বাঙ্গালী বড় উৎসব প্রিয় জাতি। বাঙ্গালি সংস্কৃতিতে বারো মাসে তের পার্বণের আনন্দ উৎসব আছে। আবার রাজনৈতিক অধিকার, প্রতিষ্ঠায় আন্দোলনে সংগ্রামে সারা বছরই রয়েছে নানা স্মরণীয় দিবস। বছরের প্রথম জানুয়ারি মাস গন-অভ্যুত্থান সৃষ্টির মাস। ১৯৬৯ সালে জানুয়ারি মাসের আন্দোলন সংগ্রামের দিনগুলোতে আমরা ফিরে যাই। ফ্রেবুয়ারী মাস ভাষার মাস, পুরো মাস জুড়েই ভাষা আন্দোলনে শহীদের স্মরণে আমরা ব্যস্ত থাকি। স্বাধীনতার মাস মার্চ। ১৯৭১ এ আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলন সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধে রূপান্তর হয়েছে। আগস্ট জুড়ে আমরা শোকের সাগরে নিমজ্জিত থাকি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের শাহাদাৎ দিবসকে ঘিরে মানবতার চরম অবমাননার কথা ভাবি। ১৬ ডিসেম্বর আমাদের বিজয় দিবস। এ দিন হানাদার পাকিস্তানী বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। আমরা বিজয় পতাকা ওড়াই। বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে নতুন একটি দেশের অভ্যুদয় হয়।
বিজয় দিবসের দু’দিন আগে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করে বাংলাদেশের জনগণ। বিজয়ের আনন্দ উদযাপনের আগে বিষাদে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ করি সশ্রদ্ধ চিত্তে। আজ আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করছি। মুক্তিযুদ্ধে শহীদ, সম্ভ্রম-হারানো মা-বোন ও পঙ্গুত্ববরনকারী মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ করতে গিয়ে আমাদের প্রত্যাশা প্রাপ্তির হিসেবের সমীকরণ মেলে না। মহাকালের হিসেবে হয়তো ৫০ বছর কোনো সময় নয়। কিন্তু জীবন-যুদ্ধে ৫০ বছর অনেক বড় একটা সময়। যে ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত গণতান্ত্রিক দেশের স্বপ্ন সেসময় দেখে দেশের মানুষ আগ পিছ না ভেবে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তা পুরোপুরি না হলেও আংশিক পূর্ণ হয়েছে বলা যায়। কারণ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ পুরো বিশে^ উন্নয়নের রোল-মডেল বাংলাদেশ। তাছাড়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে শেখ হাসিনা সরকার বদ্ধ পরিকর।
স্বাধীনতা সংগ্রামের বাঁকে বাঁকে এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় এদেশের বুদ্ধিজীবীরা যে ভাবে আন্দোলনের ভাষা ও করণীয় ক্রিয়াকৌশল দেখিয়েছেন, দু:খ জনক হলেও সত্য এখনকার বুদ্ধিজীবীরা রাজনৈতিকভাবে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে তা করতে পারেন না। দেশ ও জাতির ক্রান্তিকালের চেয়ে তাদের কাছে দলীয় ও সরকারি পদ-পদবী অনেক বেশি আকর্ষণীয়। তাই আজ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কোনো বিকল্প নাই। বাঙালির বীর-গাথা আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরে তাদের মাঝে দেশপ্রেম জাগ্রত করা খুবই জরুরী। রণাঙ্গনের অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধা ইতোমধ্যে পরলোকগমন করেছেন। যারা বেঁচে আছেন, তারাও বার্ধক্য নানা রোগে আক্রান্ত। তাই তাদের রণাঙ্গনের গল্প, স্বাধীনতা সংগ্রামের শ্লোগান মিছিলের কথা তাদের বিবৃত করতে হবে। যদিও স্বাধীনতার এত বছর পর যে যার রাজনৈতিক দৃষ্টি ভঙ্গিতে ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করবেন, তারপরও নতুন প্রজন্মই মুক্তিযুদ্ধের অর্থনৈতিক মুক্তি আনবে- এটা আমাদের বিশ্বাস। তাই মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সৌধ সহ নানা সৌধে শিশুদের নিয়ে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তাদের মধ্যে জাগাতে হবে। বলতে হবে বাঙ্গালির বিরত্বগাথা। তবেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করতে শিখবে আগামী প্রজন্ম।