নীলফামারীর সৈয়দপুরে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থীর বাড়িতে মধ্যরাতে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে ৩ টি গরুসহ ১৫ টি ঘরের সর্বস্ব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আসবাবপত্র, স্বর্ণালংকার, ধান, নগদ টাকাসহ প্রায় ২০ লাখ টাকা মূল্যের সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আগুনে অবরুদ্ধ হয়ে পড়া ৫ টি পরিবারের ৩৫ জন মানুষ অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে। ১১ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের উত্তর সোনাখুলী কাচারীপাড়ার এ অগ্নিকাণ্ড পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে মৃত দাউদ আলীর ছেলে জুলফিকার আলী ভুট্টু বলেন, রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে আগুনের আঁচ টের পাই। দ্রত উঠে দেখি বাড়ির প্রধান গেট ও সংলগ্ন দুইটি রুমের চালে আগুন জ্বলছে। মূহুর্তে তা অন্য ঘরগুলোর চালেও ছড়িয়ে পড়ে।
আমার আর্তচিৎকারে বাড়ির সকলে জেগে উঠলেও গেটে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলার কারণে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ি। পরে টয়লেটের ছাঁদ দিয়ে দেয়াল টপকে বাইরে গিয়ে একটি কাঠের জ্বানালা ভেঙ্গে সকলকে উদ্ধার করি। ইতোমধ্যে আগুনের লেলিহান শিখায় পুরো বাড়ি আচ্ছন্ন হয়ে যায়।
অতিকষ্টে ৩ টি মোটর সাইকেল বের করতে পারলেও ১৫ টি ঘরের সর্বস্ব পুড়ে গেছে। নয় মাসের গাভীন একটি গাভী, একটি ষাড় ও একটি বাছুর পুড়ে কয়লা এবং নগদ অর্থ, স্বর্ণালংকার, আসবাবপত্র, টিভি, ফ্রিজ, বই-সার্টিফিকেট, দলিল-দস্তাবেজ সহ ধান-চাল সব ছাই হয়েছে। ৫ টি পরিবার একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছি। প্রায় ২০ লাখ টাকার ক্ষতি সাধিত হয়েছে।
মৃত রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে পশু চিকিৎসক ডাঃ আবেদ আলী বলেন, মানুষগুলো যে প্রাণে বেঁচে গেছি এটাতেই আল্লাহতায়ালার অশেষ শুকরিয়া। এটা পরিকল্পিত ঘটনা। আমার ভাতিজা জাহাঙ্গীর আলম চলমান ইউপি নির্বাচনে বোতলাগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত হাতপাখা মার্কার প্রার্থী। তাকে ভোট থেকে দমিয়ে দিতেই স্বপরিবারে হত্যার অপচেষ্টা।
কারণ বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হলে বাড়ির বাইরে উঠানে প্রায় ১৫ ফুট দূরে থাকা ধানের পালায় এবং প্রধান গেট থেকে প্রায় ৪০ ফুট পশ্চিমে আমার রুমে আগুন লাগলো কিভাবে। তাছাড়া সে সময়েও বাড়িতে বৈদ্যুতিক বাতি জ্বলছিল।
তিনি অভিযোগ করে বলেম, খবর দেয়ার প্রায় ১ ঘন্টা পরে ফায়ার সার্ভিস আসে। তারা দেরি না করলে হয়তো এত ক্ষতি হতনা। আমার মেয়ে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। তার বই, এডমিট কার্ডও পুড়ে গেছে। ভাতিজিরও একই অবস্থা। আমার ভাই জাবেদুল, সোলেমান, ভাতিজা জুলফিকার আলী ভুট্টু ও জাহাঙ্গীর আলমের সব শেষ হয়েছে।
চেয়ারম্যান প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আগুনের সূচনা বিদ্যুতের শর্ট সার্কিট থেকে হতে পারে। তবে পারিপার্শ্বিক লক্ষণ দেখে মনে হয় ষড়যন্ত্রমূলকভাবে দূর্বৃত্তরাও এটি ঘটাতে পারে। আমরা সকলে একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। এ ব্যাপারে ৬০ লাখ টাকার ক্ষতি উল্লেখ করে সৈয়দপুর থানায় একটি জিডি করেছি।
সৈয়দপুর ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেসন অফিসার খুরশিদ আলম বলেন, খবর পেয়ে সৈয়দপুর ও উত্তরা ইপিজেড ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌছে প্রায় ২ ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়। প্রাথমিকভাবে ধারণা বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত। ক্ষয়ক্ষতির পরিমান তদন্তপূর্বক নির্ধারণ করা হবে।
রোববার দুপুর ২ টায় সৈয়দপুর উপজেলা চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীম হুসাইন, বোতলাগাড়ী ইউপি'র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকার, আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রভাষক আবদুল হাফিজ হাপ্পু (নৌকা), জামায়াতের খয়রাত হাসান বসুনিয়া (চশমা) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
এসময় উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে প্রত্যেক পরিবারকে ৫ টি কম্বল, ২০ কেজি চাল, ৪ লিটার তেল, শুকনা খাবার ও নগদ ৩ হাজার করে টাকা প্রদান করা হয়। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের বই ও পরীক্ষার ব্যবস্থা করে দেন উপজেলা চেয়ারম্যান।