এটি কারও অজানা নয় যে, দেশে ইয়াবা-আইসসহ ভয়ংকর সব মাদক প্রবেশের মূল পথ হলো মিয়ানমার সীমান্ত। চোরাচালান হয়ে আসছে অত্যাধুনিক অস্ত্র। আর এসব চোরাচালানের সঙ্গে প্রধানত জড়িত রোহিঙ্গারা। তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে দেশের কিছু চোরাকারবারি। গড়ে উঠেছে অনেক সিন্ডিকেট। চোরাচালানের পাশাপাশি গুম, খুন, ধর্ষণ, অপহরণÑআরো অনেক অপরাধেই জড়িয়ে পড়ছে রোহিঙ্গারা। এতদিন তাদের এসব অপরাধ কর্মকা- ছিল প্রধানত রোহিঙ্গা শিবির ও আশপাশের এলাকায়। এখন তা ছড়িয়ে পড়ছে আরো বড় পরিসরে, এমনকি বৃহত্তর চট্টগ্রামজুড়ে। সম্প্রতি কক্সবাজারের চার স্কুল শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছিল সংঘবদ্ধ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা।
জানা যায়, টেকনাফ থেকে অনেক দূরে রামু উপজেলার খুনিয়াপালং ইউনিয়নের পেঁচারদ্বীপ মাঙ্গালাপাড়ার মেরিন ড্রাইভ এলাকা থেকে ওই শিক্ষার্থীদের নিয়ে যাওয়া হয়। একদিন পর র্যাব ও এপিবিএনের সদস্যরা তিন শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করতে সক্ষম হন এবং বাকি একজনকে উদ্ধারের জন্য অভিযান অব্যাহত রাখেন। এর কয়েক দিন আগে সশস্ত্র রোহিঙ্গারা টেকনাফের সেন্ট মার্টিন নৌঘাট এলাকা থেকে প্রকাশ্যে এক পর্যটন ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।
প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, গত চার বছরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে দলবদ্ধ হামলার ঘটনায় ২৩২ জন প্রাণ হারিয়েছেন। চার বছরে কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ১২ ধরনের অপরাধে এক হাজার ২৯৮টি মামলা হয়েছে। শুধু চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসেই খুনের মামলা হয়েছে ৭১টি। চার বছরে মাদকসংক্রান্ত মামলা হয়েছে ৭৬২টি, মানবপাচারের ২৮টি, অস্ত্র মামলা ৮৭টি, ধর্ষণ ৬৫টি, অপহরণ ৩৪টি এবং ডাকাতির মামলা রয়েছে ১০টি। ধারণা করা হয়, তাদের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের আন্তর্জাতিক অপরাধী গোষ্ঠীরও যোগাযোগ রয়েছে। সম্প্রতি ব্রাসেলসভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপও (আইসিজি) এমন পূর্বাভাসই দিয়েছে। তা সত্ত্বেও রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী ও অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না বলেই মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া বেশির ভাগ রোহিঙ্গা মিয়ানমারে নিজেদের বাড়িঘরে ফিরে যাওয়ার পক্ষপাতী হলেও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো তাদের বাধা দিচ্ছে, ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। সম্প্রতি ফিরে যেতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের নেতা মুহিবুল্লাকে তারা হত্যা করেছে। হত্যা করেছে একটি মাদরাসার তিন শিক্ষক ও এক শিক্ষার্থীকে। জাতিসংঘও এমন হামলায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির জন্য দেশি-বিদেশি অনেক ষড়যন্ত্র কাজ করছে। সুযোগ পেলে তারা যে এই রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করবে না সেই নিশ্চয়তা কোথায়? তাই রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে সরকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো জোরদার করবে, এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তায় দ্রুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করবে এটাই প্রত্যাশা।