ঠিকাদারের গাফিলতিতে নির্ধারিত সময়ে ভবণ নির্মাণ না হওয়ায় চরম দুর্ভোগের শিকার সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার খালিয়া সরকারি প্রাইমারি স্কুলের ১১০ শিক্ষার্থী। ইতোমধ্যে নির্ধারিত সময়ের ৬ মাস পেরিয়ে গেছে। অথচ ভবণ নির্মাণের ৮০ভাগ কাজ বাকী।
জানা যায়, বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করার পরে ২০১৯ সালে বিদ্যালয়টির অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য নতুন একটি ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। এজন্য বিদ্যমান ভবনটি অপসারণ করে শুরু হয় নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ। নির্মাণকালীন সময় বিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর জন্য টিনের ছাউনি দিয়ে তৈরী করা হয় একটি অস্থায়ী শ্রেণি কক্ষ। তবে বর্ষায় ও শীতের দিনে চরম সংকটে ক্লাস করছে বিদ্যালয়টির শিশু শিক্ষার্থীরা। বর্ষার সময় টিনের শব্দ ও শীতের সময় ফ্লোর ঠান্ডা থাকায় নিয়মিত ক্লাস করতে অসুবিধায় পড়ে যান তারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, করোনাকালিন স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাঠদান করানোর কথা থাকলেও ভবন না থাকার কারণে বিদ্যালয়টিতে অস্থায়ী টিনের তৈরী শ্রেণিকক্ষে দুই শিফটে গাদাগাদি করে পাঠদান করানো হচ্ছে ১১০জন শিক্ষার্থীকে। এতে শিক্ষার মান মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এ বিষয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষসহ স্থানীয়রা আশাশুনি উপজেলা প্রকৌশলী আক্তার হোসেনসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও এখনও পর্যন্ত বিদ্যালয়টির কাজ শুরু না হওয়ায় হতাশা বিরাজ করছে। সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর ৭৪ লক্ষ ৪৬ হাজার ৮৬৫ টাকা ব্যয়ে খালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন তৈরীর দায়িত্ব পায় শ্যামনগরের শেখ এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী মুকুল হোসেন এবং নির্মাণাধীন ভবনের কাজ চলতি বছর ৩ জুন শেষ হওয়ার কথা থাকলেও আশাশুনি উপজেলা প্রকৌশলী আক্তার হোসেন ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স শেখ এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী মুকুল হোসেনের গাফিলতির কারণে এখনো পর্যন্ত ভবন নির্মাণের ৫ভাগ কাজও শেষ হয়নি।
দীর্ঘদিন যাবত বিদ্যালয়টির ভবনের নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকায় ভবন নির্মাণের সামগ্রী যত্রতত্রভাবে পড়ে আছে। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে পিলিয়ার নির্মাণের জন্য গর্ত খোড়া থাকলেও পিলিয়ারে ব্যবহৃত রডসহ পড়ে থাকা নির্মাণ সামগ্রী বৃষ্টিতে ভিজে মরিচা ধরে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। পাশাপাশি বিদ্যালয়টির প্রাঙ্গণসহ যাতায়াতের রাস্তায় যত্রতত্র রাখা নির্মাণ সামগ্রীর জন্য নিত্যসময় ছোটবড় দুর্ঘটনায় আহত হচ্ছে বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় পথচারীরা। এ সময় বিদ্যালয়টি অধ্যায়ণরত শিক্ষার্থীরা জানান, করোনার কারণে স্কুল ছুটি থাকায় আমরা বহুদিন ক্লাস করতে পারিনি। আবার স্কুল খুললেও আমরা নিয়মিত ক্লাস করতে পারছিনা। কারণ হিসেবে তারা বলেন, বিদ্যালয়ে কোন ভবন না থাকায় আমাদের টিনের তৈরী শ্রেণিকক্ষে ক্লাস করতে হচ্ছে। যখন বর্ষার পানি পড়ে তখন টিনের শব্দে আমরা ক্লাস করতে পারিনা। আর শ্রেণি কক্ষের জানালা দিয়ে ছিটকে আসা পানিতে আমরাসহ আমাদের বইখাতা ভিজে যায়। তাছাড়া শীতের দিনে ফ্লোর ঠান্ডা থাকে। আমরা বেশিক্ষণ ফ্লোরে বসে ক্লাস করতে পারিনা। এতকরে শারিরীকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে জানান শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে বিদ্যালয়টির এমএমসি সভাপতি আবদুর রহমান ও প্রধান শিক্ষক মেহেদী হাসান বলেন, চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে খালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। তবে ৪-৫ ভাগ কাজ করে যাওয়ার পরে ঠিকাদার চলে যান।
পরবর্তীতে ঠিকাদার পুনরায় কাজ শুরু করেন। নামমাত্র কাজ ও কিছু মালামাল রেখে আবারও চলে যান। তবে এসংক্রান্ত বিষয়ে একাধিকবার উপজেলা প্রকৌশলীসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারের সাথে যোগাযোগ করলেও তারা আমাদের কথায় কোন ভ্রুক্ষেপ করছেন না। বর্তমানে শিশুদের টিন দিয়ে তৈরী অস্থায়ী শ্রেণিকক্ষে দুই শিফটে গাদাগাদি করে পাঠদান দেওয়া হচ্ছে। এতেকরে বিদ্যালয়টিতে অধ্যায়ণরত শিক্ষার্থীসহ শিক্ষকরা করোনার ঝূঁকিতে রয়েছেন বলে জানান তারা।
এবিষয়ে শেখ এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী মুকুল হোসেন বলেন, আমরা বিভিন্ন সাইটে কাজ করি। সেখানের বিল আটকে আছে। একারণে ওই বিদ্যালয়টির নির্মাণ কাজ শেষ করতে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।
এবিষয়ে আশাশুনি উপজেলা প্রকৌশলী আক্তার হোসেন বলেন, আমরা ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে একটু চিন্তিত রয়েছি। আমরা একাধিকবার দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারকে তলব করেছি। তবে ঠিকাদার কাজ করতে বিভিন্ন তালবাহানা করতে থাকে। তবে প্রতিষ্ঠানটি নির্মাণে নিজের গাফিলতির কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, আমরা আমাদের দিক থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। তবে ঠিকাদার বর্তমানে আমাদের ফোন কলও রিসিভ করা বন্ধ করে দিয়েছে। একারণে আমরা বিপাকে পড়েছি।
এবিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিপিইও) মোহাম্মদ রুহুল আমীন বলেন, বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্তকর্তা বরাবর ঠিকাদারের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় ঠিকাদার যেন দ্রুত সময়ের ভিতরে ভবন নির্মাণ শেষ করে পরিত্যক্ত মালামাল সরিয়ে নেয় সেকারণে গত ৮ ডিসেস্বর নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর এক স্বারক পত্র (স্বারক নং: ৩৮.০১.৮৭০০.০০০.৩৫.০০১.২০২১-২৬) পাঠানো হয়েছে। আর অনুলিপি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক কার্যালয়সহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
এবিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ন কবীর বলেন, বিদ্যালয়টির বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমাকে অবহিত করেছেন। বিদ্যালয়টির নিমার্ণ শেষ করতে যদি ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ গাফিলতি করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ঠিকাদার যাতে দ্রুত সময়ের ভিতরে খালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজ শেষ করে সেজন্য তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান।