্ট্যাটাসে লিখেছেন, সারাদেশ খুলনার দিকে তাকিয়ে থাকে যে খুলনায় বিএনপি কর্মীরা যে কোন সরকার বিরোধী কর্মসূচিতে শক্ত প্রতিবাদ জানাবে, তাইতো খুলনা বিএনপি সকলের সেরা। সেই বিএনপিকে নিয়ে দলের এ অবহেলা কেন?
আরও উল্লেখ করেছেন, যারা দল প্রতিষ্ঠার ৪৪ বছরে ৪৪ দিন খুলনায় আসেনি, থাকেনি দল ও দলের নেতা কর্মীদের পাশে, তিনটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যাদের কোন ভূমিকা ছিল না, পড়েনি কখনো মিথ্যা মামলায়, থাকেনি আহত কর্মীর পাশে, পড়েনি জানাজা, ছিল না দাফনে ও আহত কর্মীর চিকিৎসা সেবায়। যারা এই শহরের পাঁচটা রাস্তার নাম জানেনা, বলতে পারবেনা পাঁচজন বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম, পাঁচজন খ্যাতনামা ডাক্তারের নাম, পাঁচজন গুণীজনের নাম, পাঁচজন শিক্ষাবিদের নাম। যারা মাঠের কর্মীদের চেনে না, যারা নির্বাচন করতে এসে বিএনপি অফিস চিনেছে, চিনেছে আদালত পাড়া ও হাসপাতাল। দুই দফা করোনাকালে যাদের জনগণ পাশে পায়নি, তারা চায় খুলনা বিএনপির কর্তৃত্ব, ধিক তাদের প্রতি।
তিনি আরও লিখেছেন, দুঃশাসনের ১২ বছরে দেশনেত্রীকে নিয়ে তিনটি মহাসমাবেশ লংমার্চ, রোড মার্চ, গণঅবস্থান, গণঅনশন রাজপথ, রেলপথ ঘেরাও, হরতাল-অবরোধে কি কখনো তারা দলের পাশে কর্মীর পাশে ছিল? তাহলে কেন তাদের প্রেসক্রিপশনে দল গঠিত হবে? কেন রাজপথের ত্যাগী নেতা কর্মীরা অবমূল্যায়িত হবে, এ প্রশ্ন সবার।
গত চার বছর তাদের হাতে গড়া যুবদল, স্বেচ্ছাসেবকদল ও ছাত্র দল পরিপূর্ণতা পায়নি, গড়ে ওঠেনি মাঠের, সংগঠনে হয়েছে বিভক্তি, বেড়েছে অসন্তোষ, গড়েছে ব্যক্তির সমর্থক গোষ্ঠি।
অভিযোগে ইঙ্গিত করে তিনি বলেছেন, গত চার বছর ঢাকায় বসেছে দুই নেতার নানা ষড়যন্ত্রের বৈঠক, ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে অনেক নেতাকর্মীকে। বলা হয়েছে, মঞ্জু-মনির সাথে থাকলে পদ পাওয়া যাবে না, বিকল্প বিএনপি তৈরি করে প্যারালাল কর্মসূচি পালনের ব্যর্থ চেষ্টা করা হয়েছে, খুলনা মহানগর বিএনপির কর্মসূচিতে আসতে নিষেধ করা হয়েছে, এজন্য চালু করা হয়েছে টোপের রাজনীতি।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ৪৪ বছরে গড়ে ওঠা আমাদের ঐতিহ্যের সংগঠন আন্দোলন সংগ্রামের প্রাণশক্তি কর্মীগড়ার সংগঠন আমাদের গর্বের অহংকারের জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলে দুর্বৃত্ত নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, কলুষিত করা হয়েছে ছাত্র রাজনীতিকে। ৪৪ বছরে তৈরি করা আমাদের কর্মীদের বিপথগামী করা ও আমাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিছু পদলোভী বিবেকবর্জিত দুর্বল চিত্তের কর্মী ছাড়া সকলেই আমাদের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করে রাজনীতি করেছে। এ সকল বিষয় দলের সর্বোচ্চ নেতা ও ফোরামে উপস্থাপন করা হয়েছে। তারপরও একে একে চলেছে দল বিধ্বংসী কর্মকান্ড।
দীর্ঘ স্ট্যাটাসে তিনি আরও লিখেছেন, সরকার চায় বিএনপি দুর্বল হোক এবং আমাদের মাঝে কিছু ব্যক্তির চাওয়া একই। তাহলে কি আমরা আমাদের ধ্বংস চেয়ে চেয়ে দেখবো, নিশ্চয় না। রাজনৈতিক কর্মীরা অন্যায় অসত্যের বিরুদ্ধে কথা বলবে, করবে সত্য প্রতিষ্ঠার আন্দোলন এবং এর কোন সীমা রেখা নেই।
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, দলের এ সংকটে প্রয়োজন ধৈয্য, ঐক্যবদ্ধতা ও আগামীর রাজনীতি নিয়ে সুচিন্তিত সুস্থ ভাবনা এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপ।
এক্ষেত্রে আমি সকলের সাথে পরামর্শ করবো, মতবিনিময় করবো এবং একটি প্রতিবাদী কর্মসূচি দাঁড় করাবো ইনশাআল্লাহ এবং সেটি হবে দলের স্বার্থে ও নিয়মতান্ত্রিক। আমাদের সকলের দায়িত্ব ধৈর্য ধারণ করা, সকল নেতাকর্মীর সাথে কথা বলা, বিভ্রান্ত না হওয়া, জনমত গড়ে তোলা ও মহান রব্বুল আলামিনের কৃপা কামনা করা দু-এক দিনের মধ্যে তিনি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে খুলনা বিএনপিতে ঘটে যাওয়া সকল বিষয় উপস্থাপন করবেন বলেও উল্লেখ করেন নজরুল ইসলাম মঞ্জু।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) অ্যাডভোকেট এসএম শফিকুল আলম মনাকে আহবায়ক, তরিকুল ইসলাম জহিরকে ১নং যুগ্ম-আহ্বায়ক ও মোঃ শফিকুল আলম তুহিনকে সদস্য সচিব করে খুলনা মহানগর এবং আমির এজাজ খানকে আহবায়ক, আবু হোসেন বাবুকে ১নং যুগ্ম-আহবায়ক ও মনিরুল হাসান বাপ্পিকে সদস্য সচিব করে খুলনা জেলা বিএনপির আংশিক আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্র।