বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী শুধু সরাসরি বা প্রত্যক্ষ রেমিট্যান্সের জন্য প্রণোদনা দেয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু ব্যাংকগুলো পরোক্ষ রেমিট্যান্সের জন্যও প্রণোদনা চাচ্ছে। ফলে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের বিপরীতে প্রণোদনার অর্থ ছাড় নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। পরোক্ষ রেমিট্যান্সের মধ্যে রয়েছে প্রবাসে কর্মরতদের অবসরপ্রাপ্ত সুবিধা, পেনশন তহবিল, প্রভিডেন্ট ফান্ড। তাছাড়া অবসরকালীন ছুটির বেতন-ভাতা, বোনাস ও অন্যান্য গ্র্যাচুইটি এবং অবসর সুবিধাও এর অন্তর্ভুক্ত। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলো ওসব খাতে প্রণোদনার অর্থ চাইলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা ছাড় করছে না। ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রেমিট্যান্স প্রবাহ অব্যাহত গতিতে কমতে থাকায় ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে ২ শতাংশ নগদ প্রণোদনার ঘোষণা দেয়া হয়। তার আলোকে ২০১৯ সালের ৬ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করা হয়। তাতে বলা হয়, বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি প্রবাসীদের কস্টার্জিত বৈদেশিক আয় বৈধ উপায়ে দেশে আসার পর ২ শতাংশ প্রণোদনা দেয়া হবে। সরাসরি বা প্রত্যক্ষ রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে সেটা প্রযোজ্য হবে। কিন্তু পরোক্ষ রেমিট্যান্সে প্রণোদনা দেয়ার নিয়ম নেই। পরোক্ষ রেমিট্যান্স বলতে প্রবাসে কর্মরতদের অবসরপ্রাপ্ত সুবিধা, পেনশন তহবিল, প্রভিডেন্ট ফান্ড, অবসরকালীন ছুটির বেতন-ভাতা, বোনাস ও অন্যান্য গ্র্যাচুইটি এবং অন্যান্য অবসরজনিত সুবিধা বা অন্যান্য আয়কে বোঝায়। কিন্তু প্রবাসীরাও বিভিন্ন দেশ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোতে ফোন করে ওসব রেমিট্যান্সের বিপরীতে প্রণোদনার অর্থ দাবি করছে। এমন পরিস্থিতিতে ওই বিষয়ে মত চেয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, বিগত ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে বৈধ উপায়ে যেসব প্রত্যক্ষ রেমিট্যান্স দেশে আসছে সেগুলোর বিপরীতে প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু পরোক্ষ রেমিট্যান্সে এখন পর্যন্ত কোনো প্রণোদনা দেয়া হয়নি। রেমিট্যান্স দেশে এলে তা কোন খাতে কিভাবে এসেছে সে বিষয়ে একটি বিবরণী ব্যাংকগুলো থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হয়। তার আলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ রেমিট্যান্স শনাক্ত করে। এখন পর্যন্ত যেসব পরোক্ষ রেমিট্যান্স শনাক্ত করা হয়েছে সেগুলোর বিপরীতে প্রণোদনার অর্থ ছাড় করা হয়নি।
সূত্র আরো জানায়, অর্থ মন্ত্রণালয়ে দেয়া চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, বিদ্যমান নীতিমালায় পরোক্ষ রেমিট্যান্সের বিপরীতে প্রণোদনা পাওয়ার সুযোগ নেই। বৈদেশিক খাতে লেনদেনের যে কোড লিস্ট আছে তাতে ওসব বিষয় রেমিট্যান্স খাতের সেকেন্ডারি ইনকাম হিসাবে বিবেচিত। কাজেই সেগুলো রেমিট্যান্স হিসাবে বিবেচিত হয় না। ওসব খাতে প্রণোদনার অর্থ দেওয়া হবে কিনা এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হয়েছে। রেমিট্যান্সের বিপরীতে সরকারিভাবে ২ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। তবে অগ্রণী ব্যাংক নিজস্ব তহবিল থেকে আরো ১ শতাংশ বেশি অর্থাৎ ৩ শতাংশ দিচ্ছে।
এদিকে রেমিট্যান্সের গতিবিধি পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১২-১৩ অর্থবছরে বেড়েছিল সাড়ে ১২ শতাংশ। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তা ১ দশমিক ৬১ শতাংশ কমে যায়। আবার ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সাড়ে ৭ শতাংশ বাড়ে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা আবার আড়াই শতাংশ কমে যায়। আর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা সাড়ে ১৪ শতাংশ কমে যায়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আবার প্রায় সাড়ে ১৭ শতাংশ বাড়ে। কিন্তু পরের বছর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি কমে ৯ দশমিক ৬০ শতাংশে দাঁড়ায়। এমন পরিস্থিতিতে রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রবৃদ্ধি বাড়াতে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে ২ শতাংশ প্রণোদনার ঘোষণা দেয়া হয়। তার আলোকে ২০১৯ সালের ৬ আগস্ট কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নীতিমালা জারি করা হয়। আর প্রণোদনার পর রেমিট্যান্স প্রবাহে প্রবৃদ্ধি বেড়ে প্রায় ১১ শতাংশে দাঁড়ায়। গত অর্থবছরে ওই খাতে প্রবৃদ্ধির হার আরো বেড়ে ২৬ দশমিক ১০ শতাংশে দাঁড়ায়। কিন্তু চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে নভেম্বর পর্যন্ত রেমিট্যান্স প্রবাহে নিম্নগতি চলছে।