ভূমিহীন হওয়ায় পুলিশ কনস্টবল পদে চাকরি না পাওয়ার ঘটনায় গত কয়েকদিন থেকে দেশজুড়ে আলোচিত বরিশালের হিজলা উপজেলার বাসিন্দা ভূমিহীন আসপিয়া ইসলাম কাজল বলেন, আমার মতো পিতৃহারা অসহায় একটি মেয়ের জন্য মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কথা বলেছেন, নির্দেশনা দিয়েছেন। এতে আমি আনন্দে অভিভূত।
আসপিয়া আরও বলেন, এ দিনটি আমার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা কখনো শেষ হবেনা। আমিসহ আমার অসহায় পরিবারের সবাই মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করছি, তিনি যেন মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দীর্ঘ ও সুস্থ জীবন-যাপন দান করেন।
রোববার সকালে জেলা প্রশাসক মোঃ জসীম উদ্দীন হায়দার জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আসপিয়া ইসলাম কাজল ও তার পরিবারের সদস্যদের স্থায়ী ঠিকানার জন্য ঘর নির্মাণের জমি নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর তৃতীয় ধাপের আওতায় জেলার হিজলা উপজেলার বড়জালিয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড খুন্না গোবিন্দপুর গ্রামের খুন্না গোবিন্দপুর মৌজার ১নং খাস খতিয়ানে আসপিয়া ও তার পরিবারের জন্য দুই শতক জমি নির্ধারণ করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ১০ ডিসেম্বর সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোঃ তোফাজ্জল হোসেন মিয়া ফোন করে জানিয়েছেন, আসপিয়ার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর হয়েছে। আসপিয়া যাতে কনস্টবল পদে চাকরি পায় সেজন্য প্রধানমন্ত্রী সরকারী জমিতে আসপিয়াদের জন্য ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, জেলা পুলিশে ট্র্রেইনি রিক্রুট কনস্টবল (টিআরসি) পদে নিয়োগ পরীক্ষায় একে একে সাতটি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মেধা তালিকায় পঞ্চম হয় আসপিয়া ইসলাম কাজল। কিন্তু বরিশাল জেলায় তার স্থায়ী ভূমি না থাকায় চাকরির প্রক্রিয়া আটকে যায়। এমন খবর নেট জগতে ভাইরাল হলে বিষয়টি নজরে আসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। এরপর আইনি জটিলতা নিরসনে সকল বিষয়ে উত্তীর্ণ হওয়া আসপিয়ার পুলিশি চাকরি দেয়ার ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
আসপিয়া বলেন, বাবা মারা যাওয়ার পর আমাদের সংসারে অভাব অনটন ঘিরে ধরেছে। তাই একটি চাকরি আমার কাছে স্বপ্নের মতো। এখন মনে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর মানবিকতায় সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে। কনস্টবল পদে চাকরি হলে যতোদিন চাকরিতে থাকবো ততোদিন নিষ্ঠার সাথে অর্পিত দায়িত্ব পালন করবো।
জেলা পুলিশের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টবল (টিআরসি) পদের নিয়োগ কমিটির সভাপতি জেলা পুলিশ সুপার মোঃ মারুফ হোসেন বলেন, পুলিশ কনস্টবল পদে আসপিয়ার নিয়োগ বাতিল করা হয়নি। নিয়োগ আবেদনে তার স্থায়ী ঠিকানা ভুল উল্লেখ ছিল। বিষয়টি ভেরিফিকেশনে উঠে আসে। তবে তার চাকরি হবেনা, এটা কখনো বলা হয়নি। আসপিয়া যেন এ কারণে নিয়োগবঞ্চিত না হয়, সেজন্য নিয়মের মধ্যে থেকে করণীয় সম্পর্কে ভাবা হচ্ছে।
পুলিশ তদন্তে স্থায়ী আবাস না পাওয়ায় চাকরি নিয়ে শঙ্কা সৃষ্টি হওয়া আসপিয়া ইসলাম কাজলের ‘ভূমিহীন’ হওয়ার গল্পটি জানিয়েছেন তার চাচা মোশারেফ হোসেন মাতুব্বর। তিনি বলেন, আসপিয়ার মা-বাবা পরিবারের অমতে বিয়ে করায় মূলত দূরত্বের সৃষ্টি হয়। আসপিয়ার বাবা মৃত শফিকৃল ইসলাম ছিলেন জেদি প্রকৃতির মানুষ। সে কারণে তিনি লড়াই করে পরিবারে ফিরে যাননি।
ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার আমিনাবাদ ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের মকবুল হোসেন মাতুব্বরের পুত্র ব্যবসায়ী মোশারেফ হোসেন আরও বলেন, আমার বড় ভাই আমির হোসেন তখন হিজলা উপজেলা গণস্বাস্থ্য প্রকৌশলী। সেখানে বাসা ভাড়া করে থাকতেন। বড় ভাইয়ের সাথে শফিকুল থাকত। ১৯৯০ কিংবা ১৯৯১ সালে বড় ভাই বদলী হয়ে পিরোজপুরে যান। সেখানে তার বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতো ঝরনা বেগম। তার (ঝরনা) বাড়ি পিরোজপুর সদরে। ওই বাসায় থেকে শফিকুল ও ঝরনার মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে তারা দু’জনে পালিয়ে হিজলায় গিয়ে বিয়ে করেন। কাজের মেয়েকে বিয়ে করার বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি পরিবার। তাই শফিকুলকে বাড়িতে উঠতে বাঁধা দেয়া থেকেই দূরত্ব তৈরি হয়। সেইথেকেই ওরা ‘এক ধরনের ভূমিহীন’ হয়ে পরে এবং দীর্ঘবছর ধরে হিজলা উপজেলায় বসবাস করেন। ২০১৯ সালের প্রথম রমজানের দিন রাতে শফিকুল মারা যায়।